ভারতীয় ক্রিকেট দল। ছবি: পিটিআই।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত প্রথম টেস্টে জেতার পর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট আলোচনায় চলে এসেছে। ইংরেজ কর্তা থেকে পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার, বোর্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে হারের পর যে কাঠামো সমালোচনার মুখে পড়েছিল তা-ই এখন প্রশংসিত। তুলনা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে। বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে নাকি ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত। সত্যিই কি তাই?
আলোচনার সূত্রপাত মাসখানেক আগে বোর্ড সচিব জয় শাহের একটি মন্তব্যে। তিনি প্রথম সারির ক্রিকেটারদের কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, জাতীয় দলের খেলা না থাকলে যেন তাঁরা বাধ্যতামূলক ভাবে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন। কথা শুনে দলীপ ট্রফিতে খেলেছেন অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারই, যাঁদের পরে বাংলাদেশ সিরিজ়ের দলে নেওয়া হয়েছে। ঈশান কিশন এবং শ্রেয়স আয়ার অতীতে ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলায় বোর্ডের কোপে পড়ে বার্ষিক চুক্তি হারিয়েছেন। তাঁদেরও নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে দেখা গিয়েছে। তাতে ঘরোয়া ক্রিকেটের মান যেমন উন্নত হয়েছে তেমনই নির্বাচকদের হাতে বিকল্পও বেড়েছে।
তবে সামগ্রিক ভাবে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিস্থিতি আগের থেকে উন্নত হলেও তা এখনও বিশ্বমানের হয়নি। অস্ট্রেলিয়া এখনও এ ব্যাপারে এগিয়ে থাকবে। অর্থও একটা বড় বিষয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে বোর্ড আগের থেকে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে। কিন্তু যাঁরা শুধু লাল বলের ক্রিকেট খেলেন, তাঁদের জন্য আরও টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
ইংরেজ কর্তা কী বলেছেন
কাউন্টি ক্রিকেটের হারানো গরিমা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ল্যাঙ্কাশায়ারের সিইও ড্যানিয়েল গিডনি ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয় বোর্ডের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রশংসা করেছেন। তিনি দোষ দিয়েছেন ইংরেজ ক্রিকেটারদের এজেন্টদের। বলেছেন, “ভারতের মতো এক বোর্ড ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার জন্য বলছে। ভাবতে পারেন দৃশ্যটা! আমাদের দেশেও মুক্ত মনে কথা বলা উচিত। কোচ, প্রশাসনকে দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু দোষ দিতে হলে এজেন্টদের দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় কাউন্টি ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারেরা কাউন্টিতে খেলে না। এজেন্টরাও চায় না ওরা খেলুক। এজেন্টদের কাছে জাঁকজমকপূর্ণ লিগে ক্রিকেটারদের খেলানোর তাড়না বেশি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটেও বেতন বাড়াতে হবে। এখন যা বেতন পায় অন্তত দেড় গুণ বেশি অর্থ ওদের দেওয়া দরকার।”
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার আকমল কী বলেছেন
পাকিস্তানকে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ়ে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তারাই ভারতের মাটিতে এসে পর্যুদস্ত। সেই সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন আকমল। বলেছেন, “পিসিবি-র উচিত বিসিসিআই, ওদের দল, নির্বাচক, অধিনায়ক এবং কোচের থেকে পেশাদারিত্ব শেখা। বিশ্বের এক নম্বর দল গড়ে তুলতে গেলে এগুলোই দরকার। এ ভাবেই শাসন করা যাবে। আমরা যদি সেগুলো পারতাম তা পাকিস্তান ক্রিকেট আজ এত নীচে পড়ে থাকত না। অহঙ্কারের জন্য পাকিস্তানের ক্রিকেট আজ এই জায়গায়।”
কোথায় ফারাক ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার
ভারতে যে রকম রঞ্জি ট্রফি রয়েছে, তেমনই অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে শেফিল্ড শিল্ড। রঞ্জিতে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অংশ নেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ভারতের থেকে আয়তনে আড়াই গুণ বড় হওয়া সত্ত্বেও শেফিল্ড শিল্ডে খেলে মাত্র ছ’টি দল। বিস্তারিত ভাবে বললে, দেশের ছ’টি প্রদেশ। অর্থাৎ ভারতে রাজ্য দলে সুযোগ পাওয়া যতটা সহজ তার থেকে অনেক গুণ বেশি কঠিন অস্ট্রেলিয়ার প্রাদেশিক দলে সুযোগ পাওয়া। প্রচুর ক্রিকেটারের মধ্যে থেকে সেরা ১১ জনকে বেছে নেওয়া হয়। সেখান থেকেই একের পর এক তরুণ ক্রিকেটার উঠে এসে জাতীয় দলের জায়গা ভরাট করছেন। ভাল খেলে ইতিমধ্যেই ক্যামেরন গ্রিন জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। তালিকায় জেভিয়ার বারলেট, জ্যাক ক্লেটন, অলি ডেভিস, জ্যাক এডওয়ার্ডস, ম্যাথু গিলকেস, ম্যাকেঞ্জি হার্ভের মতো ক্রিকেটাররা রয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ ধরেই রবি শাস্ত্রী বলেছেন, “একটানা তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে আনছে অস্ট্রেলিয়া। সব সময়েই ওদের দলে তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার একটা মেলবন্ধন রয়েছে। তরুণেরা সহজেই অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শিখে নিচ্ছে নিজেদের দায়িত্ব। তাই সহজেই দলটার মধ্যে একটা ঐক্যবদ্ধ ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ধরনের পরিকল্পনাই ভারতকে করতে হবে। কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হলে হোক। কিন্তু দলের স্বার্থ সবার আগে। এ ব্যাপারে কোনও আপস নয়।”
জনসংখ্যাই কি সমস্যা
অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের থেকে ভারতের জনসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে উঠতি ক্রিকেটারের সংখ্যাও অনেক বেশি। যে হেতু অস্ট্রেলিয়ার উঠতি ক্রিকেটারের সংখ্যা ভারতের তুলনায় কম, তাই ভবিষ্যতের তারকা তুলে আনতে অস্ট্রেলিয়া এক-এক জন উঠতি ক্রিকেটারের পিছনে যে বিনিয়োগ করছে তা ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। উঠতি ক্রিকেটারদের পিছনে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করার বিলাসিতা দেখাতে পারে অস্ট্রেলিয়া। সঠিক কোচিং, পরিকাঠামো পেয়ে তারা ক্রমশ এগিয়ে যেতে থাকে। প্রতিভা অনুযায়ী এর পরে তাদের প্রাদেশিক বা জাতীয় দলে নির্বাচন করা হয়। ফলে উঠতি ক্রিকেটারের সংখ্যা ভারতের থেকে কম হলেও বিনিয়োগ এবং সঠিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে জাতীয় দলে নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা ভারতের থেকে বেশি। অন্য দিকে, ভারতে উঠতি প্রতিভা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ‘লবি’ বা রাজনীতি কাজ করে। অনেক সময় ভুল ক্রিকেটারের পিছনে অনেক বিনিয়োগ করে ফেলা হয়। আবার প্রতিভাবান ক্রিকেটারেরা বিনিয়োগ পান না। ‘স্কাউটিং’ বা ক্রিকেটার তুলে আনার ক্ষেত্রেও ভারতের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে ইদানীং প্রায় সব আইপিএল দলের নিজস্ব অ্যাকাডেমি এবং পরিকাঠামো থাকায় বোর্ডকে আর আলাদা করে বিশেষ খাটতে হয় না।
ভারত কি টেক্কা দিচ্ছে বাকিদের
একটা বিষয়ে নিশ্চিত ভাবেই টেক্কা দেওয়া যাচ্ছে। তা হল আইপিএল থেকে ক্রিকেটার তুলে এনে তাঁদের জাতীয় দলে খেলানো। ইদানীং আইপিএল থেকে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা বেড়েছে। যশপ্রীত বুমরা এবং ঋষভ পন্থ তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তিন ফরম্যাটেই খেলে ফেলেছেন তাঁরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় বিবিএল থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা কম। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় বিবিএল চলে জাতীয় দলের খেলা থাকাকালীন। ফলে অনেকেই খেলতে পারেন না। ইংল্যান্ডের বিষয়টা একই রকম। ভারতে আইপিএলের সময় কোনও আন্তর্জাতিক খেলা থাকে না। ফলে সিনিয়র ক্রিকেটারেরা সবাই অংশ নিতে পারেন।
খামতি থাকছে কোথায়
আইপিএল থেকে যাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা বেশির ভাগই সীমিত ওভারের দলে নির্বাচিত হচ্ছেন। কিন্তু টেস্ট সম্পূর্ণ আলাদা ঘরানা। সেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার বিকল্প তৈরি হয়নি এখনও। সরফরাজ খান, আকাশ দীপ তাঁর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে যে পরিমাণ ক্রিকেটার উঠে আসছেন সেই সংখ্যাটার সঙ্গে লাল বলের ক্রিকেট তুলনাতেই আসে না। হয়তো সে কারণেই জয় শাহ ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার উপরে এত জোর দিয়েছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন সিনিয়র ক্রিকেটারেরা রঞ্জি, দলীপ খেললে তা থেকে কত জন জুনিয়র ক্রিকেটার উপকৃত হতে পারে। তবে ভারতের সূচি যে রকম তাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলার পরিসর কম। তাই জয় শাহের বার্তা কতটা কাজে লাগছে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর কী চেয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি বিন্নী
প্রায় সব ভারতীয় ক্রিকেটার আইপিএলে খেলেন। বোর্ড সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিন্নী চেয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা আইপিএলে না খেলুন। কিন্তু বোর্ড প্রধানের এমন ইচ্ছা স্বাভাবিক ভাবেই আইপিএলের দলগুলি মানতে চায়নি। শাহরুখ খান, মুকেশ অম্বানিরা কোনও ভাবেই চাননি যে তারকাদের পিছনে তাঁরা কোটি কোটি টাকা খরচ করেন, সেই রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা আইপিএলের সময় বসে থাকুন। সেই সময় স্বয়ং বোর্ড সভাপতি তুলনা হিসাবে টেনে এনেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকেই।
অস্ট্রেলীয় মডেল কী
আইপিএলে ক্রিকেটারদের খেলতে পাঠানোর ব্যাপারে বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া বোর্ড। জাতীয় দলের ম্যাচ না থাকলেও অসি ক্রিকেটারদের আইপিএল খেলার ব্যাপারে দরাজ সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। যেমন ২০২২ সালে আইপিএল শুরু হয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা এসেছিলেন। তত দিনে প্রতিটি দল প্রায় তিন থেকে চারটি ম্যাচ খেলে ফেলেছিল। অস্ট্রেলিয়া বোর্ড প্যাট কামিন্সদের তখন ছাড়েনি। তাঁদের ম্যাচ না থাকলেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। কোপ পড়েছে আইপিএলের সময় বিজ্ঞাপন করার ক্ষেত্রেও। ২০২১ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলতে এলেও কোনও বেটিং সংস্থা, মদ, স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর খাবার এবং তামাক জাতীয় বস্তুর বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না। শুধু তা-ই নয়, আইপিএলের বিজ্ঞাপনী প্রচারে কোনও একটি বিগ ব্যাশ দলের একাধিক ক্রিকেটার বা অস্ট্রেলিয়ার কোনও একটি প্রদেশের একাধিক ক্রিকেটারকে ব্যবহার করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা আছে। অস্ট্রেলিয়া বোর্ডের বক্তব্য, একটা বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে প্রচুর সময় লাগে। ফলে বিজ্ঞাপন করলে ক্রিকেটারদের অনুশীলন এবং বিশ্রামের সময় কমে যায়। এটা খুব ভাল ভাবে নেয়নি আইপিএলের দলগুলি। সেই সময় বোর্ডকে ব্যাপারটি জানানোর কথাও বলেছিল তারা। ২০২১ সালে ভরা করোনার মধ্যেও আইপিএল হয়েছিল। সেটাও ভাল ভাবে নেয়নি অস্ট্রেলিয়ার সরকার। সে বার আইপিএল থেকে ফেরার ব্যবস্থা ক্রিকেটারদের করে নিতে বলা হয়েছিল। সে দেশের সরকার বা বোর্ড পাশে দাঁড়ায়নি। আইপিএল খেলতে আসাই যেন দোষ হয়েছিল। দেশে ফেরার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের।
বিন্নী কী বলছেন
ভারতীয় বোর্ড নিজের দেশের ক্রিকেটারদের উপর এত কঠোর অবশ্যই হবে না। যে আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোষাগারে কোটি কোটি টাকা এনে দেয়, সেখানে নিজের দেশের ক্রিকেটারদের খেলা আটকানো যে কঠিন তা জানেন বিন্নী। কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন আইপিএল খেলতে গিয়ে একাধিক ভারতীয় ক্রিকেটার চোট পেলে এবং বিশ্রামের অভাবের কারণে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে না পারলে ভারতীয় দলের ক্ষতি হবে। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া যদি আইপিএলকে সরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেয়, তা হলে ভারতও কেন সেটা করতে পারবে না সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিসিসিআইয়ের প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বিন্নী। সেই দিনই তিনি বলেছিলেন, “ক্রিকেটারদের বার বার চোট পাওয়া খুব চিন্তার কারণ। কী ভাবে ক্রিকেটারদের চোট পাওয়া কমানো যায়, সে দিকে নজর দেব। বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভাল মানের চিকিৎসক ও ফিজিয়ো রয়েছেন। তাঁদের কাজে লাগাতে চাই। আমি এর শেষ দেখে ছাড়তে চাই।” কিন্তু চোট কমেনি। একের পর এক ক্রিকেটার চোট পেয়েছেন।
বোর্ডের বাকি কর্তাদের আঙুল কার দিকে
বোর্ডের একটা অংশ যদিও আইপিএলের দিকে আঙুল তুলছে না। ক্রিকেটারদের চোট পাওয়া নিয়ে বরং জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিকে বার বার দুষেছে তারা। বোর্ডকর্তাদের বক্তব্য, বিশ্রাম দেওয়ার পরেও একাধিক ক্রিকেটার চোট পেলে বাছাই করা ক্রিকেটার নিয়ে খেলার কথা কী করে ভাবা হবে? জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিকে এটা বলা হয়েছে। দল এবং নির্বাচকেরা অন্য ক্রিকেটারদের তৈরি রাখার কথাও ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। এটার দায় কাউকে তো নিতে হবে। বোর্ডের একটা অংশ জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দিকে বল ঠেলে আইপিএলকে বাঁচাতে চাইছে। তাদের যুক্তি, আইপিএল থেকেই বোর্ডের আসল লাভ। এতটাই লাভ যে, করোনার সময় বোর্ড আইপিএল আয়োজন করার পিছনে প্রচুর পরিশ্রম করলেও রঞ্জি ট্রফি আয়োজন করতে পারেনি। একটি বছর ঘরোয়া ক্রিকেটের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাটাই খেলতে পারেননি জয়দেব উনাদকটরা।
ভারতের পরিকাঠামো নিয়ে বাংলা কী বলছে
বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “ভারতীয় বোর্ড বাকিদের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে কি না সেটা এখনই বলা মুশকিল। তবে কিছু জায়গায় উন্নতি করেছে তো অবশ্যই। আগে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগ ছিল, আইপিএল আসার পর সারা বিশ্বের ক্রিকেটারেরা ভারতের এই টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে বেশি আগ্রহী। সেই সঙ্গে রয়েছে মেয়েদের আইপিএলও। অন্য দিকে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রাক্তনদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করেছে। সেটা খেলা ছাড়ার পরেও বোর্ড যে ক্রিকেটারদের পাশে রয়েছে, তার প্রমাণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় বোর্ডকে বাকি দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলি অনুসরণ করে। আইসিসিতেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একটা দাপট রয়েছে। ভারতীয় বোর্ডের হাতে যে পরিমাণ অর্থ রয়েছে, সেটাও বাকি বোর্ডগুলির কাছে নেই।” সদ্যসমাপ্ত দলীপ ট্রফিতে ভারত বি দলের কোচ ছিলেন সৌরাশিস লাহিড়ী। বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ তিনি। সৌরাশিস বললেন, “ক্রিকেটার তুলে আনার ক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড খুব ভাল পদক্ষেপ করেছে। গত মরসুমে যে ভাবে অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং বোর্ড ক্রিকেটারদের স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে, সেটা দুর্দান্ত। দলীপ ট্রফিতে প্রথম সারির ক্রিকেটারেরা খেলায় প্রতিযোগিতার মান উন্নত হয়েছে। সকলের মধ্যে টেস্ট দলে সুযোগ করে নেওয়ার তাগিদ দেখা গিয়েছে। সেটার জন্য সকলেই দলের হয়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আগামী দিনে এটার ফল পাবে ভারতীয় ক্রিকেট। অনেক নতুন ক্রিকেটার উঠে আসবে। শুধু আইপিএল নয়, টেস্ট খেলার জন্যেও লড়বেন তরুণ ক্রিকেটারেরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy