শ্রেয়স আয়ার। — ফাইল চিত্র।
তিন বছর আগে ২০২১ সালে তাঁকেই তুলে ধরা হয়েছিল দলের দীর্ঘমেয়াদী নেতা হিসাবে। দীনেশ কার্তিক, অইন মর্গ্যানরা ট্রফি দিতে না পারায় তরুণ রক্তের দিকে ঝুঁকেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিলামে ১২.২৫ কোটি টাকায় দিল্লি থেকে কেনা হয়েছিল শ্রেয়স আয়ারকে। সেই শ্রেয়সকে নিয়ে তিন বছরেই মোহভঙ্গ হল কেকেআরের? তিন বছর, নাকি দুই? কারণ মাঝে এক বছর চোটের কারণে খেলতেই পারেননি শ্রেয়স। যে দলে খেলে নিজের সোনালি সময় কাটাতে পারতেন শ্রেয়স, সেই দলই তিনি ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর দেখা গেল, শ্রেয়সকে রাখল না কেকেআর।
এ বার নিলামের আগে মোট ছ’জন ক্রিকেটারকে ধরে রেখেছে কেকেআর। সবচেয়ে বেশি ১৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে রিঙ্কু সিংহকে। বরুণ চক্রবর্তী, সুনীল নারাইন ও আন্দ্রে রাসেলকে দেওয়া হয়েছে ১২ কোটি টাকা করে। দু’জন ঘরোয়া ক্রিকেটারকে ধরে রেখেছে কলকাতা। হর্ষিত রানা ও রমনদীপ সিংহ। দু’জনকেই ৪ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ছ’জনকে ধরে রাখতে ৫৭ কোটি টাকা খরচ করেছে কেকেআর।
আগের বারই যিনি নেতা হিসাবে দলকে আইপিএল জিতিয়েছেন তাঁকে ছেঁটে ফেলার ইতিহাস সাম্প্রতিক অতীতে নেই। কেকেআরকে নিতে হয়েছে সেই সাহসী সিদ্ধান্তই। তবে নিজেদের ইচ্ছায় নয়, বরং শ্রেয়সের মদতে। কেকেআর যতটা না রাখতে চায়নি শ্রেয়সকে, তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রেয়স থাকতে চাননি কেকেআরে। দলকে আইপিএল জিতিয়ে তিনি আকাশচুম্বী দাম চেয়ে বসেছিলেন দলের কাছে। ধরে রাখতে গেলে তাঁকে বিরাট অর্থ দিতে হবে, এমন দাবি ছিল। সেই দাবি মানেনি কেকেআর। বিস্তর দরকষাকষির পর ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বিচ্ছেদ হল।
এমনটা ভাবা যায়নি কিছু দিন আগেও। বছর তিনেক আগে আইপিএলের মহা নিলামের আগে এ রকমই এক ‘রিটেনশন’-এর দিন ছিল। সে দিন বাকি দলগুলির সঙ্গে লড়ে শ্রেয়সকে ছিনিয়ে নিয়েছিল কেকেআর। বেঙ্কি মাইসোরদের মুখে ছিল যুদ্ধজয়ের হাসি। নিলামের দিন আসার আগে থেকেই ইতিউতি জল্পনা শোনা যাচ্ছিল যে শ্রেয়সের জন্য ‘অলআউট ঝাঁপাবে কেকেআর। কারণ তারা অধিনায়ক খুঁজছিল। শ্রেয়সও চাইছিলেন এমন দলে যেতে যেখানে তাঁকে অধিনায়ক করা হবে। দুয়ে দুয়ে চার হয় সহজেই।
প্রথম বছর শ্রেয়স খুব একটা সাফল্য পাননি। সপ্তম স্থানে শেষ করায় কেকেআর প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। দ্বিতীয় বছর চোটের কারণে শ্রেয়স খেলতে না পারায় অধিনায়ক হন নীতীশ রানা। সে বছরও কেকেআর সপ্তম স্থানে শেষ করে। তবে এ বছরের আইপিএলে গৌতম গম্ভীরের মস্তিষ্ক এবং শ্রেয়সের কৌশল ট্রফি দেয় কেকেআরকে। গম্ভীর চলে যাওয়ায় শ্রেয়সও সে ভাবে কারও সমর্থন পাননি।
শ্রেয়স-কেকেআর বিচ্ছেদের পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। প্রথমত, নির্বাচকদের কথা না শোনার ফলে শ্রেয়স বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন। জাতীয় দলেও এখন তিনি ব্রাত্য। কিন্তু স্বভাব বদলাতে রাজি নন মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। তাঁর ধারণা, আইপিএল অন্য রকমের খেলা। সেখানে তাঁর এখনও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে কেকেআর তাঁকে যে দামে ধরে রাখতে চাইছে তাঁর থেকে বেশি দাম পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে তাঁর। যদিও আইপিএলে গত তিন বছরের পারফরম্যান্স শ্রেয়সের স্বপক্ষে কথা বলছে না।
দ্বিতীয়ত, আধুনিক সময়ে কোনও তারকা ক্রিকেটারের মধ্যে একদলীয় মানসিকতা নেই। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলিরা যে ভাবে বছরের পর বছর একই দলের হয়ে খেলে গিয়েছেন, এখনকার ক্রিকেটারেরা সেটা চাইছেন না। তাঁরা চাইছেন তিন বছর অন্তর নিলামের টেবিলে উঠে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বুঝে নিতে। শ্রেয়সও তাই নিলামের টেবিলে উঠে নিজেকে পরখ করে নিতে চান। এতে দু’রকম ফলাফলই হতে পারে। শ্রেয়স তাঁর প্রত্যাশা অনুযায়ী বেশি দাম পেতে পারেন। আবার দলগুলি তাঁকে নিয়ে আগ্রহ হারাতেও পারে। নিলামের সমীকরণ কেমন হবে তা কেউই পূর্বানুমান করতে পারেন না। ফলে শ্রেয়সের ভাগ্য যে সুতোয় ঝুলছে তা বলা যেতেই পারে।
শ্রেয়স চলে যাওয়ায় কেকেআরের সমস্যা বলতে একটাই। আবার নতুন অধিনায়ক খুঁজতে হবে। যাঁদের রেখে দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে অধিনায়ক হওয়ার যোগ্যতা একমাত্র সুনীল নারাইনের রয়েছে। তিনি মেজর লিগ ক্রিকেট নাইট রাইডার্সের মালিকানাধীন লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক। তবে আইপিএল বাকি সব লিগের তুলনায় আলাদা। এখানে তাঁকে নিয়ে ঝুঁকির পথে হয়তো যাবে না কেকেআর। তা ছাড়া নারাইনের বয়স এখন ৩৬। দীর্ঘমেয়াদী ভাবনায় কোনও ভাবেই তিনি আসবেন না। মাঝের সময়টায় বড় কিছু না হলে তিন বছর পর আবার একটি মহা নিলামে নতুন অধিনায়ক খোঁজার পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে কেকেআরকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy