পর্যবেক্ষণ: বাইশ গজ কেমন হল? মঙ্গলবার অনুশীলনের ফাঁকে কোচ দ্রাবিড়ের সঙ্গে অধিনায়ক রোহিত। ছবি: রয়টার্স।
জানুয়ারির হায়দরাবাদে বিরিয়ানির পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে আরও একটি লোভনীয় পদ। সন্ধের পর থেকে হাল্কা ঠান্ডা হাওয়া দিলেই হালিম খাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। মূলত মাংসকে ভারী হাতুড়ি দিয়ে মেরে তার মন্ড তৈরি করা হয়। বিভিন্ন মশলা, ডাল দিয়ে বাড়ানো হয় স্বাদ। যা খেলে শীতবস্ত্রের দরকার হবে না।
ঠিক তেমনই, ইংল্যান্ডকে যদি নিজামের শহরে শুরুতেই ঘূর্ণির জালে জড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলে ‘বাজ়বল’ তাণ্ডবও ফিকে হয়ে যেতে সময় লাগবে না। এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা উপড়ানোর খেলা। ইংল্যান্ডের অস্ত্র ‘বাজ়বল’ ক্রিকেট। যা শুরু হয়েছে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার পরে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাও রয়েছেন আক্রমণাত্মক মেজাজেই। শুধু ব্যাট হাতে আক্রমণ নয়। ঘূর্ণির জালে জড়িয়ে বিপক্ষকে কোণঠাসা করে দেওয়ার খেলা দেখা যেতে পারে হায়দরাবাদে।
মঙ্গলবার রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সাংবাদিক বৈঠকে এসে কোচ রাহুল দ্রাবিড় ঘোষণা করে দিয়েছেন, অযথা রক্ষণাত্মক হওয়ার প্রয়োজন নেই। দলের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলেন। ইংল্যান্ডের বাজ়বলকে টেক্কা দিতে আক্রমণের পথেই হাঁটবেন রোহিত শর্মা-রা।
দ্রাবিড় বলছিলেন, ‘‘আমাদের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানের স্বাভাবিক ব্যাটিং ধরনই আক্রমণাত্মক। কিন্তু অযথা আক্রমণের প্রয়োজন নেই। যখন দরকার পড়বে, অবশ্যই আক্রমণাত্মক খেলবে ছেলেরা।’’ যোগ করেন, ‘‘মনে হয় না আমাদের দলের কোনও ব্যাটসম্যান প্রয়োজন ছাড়া রক্ষণাত্মক ক্রিকেট খেলবে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই দেখবেন।’’
বাজ়বল দেখার জন্য দ্রাবিড়ও বেশ উত্তেজিত। তবে এ-ও মানছেন, ভারতীয় পরিবেশে পরীক্ষার মধ্যে পড়তে পারে এই বিশেষ ধরনের ক্রিকেট। দ্রাবিড়ের কথায়, ‘‘এই পরিবেশ আমাদের সবচেয়ে ভাল করে চেনা। ওরাও বড় পরীক্ষার মধ্যে পড়বে। কারণ, আমাদের বোলিং বিভাগ অভিজ্ঞ। বাজ়বলের মোকাবিলা করতে আমাদের ক্রিকেটারেরা কোন পথে হাঁটে, তা দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।’’
কিন্তু হায়দরাবাদের পিচ কী রকম হতে চলেছে? আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার জন্য কি আদর্শ? কলকাতার মতো ঠান্ডা নেই হায়দরাবাদে। তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর্দ্রতা ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ ধরে নেওয়াই যায়, শুষ্ক পিচেই জো রুটদের পরীক্ষা নেবেন আর. অশ্বিনরা। বিকেলের দিকে পিচের পপিং ক্রিজ়ের আশেপাশেই শুধু জল দেওয়া হয়। গুড লেংথ থেকে বাকি পিচ শুকনো রেখে দেওয়া হয়। নেই একটিও ঘাস।
মঙ্গলবার অনুশীলন শুরু হওয়ার আগে রোহিতের সঙ্গে পিচ দেখে যান দ্রাবিড়। পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় দু’জনকেই। হায়দরাবাদের পিচে যে বল ঘুরবে, তা রোহিতদের অনুশীলনেই স্পষ্ট হয়ে উঠল। রিভার্স সুইপ ও সুইপের মহড়ায় নিজেদের ডুবিয়ে দিয়েছিলেন রোহিত, যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল, কে এল রাহুল। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়েও রিভার্স সুইপ করে রোহিতকে রান করতে দেখা গিয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে তিনি জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই রিভার্স সুইপের অনুশীলন করছেন। এ দিনের অনুশীলনে সেই ছবি আরও স্পষ্ট হল। নেট বোলার অফস্টাম্পের বাইরে বল করলেই রোহিত রিভার্স সুইপ মারতে চলে যাচ্ছিলেন। দু’বার আউটও হলেন। কিন্তু ঘূর্ণি পিচে দ্রুত রান করার যে এটাই অন্যতম পথ, তা যেন বুঝিয়ে দিলেন ভারতীয় অধিনায়ক।
নেটের পাশে একটি খোলা পিচে ব্যাট করতে যান যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল ও রাহুল। উইকেটকিপার যেখানে দাঁড়ান, সেখানে স্টাম্প পোঁতা হয়। কারণ সেই জায়গায় তৈরি হয়েছিল ক্ষত। স্পিনারদের সামলানোর জন্য ক্ষতের উপরে বারবার বল করতে বলা হয় নেট বোলারদের। ক্ষতে পড়ে কোনও বল আচমকা লাফিয়ে উঠে বেরিয়ে যাচ্ছে। কোনও বল সোজা চলে আসছে ব্যাটে। ঘূর্ণি পিচে জড়তা কাটানোর জন্যই এই বিশেষ অনুশীলন চলে উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের। চিনা সেনাধ্যক্ষ সুন জ়ু লিখেছিলেন, ‘‘শত্রুকে জানতে হলে, আগে নিজেকে শত্রুর জায়গায় বসিয়ে দেখো।’’ হতেই পারে ইংল্যান্ডের স্পিনাররাও সমস্যায় ফেলছেন শুভমনদের। সেই পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো যায়, তারই প্রস্তুতি চলল এ দিন।
স্পিনারদের মধ্যে অশ্বিনই সবচেয়ে বেশি সময় কাটান নেটে। অফস্পিনের পাশাপাশি ক্যারম বল ও লেগস্পিনে ধার বাড়াতে দেখা যায় তাঁকে। বুঝতে অসুবিধে হল না, ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষার মুখে ফেলার চেষ্টা করবেন। অক্ষর পটেল বেশিক্ষণ বল না করলেও কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাডেজা টানা এক ঘণ্টা বল করে যান নেটে।
স্পিনারদের মরিয়া মনোভাবই বুঝিয়ে দিচ্ছে এই সিরিজ়ের মাহাত্ম্য। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বেশ কিছুটা এগিয়ে যেতে হলে ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে হারাতেই হবে। দ্রাবিড় যদিও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে এখনই ভাবছেন না। বলছিলেন, ‘‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কথা ভেবে এই সিরিজ় শুরু করছি না। লক্ষ্য এই টেস্টে ভাল খেলা। আমরা একটি করে ধাপ এগোতে চাই। আপাতত এই টেস্ট নিয়েই ভাবছি। সিরিজ় শেষে কী ফল হবে, তা এখন থেকেই ভেবে চাপ বাড়ানোর দরকার নেই।’’
ব্যাকরণ মেনে যখন ব্যাট করতেন, তাঁর নিখুঁত শট চোখে লেগে থাকত সমর্থকদের। কোচ হিসেবে একই রকম নিখুঁত তাঁর মানসিকতা। ‘বাজ়বল’ যদি ভয়ঙ্কর রূপ নেয়, ‘দ্রাবিড়বল’ কি ছেড়ে কথা বলবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy