Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Ranji Trophy

Prashant Rana : কল মিস্ত্রি থেকে রঞ্জি দলে, বলের গতিই স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার এই ক্রিকেটারের

শুরু করেন কল মিস্ত্রির কাজ। যেদিন কাজ, সেদিন টাকা। সারাদিন কাজ করলে ২০০ টাকা, অর্ধেক দিন করলে ১০০ টাকা। ক্রিকেটের জন্য দ্বিতীয়টা বেছে নেন।

প্রশান্ত রানা।

প্রশান্ত রানা। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১২:৫০
Share: Save:

সহজ ছিল না লড়াই। কঠিন ছিল স্বপ্নপূরণও। হাল ছাড়েননি তবু। হার না মানা সেই মানসিকতাই দরজা খুলে দিয়েছে ওড়িশা রঞ্জি দলের।

দৃঢ়তা এবং সংকল্পকে সঙ্গী করে কলের মিস্ত্রি থেকে ফাস্ট বোলার হয়েছেন প্রশান্ত রানা। ওড়িশার প্রত্যন্ত গ্রাম নয়াগড় থেকে শুরু লড়াই। অসম্ভব বলে কিছু নেই প্রশান্তর সংবিধানে। ক্রিকেট চালিয়ে যেতে মাঠের বাইরেও কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। যোগ্যতা প্রমাণ করে ডাক পেয়েছেন ওড়িশার রঞ্জি দলে।

ওড়িশার প্রথম খেলা আমদাবাদে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। প্রথম একাদশে সুযোগ পাবেন কি না নিশ্চিত নয়। সুযোগ পেলে হতাশ করবেন না, আত্মবিশ্বাসী প্রশান্ত। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে কলের মিস্ত্রির কাজ করতে হয়েছে দীর্ঘ দিন। সারা দিন কাজের পর বিকেলে বা সন্ধ্যায় সুযোগ হত অনুশীলনের। শুরু হত স্বপ্নপূরণের লড়াই।

রূপকথা নয়, কঠিন বাস্তব। দরিদ্র প্রান্তিক পরিবারে জন্ম। প্রশান্তর বাবা সনাতন রানা দরিদ্র কৃষক। সংসারের অভাব ঢাকতে গ্রামের শিব মন্দিরে পুরোহিতের কাজ করতেন। প্রশান্তর দাদা গ্রামের বাজারে সবজি বিক্রি করতেন। সে পথে যাননি প্রশান্ত। ছোট থেকে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু ক্রিকেটের টানে মাঝ পথেই ছেড়ে দেন কলেজ। চলে আসেন ভুবনেশ্বর। প্রশান্তর সেই সিদ্ধান্তে সম্মতি ছিল বাবা এবং দাদার। তাঁরাও সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন।

প্রথম চার মাস বাড়ি থেকে দু’হাজার টাকা করে পাঠাত প্রশান্তকে। তার পর জীবন আরও কঠিন হয় তাঁর। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রশান্তর বাবা। বাড়ি থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। প্রশান্তকে গ্রামে ফিরে যেতে বলেন তাঁর বাবা, দাদারা। বলেন সেনা, বিএসএফ বা সিআরপিএফ-এ চাকরির জন্য চেষ্টা করতে। তীব্র আর্থিক সঙ্কটে তখন তাঁরা কার্যত দিশেহারা। অন্য রকম ভেবেছিলেন প্রশান্ত। চাকরির খোঁজ শুরু করেন। ২০১২ সালে একটি বেসরকারি সংস্থায় ফায়ার সেফটি অফিসারের কাজ পান। মাসে বেতন পেতেন ১৪ হাজার টাকা। ভালই চলছিল। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করার পর ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিল না।

আর্থিক সচ্ছলতা, না ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন? প্রশান্ত আঁকড়ে ধরেন ছেলেবেলার স্বপ্নকেই। শুরু করেন কল মিস্ত্রির কাজ। যেদিন কাজ, সেদিন টাকা। সারা দিন কাজ করলে ২০০ টাকা, অর্ধেক দিন করলে ১০০ টাকা। দ্বিতীয়টা বেছে নেন প্রশান্ত। দুপুর একটা পর্যন্ত কাজ করার পর ৩৫-৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে দুপুর ৩টের মধ্যে পৌঁছে যেতেন কটক। সেখানকার ইউনিয়ন স্পোর্টিং ক্লাবে ক্রিকেট কোচ প্রদীপ চৌহানের কাছে শুরু হত ক্রিকেট অনুশীলন।

ওড়িশার রঞ্জি দলে সুযোগ পাওয়ার পর প্রিয় ছাত্র সম্পর্কে প্রদীপ বলেছেন, ‘‘প্রশান্তর সুবিধা ছিল ওর উচ্চতা। ফাস্ট বল করতে পারত। পুরনো বলেও ভাল বাউন্স পেত। কঠোর পরিশ্রম করত। হাতে ভাল সুইং এবং গতি ছিল।’’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘এমন কাউকে মনে করতে পারছি না, যে অনূর্ধ্ব ১৯ বা ২৩ রাজ্য দলে না খেলেই সিনিয়র দলে সুযোগ পেয়েছে। এখানেই ওর বিশেষত্ব। আমি নিশ্চিত অনেক দূর যাবে প্রশান্ত।’’

প্রশান্তর স্বপ্ন বাইশ গজে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। বলের গতিতে ভর করেই পৌঁছে যেতে চান ভারতীয় দলের সাজঘরে। পথে বাধা হয়ে যে ব্যাটারই আসুক, তাঁর উইকেট তুলে নিতে চান আত্মবিশ্বাসী প্রশান্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

Ranji Trophy Prashant Rana Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy