বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
ফর্মে থাকুন বা না থাকুন, রান পান বা না পান, দলকে ট্রফি দিতে পারুন বা না পারুন, বার বার বিরাট কোহলির অন্য দিক প্রকাশ্যে চলে আসছে। বার বার সমালোচিত হতে হচ্ছে মানুষ বিরাটকে। এ বার তাঁকে নিয়ে মুখ খুললেন অমিত মিশ্র। ভারতের এই প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতে, মানুষ হিসাবে বিরাট এখন বদলে গিয়েছেন। বিরাটের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন রোহিত শর্মাকে।
বিরাট এবং রোহিত, দু’জনের সঙ্গেই খেলেছেন মিশ্র। ভারতের হয়ে ২২টি টেস্ট খেলা এই ক্রিকেটারের মতে, বিরাট যত খ্যাতিলাভ করেছেন, ততটাই বদলে গিয়েছেন। এখন বিরাটের সঙ্গে কথাই বলেন না তিনি। তাঁর মতে, রোহিত আগের মতোই আছেন। ইউটিউবে মিশ্র বলেন, “মিথ্যে বলব না, ক্রিকেটার হিসাবে বিরাটকে সম্মান করি। কিন্তু ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আর আগের মতো নেই।’’
রোহিতের সঙ্গে তুলনা করে মিশ্র প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বিরাটের বন্ধু এত কম কেন?’’ তিনি বলেন, ‘‘রোহিত আর বিরাট দু’ধরনের মানুষ। রোহিতের সঙ্গে প্রথম যে দিন দেখা হয়েছিল, তখন যে রকম ছিল এখনও সে রকমই আছে। এটাই ওর সব থেকে ভাল দিক। আপনারাই বলুন, এমন এক জন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগবে, না কি যে পরিস্থিতি অনুযায়ী পাল্টে যায়, তার সঙ্গে?”
বিরাট দিল্লির বাসিন্দা। অমিতও সেখান থেকেই উঠে এসেছেন। বিরাটের থেকে ছ’বছরের বড় তিনি। মিশ্রর রাজ্য হরিয়ানা হলেও ছোটবেলা থেকে দেখেছেন বিরাটের উত্থান। রাজ্য, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে সিনিয়র দলে প্রবেশ— বিরাটের প্রতিটি উন্নতির সাক্ষী ছিলেন মিশ্র। বিরাটের নেতৃত্বে ভারতীয় দলে খেলেছেন। তিনি বলেন, “আমি বিরাটকে বদলে যেতে দেখেছি। আমাদের এখন আর কথাই হয় না। যখন মানুষ যশ, খ্যাতিলাভ করে, তখন মনে করে অন্যরা তাঁর কাছে সেটার লোভেই কথা বলতে চাইছে। আমি কখনও সেটা করিনি। চিকুকে (বিরাট এই নামেই পরচিত) আমি চিনি ১৪ বছর বয়স থেকে। শিঙাড়া খেত। রোজ রাতে পিৎজ়া খেত। সেই চিকুর সঙ্গে অধিনায়ক বিরাট কোহলির তফাত অনেক। আমার সঙ্গে দেখা হলে সম্মান দেয়। কিন্তু আগের মতো সেই সম্পর্কটা আর নেই।”
এর পর মিশ্র যা বলেছেন, তাতে ভারতীয় দলের নতুন কোচ গৌতম গম্ভীর ও বিরাটের একসঙ্গে সাজঘরে কাটানোটা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইপিএলে ২০২৩ সালে লখনউ সুপার জায়ান্টসের তৎকালীন মেন্টর গম্ভীরের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরাটের। আইপিএলে লখনউ সুপার জায়ান্টসের সঙ্গে খেলার সুবাদে মিশ্র খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন সেই ঘটনা। ২০২৪ সালে সেই সমস্যা মিটে যায়। অমিত জানান, সমস্যা মেটানোর জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন গম্ভীর। কিন্তু বিরাট বরফ গলাতে চাননি। ভারতীয় লেগ স্পিনার বলেন, “গম্ভীর তখন খুবই ভাল কাজ করেছিল। বিরাটকে জিজ্ঞেস করেছিল, ওর পরিবার কেমন আছে? সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছিল গম্ভীরই। কিন্তু বিরাট এগিয়ে যায়নি। গম্ভীর ওর বড় হৃদয়ের প্রমাণ দিয়েছিল। কিন্তু বিরাটের এগিয়ে গিয়ে গম্ভীরকে বলা উচিত ছিল, গৌতি ভাই, চলো সমস্যা মিটিয়ে নিই।”
কী হয়েছিল বিরাট এবং গম্ভীরের মধ্যে? মিশ্র বলেন, “বিরাট আমাদের ক্রিকেটারদের কটূক্তি করছিল। কাইল মেয়ার্স, নবীন উল হকের সঙ্গে ওর কিছু সমস্যা হয়েছিল। বার বার কটূক্তি করছিল। এমন কিছু অঙ্গভঙ্গি করছিল যা দর্শকদের তাতিয়ে দিয়েছিল। কিছু জিনিস অনায়াসে এড়িয়ে যেতে পারত ও। কিন্তু বিরাট সেটা করেনি।”
নবীন ব্যাট করার সময় উল্টো দিকে ছিলেন মিশ্র। তাঁর দাবি, তিনি বিরাটকে বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন। বলেন, “নবীন আর আমি ব্যাট করছিলাম। বিরাটকে বলেছিলাম, ‘নবীন তো চুপ করে আছে। তুমিই কথা বলে যাচ্ছ। তুমি তো ওর থেকে সব দিক দিয়ে বড় ক্রিকেটার। নবীন যদি কোনও খারাপ ব্যবহার করেও থাকে, তোমার তো বুঝে ব্যবহার করা উচিত। সচিন (তেন্ডুলকর) বা ধোনিকে এত মানুষ ভালবাসে কারণ, ওরা তরুণ ক্রিকেটারদের সম্মান দেয়। আমি জানি তুমি আগ্রাসী। তাই বলে এ সব করা উচিত নয়। নবীনের সঙ্গে তর্ক করা মানে তোমার নিজেরই নিজেকে অপমান করা।”
ম্যাচ শেষেও থামেননি বিরাট। তখনও তর্ক করছিলেন। সেই সময় গম্ভীরই এগিয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন মিশ্র। তিনি বলেন, “ম্যাচ শেষেও বিরাট কটূক্তি করায় রেগে গিয়েছিল গম্ভীর। আমি গম্ভীরের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। বিরাটের ব্যবহারে আমিও রেগে গিয়েছিলাম।”
ভারতীয় দলে বিরাটের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মিশ্র বলেন, “এক বার ভারতীয় দলের প্র্যাকটিসে বিরাট বলেছিল ওর সঙ্গে ফিটনেস ট্রেনিং করতে। আমি বলেছিলাম, ভারী ওজন তুলব না। শুধু দৌড়নোর জন্য রাজি ছিলাম। আমি সেই সময় ফিট ছিলাম। কিন্তু তার পরেই চোট পাই। আমার সঙ্গে আর সে ভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। শুধু বলা হয় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে। আমি সেটাই করি। ১৬-১৭টা উইকেট তুলে নিই। তার পরেও ভারতীয় দলে সুযোগ পাইনি। নির্বাচকদের ফোন করি। কিন্তু আমাকে কেন বাদ দেওয়া হল, তার ঠিক মতো উত্তর পাইনি। আমি তখন বিরাটকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করি। ও বলে, আমাকে জানাবে। কিন্তু কখনও কিছু জানায়নি।”
দেশের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনারের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার সংক্ষিপ্ত। ২২টি টেস্ট, ৩৬টি এক দিনের ম্যাচ এবং ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলেই থেমে যেতে হয়েছে মিশ্রকে। ১৫৬টি আন্তর্জাতিক উইকেট নেওয়া স্পিনারের জায়গায় সুযোগ পান বাঁহাতি কুলদীপ যাদব। আর সুযোগ না পাওয়ার জন্যও বিরাটকে দায়ী করেছেন অমিত।
বিরাটের আচরণ নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন উঠেছে। কখনও প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা প্রশ্ন তুলেছেন। কখনও তাঁকে নিয়ে সতীর্থেরা যে অখুশি, সে তথ্যও প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে একে একে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নেতৃত্ব ছেড়ে দেন বিরাট। সেই সময় তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরাটের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy