মহড়া: রিভার্স সুইপ লাবুশেনের। পর্যবেক্ষণ সতীর্থ ম্যাক্সওয়েলের। সোমবার ইডেনে অস্ট্রেলিয়া দলের অনুশীলনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
অসম্ভবকে সম্ভব করতে জানেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এক পায়ে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যে ইনিংস তিনি খেলেছিলেন, তা সারা জীবন তাজা থেকে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে। ইডেনেও সে রকম কোনও ইনিংস কি অপেক্ষা করছে? সেই উত্তর এখনও অজানা থাকলেও ‘ম্যাড ম্যাক্স’ তাঁরই এক সতীর্থকে তৈরি করে দিচ্ছেন। তিনি মার্নাস লাবুশেন।
ইডেনে সেমিফাইনালের তিন দিন আগে লাবুশেনকে নেটে ব্যাটিংয়ের পাঠ দিলেন ম্যাক্সওয়েল। ইডেনে স্পিনারদের সামলানোর জন্য রিভার্স সুইপ ও রিভার্স স্কুপ খেলার চেষ্টা করছিলেন লাবুশেন। বেশ কয়েক বার আউট হতেও দেখা যায় তাঁকে। সেই সময়ই ম্যাক্সওয়েলের চোখে পড়ে লাবুশেনের দুর্বলতা। তিনিই এগিয়ে যান সতীর্থকে সাহায্য করতে।
নেট থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে ম্যাক্সওয়েলের কাছে রিভার্স স্কুপ শিখতে যান লাবুশেন। ছাত্রের মতো করে তাঁর সতীর্থকে এই শটের বিষয়ে খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দেন ম্যাক্সওয়েল। নেটে ফিরে প্রায় এক ঘণ্টা স্পিনারের বিরুদ্ধে একই শট খেলেন লাবুশেন। পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিতে থাকেন ম্যাড ম্যাক্স। সেমিফাইনালের আগে তাঁদের মরিয়া মনোভাবই পরিষ্কার করে দিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোনও জায়গায় ফাঁক রাখতে চায় না অস্ট্রেলিয়া।
এসপার-ওসপার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোনও দল পড়তে চায় না। কারণ, পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নেরা হারার আগে তারা কোনও দিন হাল ছাড়ে না। ম্যাক্সওয়েলের সেই ইনিংস অমর হয়ে থেকে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। ক্রিকেটীয় দক্ষতার থেকেও তাঁর মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়ার মরিয়া মনোভাবের ছবিটা।
সোমবারও ইডেনের নেটে বিধ্বংসী মেজাজে দেখা গেল ম্যাক্সওয়েলকে। একটি বলেও রক্ষণাত্মক শট খেলতে দেখা যায়নি তাঁকে। এক দিনের ক্রিকেটে তিনি ’ডট বল’ (যে বলে রান হয় না) খেলতে পছন্দ করেন না। তাই স্পিনারকে সুইপ, রিভার্স সুইপ, সুইচ হিট মেরে রান বার করার অনুশীলন করে গেলেন দীর্ঘক্ষণ। ঐচ্ছিক অনুশীলন হলেও ম্যাক্সওয়েল নিজেকে নিংড়ে দেন নেটে। এ দিন যদিও অনুশীলনে এলেন না ডেভিড ওয়ার্নার, প্যাট কামিন্স, ট্র্যাভিস হেড, অ্যাডাম জ়াম্পা ও জশ হেজ়লউড। হোটেলেই বিশ্রাম নেন। কোনও ব্যাটসম্যানকে বল না করলেও দু’টি স্টাম্প বসিয়ে প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে বল করেন মিচেল স্টার্ক।
অস্ট্রেলীয় পেসার মনে করেন, দু’টি নতুন বলের ব্যবহারে বোলাররা ক্রমশ হারিয়ে যেতে শুরু করেছে এক দিনের ক্রিকেট থেকে। কারণ, বল খুব একটা পুরনো হচ্ছে না। রিভার্স সুইং পাচ্ছেন না কেউই। সোমবার টিম হোটেলে অস্ট্রেলীয় পেসার বলেন, ‘‘এক দিনের ক্রিকেটে একটি বলই ব্যবহার করা উচিত পুরো ইনিংস জুড়ে। দু’টো নতুন বল কিন্তু আমাদের বিপদ আরও বাড়াচ্ছে।’’
স্টার্ক আরও যোগ করেন, ‘‘অতীতের ম্যাচের ভিডিয়ো দেখলে ধরতে পারবেন, পুরনো বলে কী সুন্দর রিভার্স সুইং হত। শেষ ১০ ওভারে আবার ম্যাচে ফিরে আসত বোলাররা। বর্তমান ক্রিকেটে প্রথম ১০ ওভারের পরে পেসারদের আর কোনও ভূমিকাই থাকে না। এমনিতেই সীমিত ওভারের ক্রিকেট ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে গিয়েছে। আমরা আছি নামমাত্র।’’
স্টার্কের অনুরোধ, ‘‘বোলারদের ম্যাচে ফেরাতে গেলে একটি বল দিয়েই খেলানো হোক এক দিনের ক্রিকেট। রিভার্স সুইংও এক ধরনের শিল্প। যা প্রায় হারিয়েই গিয়েছে এক দিনের ক্রিকেট থেকে।’’
স্টার্ক মনে করেন, চলতি বিশ্বকাপে ভারতীয় পেস বিভাগ দেখিয়ে দিয়েছে, এই পিচেও কী ভাবে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা যায়। স্টার্কের কথায়, ‘‘ভারতীয় পেসাররা এমন একটা মান তৈরি করে দিয়েছে, যা ছোঁয়া খুব কঠিন। বল পুরনো হওয়ার আগেই বিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছে ওরা। এক দিক থেকে এটা ভাল পরিকল্পনা। কিন্তু সবাই তো আর পারে না।’’
শেষ চারের ম্যাচে স্টার্কই সব চেয়ে বড় শক্তি অস্ট্রেলিয়ার পেস বিভাগে। ইডেনে নিজেকে উজাড় করে দিতে মরিয়া অস্ট্রেলীয় পেসার। বলছিলেন, ‘‘আমার বোলিংয়ে খুব একটা বেশি বৈচিত্র নেই। অনেকেই বোঝে আমি কী করতে চলেছি। কিন্তু যেটা চেষ্টা করি, তা যদি ঠিক জায়গায় পড়ে যায়, তা হলে ব্যাটসম্যান বুঝেও কিছু করতে পারবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আমরা মরিয়া মনোভাব নিয়ে নামব। বাকিটা মাঠে দেখতে পাবেন।’’
স্টার্ক আছেন বিধ্বংসী মেজাজেই। টেম্বা বাভুমা কি শুনতে পাচ্ছেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy