Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jonny Bairstow

Jonny Bairstow: বাবার আত্মহত্যা, ঘাত-প্রতিঘাত, নিজেকে বদলে ফেলেই সফল বেয়ারস্টো

বহু অভিজ্ঞতা রয়েছে জীবনে। দেখেছেন বহু জিনিস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুধরে নিয়েছেন নিজেকে। আর তাতেই সাফল্য ধরা দিয়েছে বেয়ারস্টোর কাছে।

কী ভাবে উঠে এলেন বেয়ারস্টো

কী ভাবে উঠে এলেন বেয়ারস্টো ছবি রয়টার্স

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২ ১৭:২৭
Share: Save:

গত চার টেস্ট ইনিংসে তিনটি শতরান। টানা তিনটি টেস্টে তিন অঙ্কের রান। আগুনে স্ট্রাইক রেট। ব্যাটে ছয়ের বন্যা। টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়েছেন জনি বেয়ারস্টো। ইংরেজ এই ব্যাটারের কাছে টেস্ট ক্রিকেট আর ঠুকঠুক করে খেলা নয়, পাল্টা মারের খেলা। কঠিন বল হলে রক্ষণ, মারার বল হলে মার, বেয়ারস্টো বিশ্বাস করেন এই মন্ত্রেই। আর তাতেই এসেছে সাফল্য। গোটা বিশ্ব এখন অনুসরণ করছে তাঁকেই।

ইংরেজ ব্যাটারের ক্রিকেটজীবনের শুরুটা মোটেই এ রকম ছিল না। দশ বছর আগে প্রথম বার টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নেমেই পড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগুনে বোলিংয়ের সামনে। কেমার রোচ, ফিডেল এডওয়ার্ডসের গোলাগুলির মতো ছুটে আসা বল কখনও বুকে, কখনও পেটে খাচ্ছিলেন। শর্ট বলের বিরুদ্ধে দুর্বলতা প্রথম টেস্টেই ধরা পড়েছিল। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ডেল স্টেন, মর্নি মর্কেলরাও তাঁর মাথা লক্ষ্য করে বল করছিলেন। দু’বছর পরে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও একই সমস্যা। দল থেকে দেড় বছরের জন্যে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। বেয়ারস্টো সেই প্রসঙ্গে এক জায়গায় বলেছেন, “মনের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন আসছিল। আমি কি কাউন্টিতে খেলার যোগ্য? দেশের হয়ে খেলার যোগ্য নই? নাকি মানুষকে ভুল প্রমাণ করে ফিরে আসাটাই আমার কাজ হবে?”

অ্যাশেজ থেকে ফিরে নিজের মেন্টর ইয়ান ডিউসকে ডাকেন বেয়ারস্টো। নেটে গিয়ে নাগাড়ে অনুশীলন শুরু করেন। নিজের ব্যাকলিফ্ট আরও উন্নত করার চেষ্টা করেন। আত্মজীবনী ‘আ ক্লিয়ার ব্লু স্কাই’-তে লিখেছেন, “আমি সোজা ব্যাটে খেলতে পছন্দ করি। মাথা এবং চোখ বলে রাখি। বলের পিছনে ছোটা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন ব্যাকফুটে খেলতেও আমি স্বচ্ছন্দ।” ডিউস বলেছেন, “ইন্ডোর ট্রেনিং করাচ্ছিলাম ওকে। বোলিং মেশিন থেকে বল বেরোচ্ছিল। এক বার এত জোরে বল মেরেছিল যে দেওয়ালে ফুটো হয়ে গিয়েছিল।”

২০১৭-র পার্থে আবার সামনে অস্ট্রেলিয়া। জস বাটলার চোট পাওয়ায় দলে দরজা খুলে যায় বেয়ারস্টোর। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের গড় গতি ছিল প্রায় ১৪৩ কিমি। বেয়ারস্টো শতরান করেন। তার পরে বলেছিলেন, “এখন নেটে গিয়ে পাঁচ মিনিট অনুশীলন করি। পুরনো দিনের ক্রিকেট খেলায় ফিরে গিয়েছি। কিছু কাট, কিছু ড্রাইভ, ব্যস। এখন অনেক বেশি রিল্যাক্সড। ছোটবেলার জনিতে ফিরে গিয়েছি, যে বল দেখে মারত। অনেকেই অনেক কথা বলবে। কখনও কখনও সেগুলো মনে ছাপ ফেলবে। এখন সব উড়িয়ে দিই।”

বেয়ারস্টোর ছন্দ নিয়ে প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সাবা করিম আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, “ওর ব্যাটে ইদানীং বিভিন্ন বৈচিত্র্য দেখতে পাচ্ছি। যদি প্রথম ইনিংসে ওর ব্যাটিং দেখেন, প্রথমে ও ৬০ বল খেলে ১১ রান করেছিল। এতেই বোঝা যায় ও কতটা দায়িত্ববান হয়ে উঠেছে। ক্রিজে এসে সময় নিচ্ছে। ও বুঝতে পেরেছিল যে বোলার ভাল বল করছে। এখন আক্রমণাত্মক খেলার দরকার নেই। অভিজ্ঞতা হলে এই বৈচিত্র্যগুলোই দেখা যায়। তা ছাড়া দলের থেকে যে সমর্থন পেয়েছে সেটাও ভাল খেলায় সাহায্য করেছে। প্রথম একাদশে থাকা নিয়ে ওকে চিন্তা করতে হয় না। স্বাধীন ভাবে খেলতে পারছে। এটাও ওকে সাহায্য করেছে।”

ক্রিকেটজীবনের মতো ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সয়েছেন তিনি। তাঁর যখন আট বছর বয়স, এক রাতে মা-বোনের সঙ্গে বাড়ি ফিরে দেখেন বাবা ডেভিডের ঝুলন্ত দেহ। মৃত্যুর আগেই ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন বাবা ডেভিড। বেয়ারস্টো পরিবার আজও জানে না কেন তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে স্ত্রী-র সঙ্গে নৈশভোজ করবেন বলে এক রেস্তোরাঁয় টেবিল বুক করেছিলেন।

মৃত্যুর দু’মাস আগে ডেভিডের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। তার পর থেকেই বেয়ারস্টো পরিবারে উথাল-পাথাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। আত্মহত্যা করা বাবার প্রতি এক সময় খুব রেগে গিয়েছিলেন বেয়ারস্টো। পরে বুঝতে পারেন, বাবার এই সিদ্ধান্ত হয়তো গোটা পরিবারকে বাঁচানোর জন্যেই। আট বছরেই মানসিক ভাবে অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিলেন বেয়ারস্টো। তাঁর আত্মজীবনীতে বাবার সঙ্গে সম্পর্কের কথা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বেয়ারস্টো। ছত্রে ছত্রে রয়েছে পিতা-পুত্রের পারস্পরিক স্নেহ-ভালবাসার কথা।

এক বার ভারত সফরে আসার পর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বেয়ারস্টো দেশে ফেরেন। সে যাত্রায় মা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। বেয়ারস্টোকে ছোটবেলা থেকে যিনি খেয়াল রেখেছিলেন, সেই ঠাকুর্দা ২০১৫ বিশ্বকাপের পরেই মারা যান। দুঃখে জর্জরিত থাকা অবস্থাতেও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করে সিরিজ জিতিয়েছিলেন বেয়ারস্টো।

মানসিক ভাবেও নিজেকে অনেকটা পাল্টে ফেলেছেন। আগে অন্যদের ছাপিয়ে যেতে চাইতেন। ছোটবেলার ক্লাব ক্রিকেটে এক সতীর্থ বিরাট ছক্কা মেরেছিল। পাল্টা বেয়ারস্টো নেমে তার থেকেও বেশি জোরে ছক্কা মারেন। ২০১৬-র কেপ টাউন টেস্ট তাঁর ধারণা পাল্টে দেয়। সে বার স্টোকসের সঙ্গে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। এমন মার মেরেছিলেন স্টোকস যে, বেয়ারস্টো বুঝতে পারেন সতীর্থের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে না। এর পর থেকেই তিনি নিজের মতো খেলা শুরু করেন। দলের কথা ভেবে খেলতে থাকেন। তার পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাননি।

বেয়ারস্টোর মানসিকতা এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি হাল ছাড়তে রাজি নন। হয়তো সে কারণেই আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘জীবন এগিয়ে যায়। তাকে এগোতেই হয়। কিন্তু সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে সুখ খুঁজে নেওয়া এবং যত দিন, যত ক্ষণ সম্ভব তাকে উপভোগ করা আমাদের আসল কাজ।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy