ভারতের আইপিএলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও এ দেশের কোনও ক্রিকেটার বিদেশের লিগে খেলার সুযোগ পান না। কিন্তু ভারতেরই এক ক্রিকেটার মাতিয়ে দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে (বিবিএল)। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত খেলে সেখানকার হোবার্ট হারিকেন্স দলের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন নিখিল চৌধরি। ইদানীং তাঁর খেলা সুনাম কুড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটমহলে।

বিবিএলে অভিষেক ম্যাচেই চাপের মুখে ৩১ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে নজরে আসেন তিনি। এর পরে মেলবোর্ন স্টার্সের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে হ্যারিস রউফকে অবলীলায় ছক্কা মেরে ১৬ বলে ৩২ রান করেন। উইকেটও নিয়েছেন। সকলেরই তাই জিজ্ঞাসা, কে এই নিখিল?

দিল্লির ছেলে হয়েও ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে পঞ্জাবে চলে যান নিখিল। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বরাবরই। ছোট থেকে জোরে বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। চাইতেন ব্রেট লি-র মতো বল করতে। স্কুলে নিখুঁত ভাবে লি-র মতো বল করতেন। কিন্তু কোনও দিনই বোলিংয়ে সেই ধার ছিল না। গতিও কম ছিল। তাই জোরে বোলার হওয়ার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। তার পরেই অফ স্পিন বল শুরু করেন তিনি।

পঞ্জাবের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান তিনি। পঞ্জাবের সিনিয়র দলেও সুযোগ মেলে। সেই সময় হরভজন সিংহ এবং যুবরাজ সিংহের সঙ্গে খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা পরে কাজে লেগেছে। নিজেই বলেছেন, “ওঁদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কী ভাবে ইনিংস তৈরি করতে হয়, বড় লক্ষ্যমাত্রা এবং ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল শিখেছি। কী ভাবে ম্যাচের বিভিন্ন সময়ে রান করতে হয় সেটা শিখেছি। আইপিএল খেলতে এবং ভারতের জার্সি গায়ে চাপাতে মরিয়া ছিলাম।”

২০১৯ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে দু’বার ট্রায়াল দিলেও লাভ হয়নি। মুম্বই নিখিলকে কেনার আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু ছুটিতে ব্রিসবেনে ঘুরতে যাওয়া এবং করোনার প্রকোপ নিখিলের জীবন আমূল বদলে দেয়। যাতায়াতের বিধিনিষেধের কারণে ভারতে ফিরতে পারেননি। তাই অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যান এবং সেখানেই ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সম্পর্কে বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি ভারতের থেকে অনেক আলাদা। আমার খুব ভাল লাগে। অস্ট্রেলিয়াতেই এখন ক্রিকেট খেলতে চাই।”

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি থাকার জন্য দরকার ছিল অর্থ। প্রথমে মেক্সিকোর একটি রেস্তরাঁয় চাকরি নেন নিখিল। তার পরে অস্ট্রেলিয়া পোস্টে ক্যুরিয়ার বয় হিসেবে কাজ করেন। সেই ফাঁকেই স্থানীয় নর্দার্ন সাবার্বস দলের হয়ে খেলতেন। সেখানকার কোচ তথা প্রাক্তন অসি ক্রিকেটার জেমস হোপসের নজরে পড়ে যান। হোপস তখন হোবার্ট দলের সঙ্গেও যুক্ত। হোপসের চেষ্টাতেই হোবার্টের চুক্তি বাগিয়ে নেন নিখিল।

এ বছর বিবিএল চারটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ৪০ এবং তৃতীয় ম্যাচে ৩২ রান করেছেন। চতুর্থ ম্যাচে বল হাতে ২৬ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। হোবার্ট দল এখন তাঁকে বসানোর কথা ভাবছেই না। নিখিল এখন সবার প্রিয় হয়ে উঠেছেন।