বিরাট কোহলি। — ফাইল চিত্র
বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে ভারতের হারের পর থেকেই হঠাৎ আলোচনায় চলে এসেছেন বিরাট কোহলি। ব্যাটিংয়ের জন্যে নয়, তাঁর অধিনায়কত্বের ধরনের জন্যে। কোহলি ভারতীয় দলের অধিনায়ক থাকার সময় যে আগ্রাসন দেখা যেত, রোহিত শর্মা এবং রাহুল দ্রাবিড়ের আমলে তা ফিকে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ‘অধিনায়ক’ কোহলিকে নিয়ে যতটা চর্চা হচ্ছে, ততটা হচ্ছে না ব্যাটার কোহলিকে নিয়ে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান যদি খতিয়ে দেখা যায়, তা হলে কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য। ক্রিকেটের ‘বিগ ফোর’-এর লড়াইয়ে কোহলি কেবল পিছিয়েই যাচ্ছেন। তাঁকে ছাপিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বাকিরা। কোহলির কাছে তা নিঃসন্দেহে চিন্তার কারণ।
এটা ঠিকই যে, কোহলির নেতৃত্বের একটা বড় অস্ত্র ছিল তাঁর আগ্রাসন। সম্পূর্ণ অন্য আবেগ থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতেন কোহলি। তাঁর অধীনে ভারত জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের ধরাশায়ী করেছে এবং ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য ক্রিকেট খেলেছে। ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংল্যান্ডকে বিপদে ফেলেছে। তাঁর সময়ে ভারত অন্য দেশে খেলতে গেলে সেই দেশই ভয়ে কাঁপত, যা এখন স্বপ্ন। কোহলি সেরাটা বের করে আনতেন সতীর্থদের থেকে। ৫৮টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৪০টি জয়ই সাফল্যের প্রমাণ দিচ্ছে।
ব্যাটার কোহলির পারফরম্যান্স অবশ্য বেশ নীচের দিকেই। অতীতে কোহলি বার বার বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা তাঁর কাছে অনেক বেশি। টেস্টই তাঁর কাছে ক্রিকেটের ‘আসল’ ফরম্যাট। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, টেস্টে তাঁর গড় ৫০-এর নীচে নেমে গিয়েছে। পাশাপাশি, বড় ম্যাচে কোহলির ব্যাট আর চলছে না। ফাইনালে হারের পর রাহুল দ্রাবিড় জানিয়েছিলেন, আধুনিক সময়ে টেস্ট ম্যাচের পিচ এবং পরিবেশ ব্যাটারদের বড় রান করতে দিচ্ছে না। কিন্তু দ্রাবিড়ের দাবি যে সঠিক নয়, তা বোঝা যায় বাকিদের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ বোলালে।
‘বিগ ফোর’-এ কোহলি ছাড়াও রয়েছেন ইংল্যান্ডের জো রুট, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন এবং অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ। ২০১৯ সালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ার পর থেকে ৩২টি ম্যাচ খেলেছেন কোহলি। রান ১৮৬৬, গড় ৩৬। মাত্র তিনটি শতরান রয়েছে। অন্য দিকে, ‘বিগ ফোর’ তালিকায় সবার উপরে থাকা রুট ৪৯টি ম্যাচ খেলে ৪২৮৬ রান করেছেন। কোহলির থেকে ১৭টি টেস্ট বেশি খেলেছেন। শতরান কোহলির থেকে আরও ১০টি বেশি। গড় ৫২.২৬। দায়িত্ব ছাড়ার পর তিনি ব্যাট হাতে আরও বেশি সক্রিয়। শ্রীলঙ্কা এবং ভারত সফরে ইংল্যান্ডের মূল অস্ত্র ছিলেন এই রুটই। একের পর এক শতরান করেছেন। অধিনায়ক হিসাবে খারাপ খেললেও, ব্যাটার রুটের ধারাবাহিকতায় কোনও প্রভাব পড়েনি।
চার বছর আগে অ্যাশেজে স্মিথ ৭৭৪ রান করেছিলেন। সদ্য বল বিকৃতি কাণ্ডের নির্বাসন কাটিয়ে দলে ফিরেই ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। বিশ্ব টেস্ট ফাইনালেও তাঁর শতরান ভারতকে কঠিন জায়গায় পৌঁছে দেয়। আটটি শতরান রয়েছে তাঁর এই সময়ে।
গড়ের ব্যাপারে সবার আগে উইলিয়ামসন। তাঁর গড় প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি। গত বারের বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে দু’টি ইনিংসেই অর্ধশতরান করেছিলেন। গত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে তাঁর আটটি শতরান রয়েছে, যার মধ্যে চারটি দ্বিশতরান।
বাকি তিনজনের তুলনায় কোহলি ধারেকাছে নেই। ফাইনালে দুই ইনিংসে ১৪ এবং ৪৯ রান করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের কঠিন সময়ে অকারণে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে গিয়ে আউট হন। কোহলি অতীতে বার বার বলেছেন, টেস্ট হোক বা আইপিএল, চোখধাঁধানো শট খেলার পক্ষপাতী নন তিনি। বরং আটকে থাকতে চান ‘কপিবুক’ ক্রিকেটীয় শটেই। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। কিন্তু ‘কপিবুক’ শটও কোহলিকে রান এনে দিতে পারছে না। গত বারের বিশ্ব টেস্ট ফাইনালেও তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে মোটে ৫৭ রান করেন।
এ ছাড়া, ২০২১-এ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে চার টেস্টে মাত্র ১৭২ রান করেন। ২০২১-২০২৩ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর মাত্র একটি শতরান রয়েছে। সেটাও মাসকয়েক আগে আমদাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। কোহলি বরাবরই বলেছেন, তিনি কখনও মাইলফলকের দিকে তাকিয়ে খেলেন না। নিজের দর্শন বজায় রাখতেই ভালবাসেন। কিন্তু তাঁর ব্যাটে রান থাকলে দলেরই ভাল হয়। তাঁর রানের খরা মানে সামগ্রিক ভাবে দলেরই ক্ষতি। কোহলিকে সেটা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে হবে।
ভারতীয় নির্বাচকেরা যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দল গড়ার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে কোহলিকে টিকে থাকতে গেলে বড় রান করতে হবে। না হলে প্রাক্তন অধিনায়কের উপরেও যে কোনও দিন কোপ পড়তে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy