আইপিএলের লখনউ দলের মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। ফাইল ছবি।
আগামী আইপিএলে তিনি লখনউ দলের মালিক। এবং সেই দল তিনি চালাবেন ফ্র্যাঞ্চাইজির বাণিজ্যিক স্বার্থ দেখে। কোনও রকম আবেগে ভেসে গিয়ে নয়। আইপিএল দল কেনার পর একান্ত সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজার অনলাইনকে সটান জানিয়ে দিলেন কলকাতার ছেলে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। পাশাপাশি জানালেন, খেলাধুলো তিনি ভালবাসেন ঠিকই। কিন্তু আইপিএলের দল কেনাটা একেবারেই তাঁর ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত। আর সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে লখনউই ছিল তাঁর প্রথম পছন্দ।
আনন্দবাজার অনলাইন: আপনি খেলাধুলোর সঙ্গে কতটা জড়িত? কলকাতার ফুটবল দল কিনেছিলেন। এর পর আবার ক্রিকেটের দল কিনলেন। এটা কি খেলাধুলোর প্রতি ব্যক্তিগত আবেগ থেকে?
সঞ্জীব গোয়েঙ্কা: কলকাতার ফুটবল দল কিনেছিলাম ফুটবলের প্রতি আমার প্যাশন থেকে। কিন্তু আইপিএলের টিম কেনার দুটো কারণ রয়েছে। প্রথমত, আমি বিশ্বাস করি, সারা দেশে খেলাধুলোর একটা ব্যাপক বিবর্তন হবে। বস্তুত, সেটা শুরু হয়েও গিয়েছে। এখন থেকে পাঁচ বছর আগে যেমন ডিজিটালের বিবর্তন হওয়া শুরু হয়েছিল। লোকে তখন ততটা বুঝতে পারেনি। এখন বুঝতে পারছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জোর। তেমনই খেলাধুলোও একটা বিপুল বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। এটা আমার দৃঢ় ধারণা। আমার যুক্তি। আমার বিশ্বাস। পরে আমি ভুলও প্রমাণিত হতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি এটাই বিশ্বাস করি।
দ্বিতীয়ত, আমি মনে করি ভবিষ্যতে আইপিএলের প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ইউনিকর্ন (যে কোনও স্টার্ট আপ সংস্থা, যাদের মোট সম্পদ ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা তার বেশি) হবে। ক্রিকেটে যেমন ‘ড্রিম ইলেভেন’ ইউনিকর্ন হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। একই ভাবে আইপিএলের প্রতিটা দলও ইউনিকর্ন হয়ে যাবে। সেদিকেও আমার লক্ষ্য রয়েছে। ফলে আমার আইপিএলের দল কেনাটা একেবারেই বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: তা হলে খেলাধুলোর প্রতি প্যাশনটা এ ক্ষেত্রে কোনও কারণ নয়?
সঞ্জীব: আমি মনে করি, দিস ইজ আ গুড বিজনেস। এটা একটা ভাল ব্যবসা। সেই কারণে আমি টিম কিনতে পেরে খুশি। আমরা এর বাণিজ্যিক দিকটা খুব ভাল করে খতিয়ে দেখেছি। সে সব দেখেশুনে আমাদের মনে হয়েছে, এটা যাকে বলে উইন-উইন সিচুয়েশন। লোকসানের কোনও প্রশ্ন নেই এখানে। আর আপনি যদি মনে করেন এটা একটা ভাল ব্যবসা এবং তার সঙ্গে আপনার খেলাধুলোর প্রতিও বেশি খানিকটা উৎসাহ থাকে, তা হলে তো সোনায় সোহাগা (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনি নিজে কখনও খেলাধুলো করেছেন? এখন কি কোনও খেলাধুলো করেন?
সঞ্জীব: ছোটবেলায় খেলাধুলো করেছি। সকলেই যেমন করে। কিন্তু আমি কখনও খেলাধুলোয় ভাল ছিলাম না। মানে, স্পোর্টসম্যান বলতে যা বোঝায়, আমি কখনওই তা ছিলাম না। কলেজে থাকার সময় ফুটবল, ক্রিকেট, হকি আর ব্যাডমিন্টন খেলেছি। এর মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট আর হকিতে বলার মতো কিছু করিনি। ইন ফ্যাক্ট, আমাদের ‘এ’ টিম-‘বি’ টিম হত। আমি প্রথম তিনটে খেলায় কখনও ‘এ’ টিমে থাকতে পারিনি (হাসি)। ব্যাডমিন্টনটা অবশ্য খুব একটা খারাপ খেলতাম না। কিন্তু খেলাধুলোর প্রতি প্যাশনেট ছিলাম। খেলা দেখতে খুব ভাল লাগত। সেটা এখনও লাগে।
প্রশ্ন: এখন কি কোনও খেলাধুলো করেন? ব্যাডমিন্টনটা তো অনেকদিন পর্যন্ত টানা যায়।
সঞ্জীব: না। এখন আর কোনও কিছু খেলি না। তবে রোজ সকালে আমার বাড়ির বাগানে হাঁটি। সাধারণত সাড়ে ৭ কিলোমিটার করে। ঘড়ি ধরে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট বা ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে সাড়ে ৭ কিলোমিটার হাঁটার চেষ্টা করি। তা ছাড়া সপ্তাহে চার দিন জিম করি। জিম সেশনটা অবশ্য করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে ‘জুম’-এই করি।
প্রশ্ন: আপনার তো একটা সময়ে কলকাতার দল কেনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। তার পর হল না কেন? কেউ কি পিছন থেকে বাগড়া দিয়েছিলেন?
সঞ্জীব: এখন আর সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। ওটা অতীত। অতীতেই থাকুক।
প্রশ্ন: রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস-এর মালিক থাকার সময় আপনি একটা সাহসী এবং ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। টিম হারছিল বলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে স্টিভ স্মিথকে অধিনায়ক করেছিলেন। লখনউ দলের মালিক হিসেবেও কি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা তেমনই কড়া থাকবেন?
সঞ্জীব: এ বিষয়ে দুটো কথা বলব। কারণ, এটার দুটো দিক আছে। এক, এই বিষয়টা নির্ভর করবে পুরোপুরিই ফ্র্যাঞ্চাইজির বাণিজ্যিক স্বার্থের উপর। দুই, এর মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজির আবেগের কোনও ভূমিকা থাকবে না।
প্রশ্ন: দলে কাদের নেবেন কিছু ভেবেছেন?
সঞ্জীব: না। সে সব নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। কারণ, ওরা ক্রিকেটারদের ধরে রাখার নীতিটা কী করবে, সেটা আগে দেখে নিতে চাই। সম্ভবত ২৫ নভেম্বর এটা নিয়ে একটা আলোচনা হতে চলেছে। সেটা হওয়ার পর দল গঠন নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হবে।
প্রশ্ন: দল বা শহর হিসেবে লখনউই কেন?
সঞ্জীব: প্রথম থেকেই আমার প্রথম পছন্দ ছিল লখনউ। দ্বিতীয় আমদাবাদ আর তৃতীয় ইনদওর। দেখলাম, লখনউটাই পেয়ে গেলাম। আইপিএলে যখন থেকে টিম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই আমরা মাঠে নেমেছিলাম। লখনউ নিয়ে আমরা আলাদা করে প্রচুর সমীক্ষা করেছি। দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করেছি। শহরটায় কারা থাকে, কতজনের গাড়ি আছে, কী ধরনের গাড়ির মালিক বেশি, কত লোক গয়না কেনে, কত লোক জমি কেনে বা বাড়ি কেনে— ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তার পরেই লখনউ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রশ্ন: কিন্তু এর পর তো আপনার বাড়িতে গৃহযুদ্ধ লাগবে! আপনি লখনউ টিমের মালিক। আপনার ছেলে নিশ্চয়ই শহরের বাসিন্দা হিসেবে কলকাতাকেই সমর্থন করবেন। লখনউ-কলকাতা ম্যাচের দিন তো বাড়িতে বিরাট টেনশন থাকবে?
সঞ্জীব: (হাসতে হাসতে) হবে তো! কী আর করা যাবে! সেটা যা হওয়ার হবে। তবে কী জানেন? আমাদের পরিবারে একটা গণতন্ত্র আছে। ফলে যার যেটা পছন্দ, সে সেটা করতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy