গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। —ফাইল চিত্র।
পিঠে ব্যথা। ডান পায়ে টান। বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে যন্ত্রণা। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নেমে মাঠে শুয়েই পড়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। একটা সময় মনে হয়েছিল, তিনি আর খেলতেই পারবেন না। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও পরিস্থিতি বুঝে অ্যাডাম জ়াম্পাকে তৈরি হওয়ার নির্দেশ পাঠান। কিন্তু মাঠ ছাড়তে হয়নি ম্যাক্সওয়েলকে।
অসি অলরাউন্ডারের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে পারার কৃতিত্ব এক জনের। তাঁর নাম নিক জোন্স। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলে ফিজিয়ো। ম্যাক্সওয়েল মাঠে পড়ে যেতেই ছুটে এসেছিলেন জোন্স। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে নিজের মতো চেষ্টা করেন তিনি। ম্যাক্সওয়েলের শরীরে পেশিগুলিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন নানা ভাবে। একই সঙ্গে সমানে অসি অলরাউন্ডারকে সাহস দিয়ে গিয়েছেন। সমানে বুঝিয়ে ছিলেন, কোনও ভাবেই ম্যাক্সওয়েলের মাঠ ছাড়া ঠিক হবে না। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর আর কেউ নেই। ম্যাক্সওয়েলকে নিশ্চিন্তে খেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁর কোনও বড় ক্ষতি হবে না। মূলত জোন্সের জন্যই একাধিক যন্ত্রণা উপেক্ষা করে ২২ গজে থেকে গিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল।
মাঠে নেমে কী করেছিলেন জোন্স? অস্ট্রেলিয়া দলের ফিজিয়ো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে বলেছেন, ‘‘আমরা সে সময় একটা প্রায় হেরে যাওয়া লড়াই লড়ছিলাম। এই রকম ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। অনেক খেলোয়াড়ের এ রকম হয়। একেক জনের সমস্যা একেক রকম। অতিরিক্ত দৌড়লে পেশিতে এ রকম টান ধরে। ধারাবাহিক ভাবে দ্রুতগতিতে দৌড়লেও হয়। এমন ক্ষেত্রে সাধারণত যা করি সেটাই করেছি। বাড়তি কিছু চেষ্টা করিনি। ম্যাক্সওয়েলকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। আর সব কিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। যেমন ম্যাক্সওয়েলের হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। শরীরে পেশিগুলো যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। ওকে বলেছিলাম, ‘তুমি যদিও এই অবস্থাতেও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা কর, তা হলে উঠতে পারবে।’’’
জোন্স মেনে নিয়েছেন পরিস্থিতি বেশ কঠিন ছিল। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথমে ম্যাক্সওয়েলকে দেখে মনে হচ্ছিল, কেউ গুলি করে দিয়েছে। মৃত মানুষের মতো পড়ে ছিল মাটিতে। দু’পা-সহ শরীরের একাধিক জায়গায় টান ধরছিল ওর। এক সঙ্গে চার-পাঁচটা পেশিতে টান ধরলে পরিস্থিতি বেশ কঠিন হয়। ম্যাক্সওয়েলকে কয়েকটা স্ট্রেচ করানোর চেষ্টা করতে ও বলেছিল, ‘যা করা সম্ভব ছিল করেছি। আর কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে চাই।’ তখন ওকে বলেছিলাম, ঠিক আছে। আমাকে একটু চেষ্টা করতে দাও। তার পর তুমি রিয়াটার করে বেরিয়ে চল। সাজঘরে আরও চেষ্টা করব। পারলে পরে আবার নামবে ব্যাট করতে।’ সেই মুহূর্তে এর থেকে বেশি কিছু করা বা বলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।’’
জোন্স আরও বলেছেন, ‘‘সেই পরিস্থিতিতে ম্যাক্সওয়েলের পক্ষে খেলা চালিয়ে যাওয়া সত্যিই সম্ভব ছিল না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টান ধরলে কী করে খেলবে! সেই সময় শরীরের প্রধান পেশিগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতেই হত। নিজে দাঁড়াতে পারবে, এমন একটা অবস্থায় আনতে চেয়েছিলাম। সেটা করতে করতেই ম্যাক্সওয়েলকে বলেছিলাম, ‘তুমি যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পার এবং না দৌড়লে আর কিছু ক্ষণ খেলতে পারবে। সমস্যা হবে না। তবে পারবে কি পারবে না, সেটা তুমিই সব থেকে ভাল বুঝতে পারবে।’’
ম্যাচের শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকার কৃতিত্ব ম্যাক্সওয়েলকেই দিয়েছেন জোন্স। তাঁর কথায়, ‘‘কৃতিত্ব কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের। ও আমার কথা শুনে স্ট্রেচ করেছিল। প্রচুর কষ্ট সহ্য করেই স্ট্রেচ করেছিল। যেমন যেমন করতে বলেছিলাম, ঠিক তেমন তেমনই করার চেষ্টা করেছে। আমার উপর ভরসা করেছে। তাতে উপকার পেয়েছে। তার পর কী হয়েছে সবাই দেখেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছে আমাদের।’’
জোন্স শুধু চেয়েছিলেন, যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ক্রিকেটারকে শুধু দাঁড়িয়ে থাকার মতো ব্যবস্থা করে দিতে। তাঁর মনে হয়েছিল, ম্যাচের ওই পরিস্থিতিতে দাঁড়াতে পারলেও রান করতে পারবে ম্যাক্সওয়েল। তাই কামিন্সকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন, খুব প্রয়োজন ছাড়া দৌড়তে রান না নেওয়ার জন্য। কামিন্সও বিশেষ রান নেওয়ার চেষ্টা করেননি। সম্পূর্ণ রক্ষণাত্মক ভাবে খেলে ম্যাক্সওয়েলকে যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। দাঁড়াতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও ফিরে পান ম্যাক্সওয়েল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy