ব্যাটে-বলে দাপট হার্দিকের। ছবি: পিটিআই
তিন বলে দরকার ছয় রান। বল করছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলীকে আউট করা মহম্মদ নওয়াজ। উৎকণ্ঠায় দর্শকরা। কিন্তু তিনি শান্ত, পরিণত। অপর প্রান্তে থাকা দীনেশ কার্তিককে অধৈর্য হতে দেখে চোখের চাউনিতে বুঝিয়ে দিলেন, ‘আমি আছি। চিন্তা নেই।’ পরের বলটাই উড়ে গেল বাউন্ডারির বাইরে। ছক্কা মেরে ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন হার্দিক পাণ্ড্য। ব্যাটে-বলে ম্যাচের রাজা তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লজ্জার হারের বদলা নিল ভারত। এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারালেন রোহিত শর্মারা। প্রথমে বল করে বাবর আজমদের ১৪৭ রানে আটকে রাখে ভারত। বল হাতে হার্দিকের সঙ্গে জ্বলে উঠলেন ভুবনেশ্বর কুমার। ভুবনেশ্বর চার ও হার্দিক তিনটি উইকেট নিলেন। ব্যাট হাতে ৩৫ রান করলেন বিরাট কোহলী। দীর্ঘ দিন না খেললেও তাঁর ব্যাটে যে মরচে পড়েনি তা দেখালেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। মাঝে কিছুটা চাপে পড়লেও সেখান থেকে দলকে বার করলেন দুই অলরাউন্ডার জাডেজা ও হার্দিক।
ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে দলের ক্রিকেটারদের বাবর বলেছিলেন, ১০ মাস আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে খেলতে। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে সেটা দেখা গেল না। টসে জিতলেন রোহিত। নিলেন বল করার সিদ্ধান্ত। সেখানেই খানিকটা এগিয়ে গেল ভারত। দুবাইয়ের উইকেটের সাহায্য প্রথম ওভার থেকেই পাচ্ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। উইকেটে সাহায্য থাকলে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন তা আরও এক বার দেখালেন ভুবি। পাক ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ বাবরকেই হাত খুলতে দিলেন না তিনি। ১০ রানের মাথায় বাবরকে আউট করে তিনি পাকিস্তানের ব্যাটিংকে যে ধাক্কা দিলেন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন না রিজওয়ানরা।
বাবর আউট হওয়ার পরে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল রিজওয়ান ও ফখর জামানের। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে শতরান করা ফখর ফিরলেন ১০ রান করে। আবেশ খানের বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিকের কাছে যায়। আবেশ বা দীনেশ কেউ আবেদন করেননি। কিন্তু ফখর নিজে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। রিজওয়ানের সঙ্গে ইফতিকার জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন। দু’উইকেট পড়ে যাওয়ায় রানের গতি কিছুটা কমে যায়।
মাঝের ওভারে পাক ব্যাটিংকে ধসিয়ে দিলেন হার্দিক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি দলে ছিলেন। কিন্তু বল করতে পারেননি। হার্দিক সুস্থ থাকলে কতটা ভয়ঙ্কর তা এই ম্যাচে দেখা গেল। ২৮ রানে মাথায় ইফতিকারকে আউট করলেন তিনি। তার পরে এক ওভারে পর পর রিজওয়ান ও খুশদিলকে আউট করলেন তিনি। রিজওয়ান পাক দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করলেন।
শেষ দিকে বল করতে এসে পাক ব্যাটিংয়ের লেজা সাফ করে দিলেন ভুবনেশ্বর। তিনি শেষ করলেন চার ওভারে চার উইকেট নিয়ে। হার্দিক নিলেন চার ওভারে তিন উইকেটে। শেষ দিকে শাহনওয়াজ দাহানি দু’টি ছক্কা মারায় পাকিস্তানের রান ১৫০-র কাছে যায়। ১৯.৫ ওভারে ১৪৭ রানে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে ফিরলেন লোকেশ রাহুল। চোট সারিয়ে ফিরে তিনি যে এখনও ছন্দ পাননি তা বোঝা গেল তাঁর আউট হওয়ার ধরনে। নাসিম শাহর অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন তিনি। ছন্দে দেখাচ্ছিল না রোহিতকেও। কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেখান থেকে দলকে টেনে তুললেন কোহলী। পাওয়ার প্লে-তে বড় শট খেললেন। কয়েকটি শটে কোহলীর চিহ্ন আঁকা ছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলীর রেকর্ড খুব ভাল। দেখে মনে হচ্ছিল এই ম্যাচেও সেটা দেখা যাবে। কিন্তু স্পিনাররা বলে আসতেই ছন্দপতন।
অষ্টম ওভারে মহম্মদ নওয়াজকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে একটি বিশাল ছক্কা হাঁকান রোহিত। সেই ওভারে আবার বড় শট খেলতে গিয়ে ১২ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরলেন তিনি। এক ওভার পরেই নওয়াজের বলেই লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কোহলী। ৩৫ রান করলেন তিনি।
জাডেজাকে চার নম্বরে নামিয়ে চমক দেয় ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট। সূর্যকুমারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। জরুরি রান রেট ধীরে ধীরে বাড়ছিল। কিন্তু অহেতুক ঝুঁকি নিচ্ছিলেন না তাঁরা। স্কোরবোর্ড সচল রাখছিলেন।
শেষ ৩৬ বলে দরকার ছিল ৫৯ রান। বল করতে আসেন নাসিম। সূর্যকে ১৮ রানের মাথায় বোল্ড করে ভারতকে বড় ধাক্কা দিলেন তিনি। ভারতকে জেতানোর দায়িত্ব এসে পড়ে জাডেজা ও হার্দিকের কাঁধে। শেষ চার ওভারে দরকার ছিল ৪১ রান। পাকি ফিল্ডারদের গাফিলতিতে বাড়তি কিছু রান পায় ভারত। মন্থর বোলিংয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে ৩০ গজের ভিতরে এক জন অতিরিক্ত ফিল্ডার রাখতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। তাতে খানিকটা সুবিধা হয় ভারতীয় ব্যাটারদের। পায়ে ক্র্যাম্প ধরায় বল করতে সমস্যা হচ্ছিল নাসিমের। ওই ওভারেই একটি চার ও একটি ছক্কা মারেন জাডেজা।
শেষ দু’ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২১ রান। ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন হার্দিক। শেষ ওভারের প্রথম বলে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন জাডেজা। তাতে সমস্যা হয়নি। তিন বলে ছয় রান দরকার ছিল। ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন হার্দিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy