বিতর্ক: বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের দলে শামি নেই। ফাইল চিত্র
আরও একটি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা এবং যথারীতি বিতর্কের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া। ভারতীয় ক্রিকেটে দল-নির্বাচন আর কবে শান্তিপূর্ণ হল!
বিতর্কের কেন্দ্রে এ বারে মহম্মদ শামি। অস্ট্রেলিয়ায় কাপ অভিযানে ১৫ সদস্যের দলে জায়গা হয়নি দেশের অন্যতম সেরা পেসারের। শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় বোর্ডের অন্দরমহলেও এ নিয়ে কথা চালাচালি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া চিরাচরিত ভাবে পেস, বাউন্সের দেশ। লিলি-টমসনের দেশে বিশ্বকাপ হবে আর শামির মতো গতিসম্পন্ন, শিল্পী পেসার ড্রয়িংরুমে বসে টিভিতে খেলা দেখবেন? এ কেমন নির্বাচন?
কারও কারও মত, শামি যে শেষ পর্যন্ত স্ট্যান্ড-বাই হিসেবেও জায়গা পেয়েছেন, তাঁকে যে দেশের মাঠে আগামী দু’টি কুড়ি ওভারের সিরিজ়ের দলে রাখা হয়েছে, তার নেপথ্যে বোর্ডের ক্রিকেট বোধবুদ্ধিসম্পন্ন এক শীর্ষ কর্তা। একটা লাইফলাইন অন্তত খোলা থাকল। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই দু’টি বড় সিরিজ়ে ভাল বোলিং করতে পারলে, তাঁকে অতিরিক্ত সদস্য হিসেবে যোগ করা যায় কি না, বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। অবশ্য আইসিসি যদি সেই উদ্যোগকে অনুমোদন দেয়, তবেই তা সম্ভব। না হলে এই মুহূর্তে ১৫ জনের দলে সুযোগ পাওয়া কোনও বোলারের কেউ অনিশ্চিত হয়ে পড়লে, একমাত্র তখনই দরজা খুলতে পারে শামির জন্য।
সব চেয়ে বিস্ময়কর, পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়েই যে ভাবে শামিকে ব্রাত্য করে ফেলা হল। ঋদ্ধিমান সাহাকে টেস্ট দল থেকে ছেঁটে ফেলার মতোই রাহুল দ্রাবিড়রা মনে হয় ঠিক করে ফেলেছেন, শামিকে আর সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য ভাববেন না। শামি বিলক্ষণ টিম ম্যানেজমেন্টের মতলব ধরতে পেরেছিলেন। তেড়েফুঁড়ে উঠে তিনি আইপিএলে নামেন। ১৬ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে শেষ আইপিএলে উইকেটশিকারির তালিকায় ছিলেন ছয় নম্বরে। বিশ্বকাপের দলে যে চার পেসার জায়গা পেয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের চেয়ে আইপিএলের উইকেটশিকারির তালিকায় এগিয়ে ছিলেন শামি। দ্রাবিড়দের ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি এবং চেতন শর্মাদের জাতীয় নির্বাচকদের কি কেউ মনে করিয়ে দেবেন, আইপিএলকে বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি লিগ বলে মনে করা হয়? এক-এক জনের ক্ষেত্রে এক-এক রকম নিয়ম। হর্ষল পটেল, আরশদীপ সিংহদের দলে নেওয়ার সময় আইপিএল মাপকাঠি, আবার শামিরা বাদ পড়ে যাচ্ছেন আইপিএলে নিজেদের প্রমাণ করা সত্ত্বেও।
পেসারদের মধ্যে আইপিএলের উইকেটশিকারির তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন কাশ্মীরের নতুন চমক উমরান মালিক। ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট। সব মিলিয়ে তালিকায় চার নম্বরে। উমরান স্ট্যান্ড-বাইতেও জায়গা পাননি। স্মরণীয় আইপিএলের পরেও এই দু’জনকে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করেননি নির্বাচকেরা বা দল পরিচালন সমিতি। শামি কুড়ি ওভারে জাতীয় দলের হয়ে শেষ খেলেছেন আমিরশাহিতে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আর উমরান আইপিএলে অমন গতির ঝড় তোলার পরেও যখন সারা ক্রিকেট দুনিয়া তাঁকে নিয়ে উত্তেজিত, ডেল স্টেনের মতো ফাস্ট বোলার মুগ্ধ, তাঁকে কি না দেশের জার্সিতে ডেকে এনেও ম্যাচের পর ম্যাচ বাইরে বসিয়ে রাখলেন দ্রাবিড়রা। কী না, উমরান নাকি তৈরি হচ্ছেন! তা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে খেলিয়েও যদি দেখে না নিই, আর কোথায় দেখব!
দ্রাবিড়-রোহিত জমানায় জোরে বোলিং বিভাগ নিয়ে পরিষ্কার নীতি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস নয়, মধ্যম গতির উপরে জোর দিচ্ছেন বর্তমান দল পরিচালকরা। বিশ্বকাপের দলে প্রকৃত ফাস্ট বোলার বলতে একমাত্র যশপ্রীত বুমরা। এশিয়া কাপে ভুবনেশ্বর কুমারদের অসহায় দেখিয়েছে এমনকি টেলএন্ডারদের সামনেও। গতির অভাবে শেষের ওভারগুলিতে ম্যাচ হারতে হয়েছে ভারতকে। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ, পিচে এই মাঝারি গতি নিয়ে ফাটকা খেলা সফল হবে তো?
এদিকে, এশিয়া কাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ডুবে এল দল। আজ একে খেলাচ্ছি, কাল ওকে। মিউজ়িক্যাল চেয়ারের মতো। তা নিয়ে বোর্ডের অভ্যন্তরে কথা উঠেছে, যথেষ্ট চর্চাও চলছে। প্রশ্ন উঠছে, কোনও ক্রিকেটারকে যদি টানা সাত-আটটা ম্যাচ খেলতেই না দিই, তাঁর ছন্দ তৈরি হবে কী করে? আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে কী করে? পরীক্ষা চালাতে গিয়ে পরীক্ষার হলঘরে গিয়েই ডাহা ফেল।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বকাপ প্রস্তুতির কথা এঁদের মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। ডাম্বুলায় এশিয়া কাপেরই ফাইনাল খেলতে নামার আগে ধোনি ড্রেসিংরুমে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘দেশের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলছি আমরা। খুব বেশি সময় আর নেই। চলো এই ম্যাচটাকে বিশ্বকাপ ফাইনাল মনে করে খেলি।’’ ডাম্বুলায় ফাইনাল জিতে সেই রাতে ড্রেসিংরুমে ফিরে ভারতীয় দলের সদস্যরা একসুরে গেয়ে উঠেছিলেন, ‘‘উই উইল উইন দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ!’’ তার পর ওয়ংখেড়েতে ‘মহেন্দ্রক্ষণ’!
এ বারের বিশ্বকাপের দলে চার পেসার, তিন স্পিনার। সেখানেই শেষ নয়। স্ট্যান্ড-বাইতে আরও এক স্পিনার, রবি বিষ্ণোই। কে বলবে বিশ্বকাপের সূচি অনুযায়ী, ভারত মেলবোর্নে খেলবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আর পার্থে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকার? এ তো চেন্নাইয়ে নামার তোড়জোর চলছে যেন! এক জন স্পিনার কমিয়ে শামিকে দলে রাখব না কেন? বিশ্বকাপের কথা ভেবে উমরান মালিককে খেলিয়ে তৈরি করে স্ট্যান্ড-বাইতে রাখব না কেন?
আরও প্রশ্ন রয়েছে। যে চার জোরে বোলার নেওয়া হয়েছে, তাঁদের দিকে তাকান। বুমরা, ভুবনেশ্বর, হর্ষল পটেল, আরশদীপ সিংহ। প্রত্যেকেই ‘ডেথ ওভার’ অর্থাৎ শেষের দিকের ওভারে বল করার জন্য পরিচিত। মাঝের দিক সামলাবে কে?
ভারতীয় ক্রিকেট মহল জুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন। বিশ্বকাপের দল বাছাই কি ঠিক হল? ওই যে পুরনো সেই কথা— বৃক্ষ তুমি কেমন, ফলেনু পরিচয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy