Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Team India

গোড়াতেই গলদ! আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য পেতে হলে অস্ট্রেলিয়াই কি রোল মডেল ভারতের কাছে?

বিশ্বমঞ্চে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এর নেপথ্যে রয়েছে সঠিক রণনীতি এবং দলগঠনের নিখুঁত পরিকল্পনা। কী ভাবে ভারত শিখতে পারে তাদের থেকে?

australia

টেস্ট বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। ছবি: রয়টার্স

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ১৩:১১
Share: Save:

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সফল হতে গেলে ক্রিকেটখেলিয়ে যে কোনও দেশকে নির্ভর করতে হয় বেশ কিছু বিষয়ের উপরে। কখনও দল নির্বাচন, কখনও পরিস্থিতি বোঝা, কখনও প্রতিপক্ষের মান অনুযায়ী রণনীতি তৈরি করা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে প্রতিটি বিষয়েই ব্যর্থ হয়েছে ভারত। হারের ময়নাতদন্তে আরও অনেক কারণ উঠে আসতে পারে, যার সঠিক কোনও ব্যাখ্যা কারও কাছেই পাওয়া যাবে না। তবে হারের পিছনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি চোখে লেগেছে, তা হল দল গঠন। এই ব্যাপারে ভারতের শিক্ষক হতে পারে অস্ট্রেলিয়া, যাদের কাছে ফাইনালে হেরেছে ভারত।

দল নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত ছিল, কার জায়গায় কাকে খেলানো দরকার ছিল, কে বেশি প্রভাব ফেলতে পারতেন— সে সব নিয়ে অনেক আলোচনাই হয়েছে। কিন্তু সমস্যা যে গোড়াতেই। ফাইনালের জন্যে যে ১৫ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারতের সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্ক রাহানের মতো ক্রিকেটারকে দলে ফেরানো হয়, যাঁরা অনেক আগেই তিরিশের কোঠা পার করে ফেলেছেন। কাউন্টির তৃতীয় সারির বোলারদের পিটিয়ে শতরান করে জাতীয় দলে ফেরেন পুজারা। দু’টি আউট হওয়ার ধরন দেখেই বোঝা গিয়েছে জাতীয় দল থেকে তাঁকে ছেঁটে ফেলা সময়ের অপেক্ষা। রাহানের ক্ষেত্রে এতটাও রূঢ় হওয়া যাবে না। ভারতের হয়ে একমাত্র তাঁর ব্যাট থেকেই লড়াই দেখা গিয়েছে। কিন্তু আগামীর দিকে তাকাতে হলে রাহানে কখনওই ভারতের ‘ভবিষ্যৎ’ নন।

দল গঠন করতে গেলে নির্বাচকদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হয়, তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশেল। ভারতের নির্বাচকেরা মুখে বার বার এ ধরনের কথা বলে থাকেন বটে, কিন্তু কাজে তার দেখা মেলে না। তারুণ্য বললেই এগিয়ে আনা হয় শুভমন গিল, শ্রীকর ভরতের নাম। প্রতিভার বিচারে শুভমন হয়তো টিকে যাবেন। কিন্তু ভরতের এখনও অনেক অনেক কাজ বাকি। ঋষভ পন্থ ফিরলে এমনিই দলে তাঁর জায়গা হবে না।

ঠিক এখানেই ভারতকে টেক্কা মেরে বেরিয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কী ভাবে? তাঁরা দলে যেমন স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে রেখেছে, তেমনই মার্নাস লাবুশেন, ট্রেভিস হেড এবং ক্যামেরন গ্রিনের মতো তরুণদের ময়দানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যর্থ হলেও তাদের পাশে থেকেছে বোর্ড। ফল মিলেছে ফাইনালে।

পরের মাস থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ দিয়ে ভারতের পরবর্তী বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় শুরু হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় জিততে হলে, নির্বাচকদের এখনই ড্রয়িং বোর্ডে ফিরে গিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্তও নিতে হবে তাঁদের। শুধুমাত্র নাম আর অতীত পারফরম্যান্সের বিচারে আর কোনও ক্রিকেটারকে দলে সুযোগ দেওয়া চলবে না। নিতে হবে তরুণ রক্ত এবং অন্তত বেশ কয়েক মাস বা বছর তাঁদের পিছনে লেগে থাকতে হবে। একটি ম্যাচে খারাপ খেলা মানেই বাদ, এই নীতি থেকে সরে আসতে হবে। মাথায় রাখতে হবে দলের স্বার্থ।

ভারতের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীও সেটাই বলেছেন, “দলের মাথা এবং নির্বাচকদের দ্রুত একসঙ্গে বসতে হবে। কী ভাবে এই দলটাকে নতুন করে গড়ে তোলা যায়, সেটা নিয়ে অনেক ভাবতে হবে। দূরদর্শিতা থাকা খুবই দরকার। গত কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া সেই কাজটাই ভাল করে করছে। তিন বছর পরে ওরা নিজেদের কোথায় দেখতে চায়, সেই লক্ষ্য আগে থেকেই স্থির করে নিচ্ছে। দুম করে কাউকে দল থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে না।”

ভারতে যে রকম রঞ্জি ট্রফি রয়েছে, তেমনই অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে শেফিল্ড শিল্ড। রঞ্জিতে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অংশ নেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ভারতের থেকে আয়তনে আড়াই গুণ বড় হওয়া সত্ত্বেও শেফিল্ড শিল্ডে খেলে মাত্র ছ’টি দল। বিস্তারিত ভাবে বললে, দেশের ছ’টি প্রদেশ। অর্থাৎ ভারতে রাজ্য দলে সুযোগ পাওয়া যতটা সহজ, তার থেকে অনেক গুণ বেশি কঠিন অস্ট্রেলিয়ার প্রাদেশিক দলে সুযোগ পাওয়া। প্রচুর ক্রিকেটারের মধ্যে থেকে সেরা ১১ জনকে বেছে নেওয়া হয়। অথচ সেখান থেকেই একের পর এক তরুণ ক্রিকেটার উঠে এসে জাতীয় দলের জায়গা ভরাট করছেন। গত মরসুমে ভাল খেলে ইতিমধ্যেই গ্রিন জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। তালিকায় জেভিয়ার বারলেট, জ্যাক ক্লেটন, অলি ডেভিস, জ্যাক এডওয়ার্ডস, ম্যাথু গিলকেস, ম্যাকেঞ্জি হার্ভের মতো ক্রিকেটাররা রয়েছেন।

সেই প্রসঙ্গ ধরেই শাস্ত্রী বলেছেন, “একটানা তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে আনছে অস্ট্রেলিয়া। সব সময়েই ওদের দলে তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার একটা মেলবন্ধন রয়েছে। তরুণরা সহজেই অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শিখে নিচ্ছে নিজেদের দায়িত্ব। তাই সহজেই দলটার মধ্যে একটা ঐক্যবদ্ধ ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ধরনের পরিকল্পনাই ভারতকে করতে হবে। কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হলে হোক। কিন্তু দলের স্বার্থ সবার আগে। এ ব্যাপারে কোনও আপস নয়।”

শাস্ত্রী তো নিজের মতামত দিয়েছেন। নির্বাচকদের কানে ঢুকবে কি সে কথা?

অন্য বিষয়গুলি:

Team India Cricket Australia WTC Final 2023 Ravi Shastri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy