পাশাপাশি: আরসিবির অনুষ্ঠানে সুনীল ছেত্রী এবং বিরাট কোহলি। মাঝে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
ভারতীয় ক্রীড়াজগতের দুই কিংবদন্তিকে একই মঞ্চে দেখার সৌভাগ্য অনেকেরই হয় না। তাঁরা দু’জনে একে অপরের বন্ধু হলেও দেখা করার সুযোগ পান না ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু যখন দেখা হয়, প্রাণ খুলে কথা বলতেও ভোলেন না।
শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে ‘পিউমা’ আয়োজিত একটি কনক্লেভে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ও প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। দু’জনকে পাশাপাশি বসিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব আয়োজন করার ইচ্ছে থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত আয়োজন করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। দু’জনকেই আলাদা করে ১৫ মিনিটের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় মঞ্চ। সাধারণ মানুষের জীবনে খেলাধুলোর বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা কতটা, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে গেলেন দুই ক্রীড়াব্যক্তিত্ব।
সুনীল মঞ্চে উঠেই যেমন জানিয়ে দিলেন, তাঁকে যেন কিংবদন্তি বলে সম্বোধন না করা হয়। অন্য দিকে বিরাট তাঁর ব্যবহারের মাধ্যমে যে সকলকে খুশি করতে পারবেন না, তা বলতে দ্বিধাবোধ করলেন না।
শুরু থেকেই ক্রিকেটের ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’ হিসেবে পরিচিত বিরাট। মাঠের মধ্যে বিপক্ষের উইকেট পড়ার পরে তাঁর উৎসবের ভঙ্গি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এখনও তোলেন। সেই সমালোচকদের আরও একবার গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিলেন আরসিবি তারকা।
সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজার পরে মঞ্চে ওঠেন বিরাট। এক গাল হেসে সাংবাদিকদের বলে দেন, ‘‘আমাকে ডাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আশা করি, সকলে ভাল আছেন।’’ প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হতেই বিরাটের ব্যবহার নিয়ে কথা ওঠে। যার উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘যখন অধিনায়ক ছিলাম, দল জিতলেও আমার ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠত। দল হয়তো হেরেছে অথচ আমি ভাল ব্যাট করেছি, তখন প্রশ্ন উঠত অধিনায়কত্ব নিয়ে। আবার একই দিনে দু’টোই ভাল ভাবে করলে প্রশ্ন উঠত ব্যবহার নিয়ে। তখন থেকে বুঝতে শুরু করি, সকলকে খুশি করে চলা আমার কাজ নয়।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি যে খুব রেগে যাই, তা কিন্তু নয়। কিন্তু আবেগকে মনের মধ্যে বন্দি করে রাখতে চাই না। বরাবরই মস্তিষ্ককে পেছনে রেখে মনের কথা শুনেছি। এখনও সেই নিয়মেই চলতেপছন্দ করি।’’
বিরাট-উত্তরে হাততালি শুরু হয় হল জুড়ে। সকলকে শান্ত করে তিনি বলেন, ‘‘সকলে আমার ব্যবহার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু আমি যে ভাল কথাও বলতে পারি, সেটা কারও নজরে পড়েনি।’’ মন্তব্য করে নিজেই হেসে ফেলেন প্রাক্তনভারত অধিনায়ক।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর অবিশ্বাস্য ৮৩ রানের ইনিংস মুগ্ধ করেছিল ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। হ্যারিস রউফকে ব্যাকফুট ড্রাইভে সোজা ছয় মারার সেই ভিডিয়ো এ দিনও চালিয়ে দেওয়া হয়। যা দেখে বিরাটের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নিজের ইনিংস দেখেই উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে দেন, ‘‘অক্ষর পটেল আমার জন্য রান আউট হয়েছিল। সেই সময় ২৫ বলে আমার রান ছিল ১২। কী করব, কী ভাবে জিতব এই ম্যাচ? বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাস্তবের মধ্যে থেকে একেবারে হারিয়ে গিয়েছিলাম। থাকলে হয়তো এমন ইনিংস খেলতে পারতাম না।’’ আরও বললেন, ‘‘এখনও জানি না, টাইম-আউটের সময় রাহুল ভাই এসে আমাকে কী উপদেশ দিয়েছিল। আমি যে ম্যাচটা জিতিয়েছি, এখনও বিশ্বাস হয় না।’’
বিরাট ও সুনীল, দু’জনেই মনে করেন প্রত্যেক মানুষের জীবনে খেলাধুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। বিরাট বলছিলেন, ‘‘পড়াশোনাও খুবই জরুরি। আমি নিজেও পড়াশোনায় ভাল ছিলাম। অঙ্ক ছাড়া সব পারতাম। এখনও অঙ্ক পারি না। জানি না আমার মেয়ে কিছু জানতে চাইলে কী বলব।’’ বলে হেসে ফেলেন বিরাট। যোগ করেন, ‘‘খেলাধুলোকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আগে দুশো শতাংশ নিশ্চিত হতে হবে, তুমি কি সত্যি খেলতে চাও? কারণ, চাপমুক্ত হয়ে খেলা যায় না। আমি এমন একজনকেও দেখিনি, যে চাপমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করছে। জীবনের মতোই খেলাধুলোকে ভালবাসলে তবেই এখান থেকে কিছু একটা করা যায়।’’
সুনীলেরই একই মত। বলছিলেন, ‘‘যে কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকলে জীবনে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আমরা হারতে শিখি। কিন্তু জীবনে হেরে যেতে শিখি না। জানি, আজ হয়তো দিনটা খারাপ গিয়েছে, আগামীকাল ভাল হবেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ভারতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলব। সেই পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেটাই এক দিন আমার স্বপ্ন ছিল।’’
বেঙ্গালুরু এফসি তারকা আরও যোগ করেন, ‘‘ক্রীড়াজগতে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগোতে গেলে অভিভাবকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। আমার মা কখনও ট্রেনিং গ্রাউন্ডে যাননি আমার সঙ্গে। কখনও জানতেও চাননি ভাল খেলেছি না খারাপ। শুধু বলতেন যেটাই করবি, আনন্দ করে করবি।’’
সুনীল মনে করেন, খেলোয়াড়দের শেখার ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। কারণ, মাঠে অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সুনীল বলছিলেন, ‘‘খেলোয়াড়দের বেশি পড়তে হয় না। আমি আধ ঘণ্টা বই নিয়ে বসতাম। ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করতাম।’’
বৈঠক শেষে দুই তারকা একসঙ্গে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সকলকে ছবি তোলার আহ্বান জানান। বিরাট সুনীলকে বলেন, ‘‘তোমাকে দেখে তো এখনও ১৮ বছরের মনে হচ্ছে।’’ সুনীলের উত্তর, ‘‘তোমার বয়স তো ষোলোর চেয়ে বাড়েইনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy