ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব ও আইসিসির হবু চেয়ারম্যান জয় শাহ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে সভাপতি হিসাবে রজার বিন্নীর মতো বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার রয়েছেন। তবু বোর্ড চলে জয় শাহের নির্দেশে। বিশেষ করে আর্থিক বিষয়ে। জয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র। শোনা যাচ্ছে আগামী দিনে জয় আইসিসিতে চলে যাওয়ার পর বোর্ডের দায়িত্ব পেতে পারেন বিজেপির এক প্রাক্তন মন্ত্রীর ছেলে। তাঁকেই বোর্ড সভাপতি করা হতে পারে। অর্থাৎ, ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসন নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থার মাথাতেও যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বিজেপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ রয়েছে।
ক্রিকেট প্রশাসনে নজর কেন?
কারণ একটাই, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এবং বিপুল অর্থ। এখন যার মূল উৎস আইপিএল। এই কোটিপতি লিগ এখন নিজেই একটা শিল্প। আর্থিক সাফল্যের কারণে গোটা বিশ্বের কাছে ঈর্ষার বিষয়। ঘটনা হল প্রথমে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বুঝতেই পারেনি যে আইপিএল সোনার ডিম পাড়া হাঁস। বুঝেছিলেন শুধু এক জন। তিনি ললিত মোদী। এখন ভারতীয় ক্রিকেটে ব্রাত্য। বলেই দেওয়া যায় আইপিএলের এই সাফল্য অন্য কোনও দেশে হওয়া অসম্ভব। কারণ অন্য দেশে ভারতের মতো এত জনসংখ্যা নেই। এ দেশে ক্রিকেটের যে জনপ্রিয়তা সেটাও অন্য দেশে নেই। ক্রিকেটই একমাত্র যা গোটা দেশকে এক করে দিতে পারে। ভারতে ক্রিকেট ধর্ম। এই কারণে ক্রিকেট, আরও স্পষ্ট করে বললে আইপিএলে বিজ্ঞাপনদাতা এবং স্পনসরেরা আগ্রহী হয়। ক্রিকেট এবং আইপিএলই তাদের বার্তা কোটি কোটি ভারতবাসীর কাছে পৌঁছে দেয়। রাজনৈতিক দল এবং নেতারাও এই ক্রিকেট-ধর্মের বাইরে নিজেদের রাখতে চান না। শুধু অর্থ নয়, ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ক্ষমতার সম্প্রসারণ, জনসংযোগও অনেক সহজেই করা যায়।
বিশ্ব জুড়ে আইপিএলের মাহাত্ম্য
আইপিএলের মাহাত্ম্য এতটাই যে ফাইনান্সিয়াল টাইমসের মতো সংবাদপত্র, যারা খেলাধুলোর প্রতিবেদন প্রকাশ করে না, তারাও আইপিএলের সাফল্যের গল্প ছাপে। এ রকমও শোনা যায় মাইক্রোসফ্ট ‘ওপেনএআই’ চুক্তি স্বাক্ষর করতে দেরি করেছিল কারণ সংস্থার কর্ণধার সত্য নাদেল্লা সেই সময় ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিলেন!
ন’বছর আগে আফগানিস্তানের হয়ে অভিষেক হয়েছিল রাশিদ খানের। তিনি ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, সংযুক্ত আমিরশাহি এবং ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টি লিগে নিয়মিত খেলেন। বিশ্ব জুড়ে যে ক্রিকেট লিগ চলে তার ফসল ২৬ বছরের এই ক্রিকেটার। আর এই ক্রিকেট লিগগুলির জন্মদাতা বলা যায় আইপিএলকে।
আইপিএলের হাত ধরে ভারতের আর্থিক উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রের মোদী সরকার সাহায্য করছে আইপিএলকে। ফলে ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী ভারত। ক্রিকেট থেকে বিসিসিআই বিরাট পরিমাণ অর্থ আয় করে। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট সংস্থাগুলি আইসিসির মাধ্যমে যে টাকা পায়, তার অনেকটাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কারণে। এই বছরের শেষে সেই আইসিসির চেয়ারম্যান হবেন জয়। অমিত-পুত্রের হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উন্নতি হয়েছে। আইপিএল থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ আয় করেছে বিসিসিআই। আর এই আইপিএলের হাত ধরে বহু বিদেশি ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন আন্তর্জাতিক তারকা।
আয়ের নিরিখে আইপিএল বিশ্বে তৃতীয়
আন্তর্জাতিক স্তরে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে আয়ের নিরিখে আইপিএল বিশ্বে তৃতীয় স্থানে। ক্রিকেটের আর কোনও প্রতিযোগিতা সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে এই পরিমাণ আয় করতে পারে না। সাধারণত ফুটবল এবং আমেরিকান ফুটবলই এই তালিকায় দাপট দেখায়। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও নিক হকলি বলেন, “সকলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আইপিএল। আমার মনে হয় সকলের আগ্রহ রয়েছে বলেই এর উন্নতি হচ্ছে।”
আইপিএলকে নকল করে আরও অনেক দেশ টি-টোয়েন্টি লিগ শুরু করেছে। তারাও চেষ্টা করছে আইপিএলের মতো দ্রুত এবং জমাটি ক্রিকেট আয়োজন করতে, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করবে। সেই সব লিগের কোনওটির মালিক অম্বানী, কোনওটির গ্লেজ়ার পরিবার। সত্য নাদেল্লাও জড়িত আমেরিকার টি-টোয়েন্টি লিগে।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড তৈরি করেছে ‘দ্য হান্ড্রেড’। তারা আইপিএলের ধাঁচে আট দলের মধ্যে নিলাম করে ক্রিকেটার নেওয়ার পদ্ধতি চালু করতে পারে। ইসিবির কর্তারা মনে করছেন, সেটা প্রতিযোগিতার আকর্ষণ বৃদ্ধি করবে এবং বোর্ডের আয় পৌঁছে দিতে পারে প্রায় ৪৭০০ কোটি টাকায়। ইসিবি এবং অন্য বোর্ডগুলি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে চাইছে। ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সে ক্রিকেট থাকতে পারে। ১৯০০ সালের পর আবার অলিম্পিক্সে হতে পারে ক্রিকেট। সেই কারণেই বিভিন্ন দেশ টি-টোয়েন্টি লিগের মাধ্যমে জনপ্রিয়তাকে ছুঁতে চাইছে।
টেস্ট ক্রিকেট কি টিকে থাকতে পারবে?
বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগ নতুন নতুন সমর্থক তৈরি করেছে। রাশিদের মতো ক্রিকেটারদের চিনিয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতকে ক্রিকেটের সুপারপাওয়ার তৈরি করে দিয়েছে। আগামী দিনে কী হবে তা নিয়েও বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তুলেছে।
অনেকের ধারণা আইপিএল এবং অন্য দেশের টি-টোয়েন্টি লিগ যে ভাবে ক্রিকেটার, অর্থ এবং সংবাদমাধ্যমের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে তাতে আগামী দিনে লাল বলের ক্রিকেট কৌলীন্য হারাবে।
অন্য দেশের টি-টোয়েন্টি লিগ লড়াইয়ে থাকবে?
কিন্তু অনেকের মতে ক্রিকেটের যে চাহিদা তা অতিক্রম করে গিয়েছে এই টি-টোয়েন্টি লিগগুলি। আর আইপিএলের ছায়ায় বেড়ে ওঠা লিগগুলি সেই কারণেই সাফল্য পাচ্ছে না। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সিইও রিচার্ড গল্ড বলেন, “গত বছর ক্রিকেটে ১৭টি লিগ হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। সেই সব লিগ আগামী দিনে টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমার মনে হয় টিকবে না। আমাদের সেই দিকে নজর দিতে হবে, যাতে আমরা ওই বাতিলের তালিকায় নাম না লেখাই।”
কেন আইপিএল আকর্ষণীয়
২০০৮ সালে শুরু হয় আইপিএল। যা মাঠে এবং মাঠের বাইরে ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছে। টি-টোয়েন্টি তৈরি হয়েছিল টিভির দর্শকদের জন্য। পাঁচ দিন বা সারা দিন নয়, মাত্র তিন বা চার ঘণ্টায় ম্যাচের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। যা নতুন দর্শকদের আকর্ষণ করেছে। কম সময়ে খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে ম্যাচের আকর্ষণ তৈরি হয় খেলার ধরন নিয়েও। সঙ্গে ছিল চিয়ারলিডার, গান এবং আতশবাজির প্রদর্শনী।
২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হয়েছিল ৫২ হাজার কোটি টাকায়। সেখানে যুদ্ধ ছিল ডিজ়নি এবং মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্সের মধ্যে। সেটাই আইপিএলকে বিশ্বের দ্বিতীয় মূল্যবান করেছে ম্যাচ প্রতি টাকার হিসাবে। আমেরিকার ফুটবল লিগের ম্যাচ সবচেয়ে উপরে। আইপিএলের চেয়ারম্যান অরুণ সিংহ ধুমল বলেন, “আইপিএলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটা হল ক্রিকেটের মান। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারেরা এই লিগে খেলে। আন্তর্জাতিক এবং ভারতীয় ক্রিকেটারদের মিশ্রণ থাকে। তারকা এবং উঠতি ক্রিকেটারদের দেখতে পাওয়া যায়। সেটাই এই প্রতিযোগিতাকে এতটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে।”
আইপিএলের জোরে ভারত টেক্কা দিচ্ছে অন্য দেশগুলিকে
আইপিএলের আর্থিক উন্নতি সামগ্রিক ভাবে ক্রিকেটের আর্থিক উন্নতি করেছে। আইসিসি জানিয়েছে ভারতে এক দিনের বিশ্বকাপ হওয়ার কারণে গত বছর আয় হয়েছে প্রায় ৭০২০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস যে এক দিনের বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল, তাতে আয় হয়েছিল ৫৩৪৭ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে আইপিএল আসার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে যে বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে আয় হয়েছিল ২৩৯৩ কোটি টাকা।
আইসিসি প্রতি বছর লাভের অংশ ভাগ করে দেয় বিভিন্ন ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড পেয়েছে ৪০ শতাংশ। সেখানে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে ৬ শতাংশ করে। যে বোর্ড বেশি আয় করে, সেই বোর্ড লাভের অংশ বেশি পায়। আইপিএলে ভর করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যা আয় করে, তা অন্য কোনও দেশ পারে না। ইংল্যান্ডের গল্ড বলেন, “কোনও দেশ আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারেনি। ভারতে গিয়ে বিজ্ঞাপন বোর্ডের দিকে তাকালে হয় কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দেখা যাবে, নয় কোনও ক্রিকেটারকে। ক্রিকেটই ভারত এবং ভারতই ক্রিকেট।”
আইপিএল বদলে দেবে ক্রিকেটের চেহারা
আইপিএলের বিভিন্ন দলের মালিকেরা অন্য দেশগুলিতেও দল কিনছেন। তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছে ইংল্যান্ডের ‘দ্য হান্ড্রেড’ নিয়েও। গোটা বিশ্ব জুড়ে তৈরি হওয়া এই আগ্রহের কারণে আইপিএলের দলগুলির গোটা বছর ক্রিকেটার ধরে রাখার ভাবনাও রয়েছে । তেমন হলে ক্রিকেটও আগামী দিনে রূপ বদলাবে। ফুটবলের মতো সারা বছর বিভিন্ন দেশে লিগ চলবে আর কমে যাবে দেশ বনাম দেশের লড়াই। উদাহরণ, আন্দ্রে রাসেল। তিনি আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলেন। আবার আবু ধাবি এবং লস অ্যাঞ্জলস দলের হয়ে খেলেন। সেই দল দু’টিরও মালিক নাইট রাইডার্স।
রাজস্থান রয়্যালসের অন্যতম মালিক মনোজ বাদালে বলেন, “বিভিন্ন দেশে দল থাকলে আমাদের সমর্থকদের সারা বছর আনন্দ দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে সাপোর্ট স্টাফ এবং দলের বাকিদের আন্তর্জাতিক স্তরে সারা বছর কাজ করার সুযোগ থাকে।” রাজস্থান রয়্যালসের মালিকদের আইপিএল ছাড়াও দল রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে।
লড়াইয়ে পারছে না অন্য লিগ
২০২১ সালে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড নিয়ে আসে ‘দ্য হান্ড্রেড’। টি-টোয়েন্টির থেকেও ছোট করা হয় প্রতিযোগিতাকে। ১০০ বলে খেলা হয়। ম্যাচগুলিকে তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতায় ছেলে এবং মেয়েদের দল একই দিনে পর পর ম্যাচ খেলে। নতুন দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করার জন্যই এই ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। ২০২৩ সালে আইপিএল দেখেছিলেন ৫০ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ। সেখানে গত বছর হান্ড্রেডের দর্শকসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ। ২০৩২ সাল পর্যন্ত যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আয়ের ধারেকাছেও নেই হান্ড্রেড। শুধু টিভির সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেই আইপিএল ৯২০৪ কোটি টাকা আয় করতে পারে। সেখানে হান্ড্রেডের মোট আয় হতে পারে ১৪৫৪ কোটি টাকা। যদিও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট কর্তারা আশাবাদী ভারত এবং আমেরিকার ব্যবসায়ীরা হান্ড্রেডে বিনিয়োগ করবেন। আর আইপিএলের মালিকেরা হান্ড্রেডে দল কিনলে ভারতেও এই প্রতিযোগিতা আকর্ষণ তৈরি করবে বলে মনে করছেন ইসিবি কর্তারা।
ল্যাঙ্কাশায়ার ক্রিকেট ক্লাবের সিইও ড্যানিয়েল গিডনি বলেন, “সকলে আইপিএলের সাফল্য দেখেছে। সেটা অস্বাভাবিক সাফল্য। বিশেষ করে সম্প্রচার স্বত্বের দিক থেকে। আমেরিকা এবং ভারতের বিনিয়োগকারীরা নিশ্চয়ই ক্রিকেট হেরিটেজের প্রতি আকর্ষিত হবেন। ইতিমধ্যেই অনেকে আগ্রহ দেখিয়েছে।”
আইপিএলের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে ভারতের বিপুল জনসংখ্যা। নাইট রাইডার্সের ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য বলেন, “আইপিএল বিরাট একটা দৈত্য। অন্য দেশের লিগগুলো এর ধারেকাছে নেই। কোনও লিগ এই মুহূর্তে আর্থিক ভাবে লাভ করতে পারছে না। আইপিএল ছাড়া আর কোথায় টি-টোয়েন্টি লিগে টাকা রয়েছে? এই প্রশ্নটাই অবান্তর।”
আইপিএল থেকে ক্রিকেটারেরা যে পরিমাণ আয় করেন, সেটাও অন্য লিগ থেকে সম্ভব নয়। ফলে আইপিএল খেলার জন্য ক্রিকেটারদের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা যায়, সেটা অন্য লিগের জন্য নেই। গল্ড বলেন, “আইপিএল বাদ দিয়ে বাকিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে হবে আমাদের। সেটা না হলে ক্রিকেটারদের আকর্ষণ থাকবে না।” সমস্যা রয়েছে সূচি নিয়েও। কোনও লিগই বেশি বড় করা সম্ভব নয়। তা হলে আন্তর্জাতিক সূচিতে সমস্যা হবে। উল্লেখ্য, আইপিএলের কথা মাথায় রেখেই আন্তর্জাতিক সূচি তৈরি করা হয়।
কোহলিদের বিদেশের লিগে খেলার অনুমতি নেই
ভারতীয় ক্রিকেটারদের আইপিএল ছাড়া অন্য কোনও দেশের লিগে খেলার অনুমতি দেওয়া হয় না। আইপিএলের আকর্ষণ ধরে রাখার এটা অন্যতম কারণ। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা অন্য দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে খেললে ভারতীয় দর্শকেরাও সেই লিগ নিয়ে আগ্রহী হবেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার ম্যাথু হুইলার বলেন, “বেশির ভাগ দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে ব্যবসায়ীরা দল কিনেছে ক্রিকেট ভালবাসে বলে। এটার মধ্যে একটা মানসিক আনন্দ আছে। আইপিএলের বাইরে কতগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি আছে যারা লাভ করার জন্য দল কিনেছে? আমার মনে হয় না খুব বেশি পাওয়া যাবে।”
২০২৮ সালের অলিম্পিক্সে থাকতে পারে আইপিএল। সেই কারণে আইপিএলকে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে ক্রিকেটের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হবে। যদিও ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের উত্থান ভয় ধরাচ্ছে বাকিদের। ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ় বন্ধ। পাকিস্তান খেলতে চাইলেও ভারত রাজি হয়নি বলে বন্ধ। আইপিএলেও খেলতে দেওয়া হয় না পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের। এমনকি গত বছর এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যায়নি ভারত। যদিও পাকিস্তান বিশ্বকাপ খেলার জন্য ভারতে এসেছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে আগামী বছর ভারত যাবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নজম শেঠী বলেন, “ভারত এতটাই শক্তিশালী যে তারা ইচ্ছা করলেই যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা দেশের হয়ে খেলতে চাইছে না। কারণ পাকিস্তানের হয়ে খেলে বেশি টাকা পাওয়া যায় না। তারা চাইছে বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগগুলোয় খেলতে।”
ডিজ়নি এবং রিলায়্যান্সের সংযুক্তির প্রভাব
আইপিএলের রমরমার মধ্যেও একটা অশনি সঙ্কেত দেখছে ভ্যালুয়েশন সংস্থা ডি অ্যান্ড পি অ্যাডভাইসরি। তাদের মূল্যায়ণ অনুযায়ী এই বছর আইপিএলের দাম ১১২০ কোটি ডলার থেকে কমে ৯৯০ কোটি ডলার হয়ে গিয়েছে। অতিমারির সময়টা বাদ দিলে এই প্রথম আইপিএলের দর কমেছে। সম্প্রচার স্বত্বের দাম প্রত্যাশিত ভাবে কমে যাওয়ার জন্যই এই পতন। সম্প্রচার স্বত্বের দাম কমে যাওয়ার কারণ ডিজ়নি এবং রিলায়্যান্সের মিশে যাওয়া। এত দিন আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব পাওয়ার জন্য এই দুই সংস্থার মধ্যে লড়াই ছিল। আইপিএলের দরও বাড়ছিল। কিন্তু এখন যে হেতু একটিই সংস্থা, তাই একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণও শুধু তাদের হাতেই থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটের অস্তিত্ব নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
প্রশ্নটা আরও বেশি করে তৈরি হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই ফুলেফেঁপে ওঠার কারণে আগামী দিনে লাল বলের ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ কি কমে যাবে? হুইলার বলছেন, “ক্রিকেটে এখন অনেক ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। সঠিক ভারসাম্য খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy