অতিথি: শুক্রবার আরসিজিসি-তে কপিল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ক্রিকেট মাঠেই শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। বাইশ গজকে বিদায় জানানোর পরে গল্ফ কোর্সেও তাঁর সফল অভিযান ঘটেছিল। কথায় আছে, ‘‘অলরাউন্ডার তৈরি করা যায় না। অলরাউন্ডার জন্মগ্রহণ করে।’’ এই উক্তির সব চেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত কপিল দেব নিখাঞ্জ।
শুক্রবার রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবে (আরসিজিসি) ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গল্ফ চ্যাম্পিয়নশিপ উদ্বোধন করতে এসেছিলেন তিনি। আরসিজিসি-র প্রস্তুতি টার্ফে কয়েকটি শট খেলে বুঝিয়ে দিলেন এখনও ঝড় তুলতে পারেন। আর এমন কিংবদন্তির সঙ্গেই কি না তুলনা করা হচ্ছিল হার্দিক পাণ্ড্যের। বলা হচ্ছিল, কপিলের যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তারকার। তবে শুক্রবার হার্দিকের প্রসঙ্গ উঠতেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন কপিল। জানতে চাইলেন, হার্দিককে কি সত্যি অলরাউন্ডার বলা যায়? সাংবাদিকদের কপিল বলে দিলেন, ‘‘অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে হলে হার্দিককে দু’টো কাজই করতে হবে। ও তো বল করছে না। তা সত্ত্বেও কি হার্দিককে অলরাউন্ডার বলা যায়?’’ যোগ করেন, ‘‘চোটমুক্ত হয়ে বল করতে শুরু করুক হার্দিক। ভারতীয় দলের জন্য ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে বল হাতেও সাবলীল হয়ে প্রচুর ম্যাচ খেলতে হবে। বোলার হিসেবেও দলকে জেতাতে হবে। তখনই না হয় এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে।’’ আইপিএল থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ, হার্দিকের বল না করা নিয়ে সারাক্ষণ বিতর্ক লেগে ছিল। কপিলের প্রাক্তন সতীর্থ চেতন শর্মা পরিচালিক নির্বাচকদের কমিটিও এ জন্য প্রবল ভাবে সমালোচিত হয়েছিল।
কপিলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বর্তমান ভারতীয় দলে তাঁর পছন্দের অলরাউন্ডার কারা? নির্দ্বিধায় তিনি আর অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাডেজার নাম করেন। তিরাশি বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘অশ্বিন ও জাডেজা অসাধারণ ক্রিকেটার। তবে আমার মতে ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেক উন্নতি করেছে জাডেজা। বোলার হিসেবে ওর মান অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। শুরুর দিকে অনেক ভাল বোলার ছিল। তবে এখন ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে জাডেজা। বোলার হিসেবে সেই দাপট কিন্তু দেখা
যাচ্ছে না।’’
নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে হাফসেঞ্চুরি করেছেন জাডেজা। বল হাতে এখনও উইকেট পাননি। তবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা শ্রেয়স আয়ারকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কপিল। সেঞ্চুরি করে দলকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বার করে এনেছেন শ্রেয়স। কপিল বলে দিলেন, ‘‘অভিষেকে কোনও তরুণ ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করা মানে ক্রিকেট ঠিক দিশাতেই এগোচ্ছে। ওর মতো ব্যাটসম্যানই এখন দলে প্রয়োজন। চার-পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে টেস্ট খেলার জন্য। মিডল অর্ডারে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠতে পারে শ্রেয়স।’’
রাহুল দ্রাবিড়ের প্রশিক্ষণেই টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটে শ্রেয়সের। ভারতীয় দলের নতুন কোচের থেকে এ রকমই সাহসী সিদ্ধান্ত আশা করেন কপিল। তিনি মনে করেন, ক্রিকেটার দ্রাবিড়ের চেয়েও বেশি সফল হবেন কোচ দ্রাবিড়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ও খুব ভাল ছেলে। এটাই সবচেয়ে বড় গুণ। ক্রিকেটার হিসেবে ওর চেয়ে ভাল রেকর্ড ক’জনের আছে? বলতে দ্বিধা নেই, কোচ হিসেবে ও অনেকের চেয়েই ভাল করবে।’’
তবে কোচ দ্রাবিড়কে আরও কিছুটা সময় দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। কপিল মনে করেন, ‘‘অন্তত তিন বছর সময় দিতে হবে ওকে বিচার করার জন্য। দল যাতে ভাল খেলে, দ্রাবিড় সেই চেষ্টাই করবে।’’
হনুমা বিহারীকে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাইলেন না কপিল। বরং তাঁর বার্তা, ‘‘মোহিন্দর অমরনাথ, অংশুমান গায়কোয়াড়রা বহু বার ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়েছে, আবার ফিরেও এসেছে। হনুমা দক্ষিণ আফ্রিকায় পারফর্ম করুক। নিশ্চয়ই ওকে দলে ফেরানো হবে।’’
বেশ কিছু প্রশ্ন এড়িয়েও গেলেন কপিল। যেমন, প্রাক্তন অধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হয় সাদা বলের ক্রিকেটে রোহিতের হাতেই কি নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া উচিত? কপিলের সাফ জবাব, ‘‘অধিনায়ক কে হল, সেটা বড় কথা নয়। ম্যাচ জেতাই হল আসল। দল হিসেবে খেলতে হবে। প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে দলকে জেতানোর। কে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাতে কী যায় আসে!’’
বিদায়ী হেড কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, বিরাট কোহালির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলই সর্বকালের সেরা। এই প্রসঙ্গ উঠতেই কপিল বলে দিলেন, ‘‘ও নিজের মতামত দিয়েছে। আমাকে এই প্রশ্ন করার অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। বিতর্ক তৈরি করার জায়গা এটা নয়!’’
ক্রিকেট ছেড়ে দিলেও স্লগ ওভারের ব্যাটিং হয়তো ভোলেননি। শেষের দিকে তাই বিতর্কিত প্রশ্ন উড়িয়ে দিতে দু’বার ভাবলেন না ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy