কলকাতা নাইট রাইডার্স ছাড়ার পরেই বদলে গিয়েছে অনেক ক্রিকেটারের ভাগ্য। —ফাইল চিত্র
ভারতের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই ৪ উইকেট। শিবম মাভির স্বপ্নের দৌড়টা শুরু হল মঙ্গলবার। আগামী দিনে তিনি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবেন কি না তা এখনই বলা কঠিন। কিন্তু এটা অবশ্যই বলা যায় যে, মাভির ভাল সময় শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে ছিলেন মাভি। এই বারের নিলামে তাঁকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেয় গুজরাত টাইটান্স। তার পরেই ভারতীয় দলে সুযোগ চলে এল তরুণ বোলারের কাছে। ৪টি উইকেটও তুলে নিলেন তিনি।
নাইট রাইডার্স ছাড়তেই মাভির ভাগ্য পরিবর্তন। সেটা হয়তো একেবারেই কাকতালীয়। কিন্তু একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গেই এমন ঘটেছে। যে তালিকায় ক্রিস গেল, সূর্যকুমার যাদব, দীনেশ কার্তিকদের মতো ব্যাটারদের নাম যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট, জয়দেব উনাদকাটদের মতো বোলাররাও। ২০০৯ সালে ক্রিস গেলকে নিয়েছিল কেকেআর। দু’বছর কলকাতার হয়ে খেলেছিলেন তিনি। প্রথম বছরে ৭ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১৭১ রান, দ্বিতীয় বছর ৯ ম্যাচে ২৯২ রান। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে নিয়ে খুশি হতে পারেনি কেকেআর। ২০১১ সালের নিলামে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে কিনে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। তাতেই পাল্টে গেলেন গেল। ১২টি ম্যাচ খেলে করলেন ৬০৮ রান। দু’টি শতরানও এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। ওই বছরের পর থেকেই আইপিএলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হয়ে গেলেন গেল।
কলকাতা ছাড়ার পর ক্রিকেট কেরিয়ার বদলে যাওয়ার তালিকায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নাম বোধ হয় সূর্যকুমার যাদব। তিনি এক সময় কেকেআরের সহ-অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু সেই সময় ভারতীয় দলে তাঁর ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে বললে কেউ বিশ্বাস করত না। এখন আইসিসির বিচারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক নম্বর ব্যাটার সূর্য। ২০১২ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু সে বার মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। কোনও রানই করেননি সে বার। ২০১৪ সালে নাইট রাইডার্স কিনে নেয় সূর্যকে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত কেকেআরের হয়ে খেলেন তিনি। এই চার বছরে ৫৪টি ম্যাচ খেলেছিলেন সূর্যকুমার। একটি মাত্র অর্ধশতরান-সহ তাঁর সংগ্রহ ৬০৮ রান। গড় ২৩.৪৩। ২০১৮ সালে তাঁকে ছেড়ে দেয় কলকাতা। সূর্য আবার ফিরে যান মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। পাল্টে যায় সূর্যর খেলা। শুধু সেই বছর ১৪টি ম্যাচে সূর্য করেন ৫১২ রান। চারটি অর্ধশতরান করেন সূর্য। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক বছর আসে সূর্য আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ভারতীয় দলেও সুযোগ পান। এখন ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক তিনি।
২০১৭ সালে ৫ কোটি টাকা দিয়ে ট্রেন্ট বোল্টকে কিনেছিল কলকাতা। নিউ জ়িল্যান্ডের পেসারকে নিলেও খেলাতে পারছিল না তারা। সেই বছর ৬ ম্যাচে তিনি নেন ৫ উইকেট। পরের বছরই তাঁকে ছেড়ে দেয় কলকাতা। দিল্লি ক্যাপিটালস কিনে নেয় বোল্টকে। বাঁহাতি পেসার সে বার ১৪ ম্যাচে ১৮টি উইকেট তুলে নেন। ২০২০ সালে তাঁকে কেনে মুম্বই। ১৫ ম্যাচে বোল্ট নেন ২৫টি উইকেট। আইপিএলও জেতে মুম্বই।
একই রকম ভাগ্য ঘুরে গিয়েছিল জয়দেব উনাদকাটের। ২০১০ সালে আইপিএলে কলকাতা নিয়েছিল তাঁকে। তিন বছরে ১১টি ম্যাচ খেলে ১০ উইকেট নেন উনাদকাট। ২০১৩ সালে আরসিবি কিনে নেয় ভারতের বাঁহাতি পেসারকে। শুধু সেই বছর ১৩ ম্যাচে ১৩টি উইকেট নেন উনাদকাট। ২০১৬ সালে আবার কলকাতা দলে ফেরানো হয় তাঁকে। সেই বছর একটি মাত্র ম্যাচ খেলানো হয়েছিল উনাদকাটকে। বসিয়েই রাখা হয়েছিল তাঁকে। পরের বছরেই ছেড়ে দেওয়া হয় উনাদকাটকে। রাইজ়িং পুনে সুপারজায়ান্ট কিনে নিয়েছিল তাঁকে। সে বছর ১২ ম্যাচে ২৪টি উইকেট নেন উনাদকাট।
জেসন হোল্ডার, কুলদীপ যাদবও কলকাতা ছাড়ার পর ভাল খেলতে শুরু করেন। কলকাতার প্রাক্তন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের ভাগ্য বদলও অবাক করে দেওয়ার মতো। কলকাতা ছেড়ে আরসিবিতে গিয়ে ফিনিশার হিসাবে নিজেকে মেলে ধরেন কার্তিক। জায়গা করেন নেন ভারতীয় দলে। কেরিয়ারের শেষ পর্বে এসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেন কার্তিক। যা সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো। তালিকায় যুক্ত হল মাভির নাম। কলকাতা ছাড়ার পর যাঁর ভাগ্যের অন্ধকার কেটে গিয়েছে।
হতে পারে এই সব ঘটনাই কাকতালীয়। কারণ কলকাতায় খেলতে এসে ভাল খেলার উদাহরণও রয়েছে। শ্রেয়স আয়ার এই বছর দারুণ ছন্দে রয়েছেন। কলকাতার অধিনায়ক এখন তিনিই। ভারতের হয়ে এই বছর ৪০টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ১৬০৯ রান। ভারতীয়দের মধ্যে এই বছর সব থেকে বেশি রান তাঁর। উমেশ যাদব কলকাতার হয়ে ভাল খেলার পর ভারতীয় দলের সাদা বলের খেলায় ফিরে এসেছিলেন। এমন অনেক পাল্টা উদাহরণও রয়েছে। তবে মাভিদের ভাগ্যের অন্ধকার কেটেছে নাইট ছাড়ার পরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy