উৎসব: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। উল্লাস ওয়ার্নার, স্মিথদের। রবিবার। আইসিসি টুইটার
ভিভিএস লক্ষ্মণের থেকে একটি গল্প শুনেছিলাম। গল্পের প্রধান দুই চরিত্রের নাম কেন উইলিয়ামসন ও ডেভিড ওয়ার্নার। সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করত লক্ষ্মণ। সে দলেরই তখন অধিনায়ক ছিল ওয়ার্নার। সহ-অধিনায়ক উইলিয়ামসন। চেন্নাইয়ে একটি ম্যাচের আগের দিন নেটে ব্যাট করতে গিয়ে উইলিয়ামসন শুধু একটিই শট মেরেছিল। সুইপ। আর ওয়ার্নার একটি বলও ডিফেন্ড করেনি। প্রত্যেকটি বলই চালিয়েছিল সর্বশক্তি দিয়ে।
লক্ষ্মণ গিয়ে শুরুতে উইলিয়ামসনকে প্রশ্ন করেছিল, ‘‘দু’ঘণ্টা ধরে একই শট মারছ কেন?’’ উইলিয়ামসন নাকি বলেছিল, ‘‘এখানে আমাকে কেউ পায়ের সামনে বল করবে না। সোজা শট খেলার প্রস্তুতি নিয়ে কী লাভ? আমার নাগালের বাইরে বল ফেলেই ঘোরানোর চেষ্টা করা হবে। সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য এই অনুশীলন।’’ উইলিয়ামসন আগে থেকেই বোঝে, কী ভাবে ওকে আউট করতে চায় বিপক্ষ। বড় অধিনায়ক হতে গেলে বিপক্ষের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতেই হবে।
ওয়ার্নারের কাছে গিয়ে লক্ষ্মণ জানতে চায়, ‘‘প্রত্যেকটি বল মারতে যাচ্ছ কেন? ওরা তো সব মারার বল দেবে না!’’ ওয়ার্নার নাকি তখন বলেছিল, ‘‘মারার বল বানিয়ে নিতে হবে। কেউই তো আমাকে মারার বল দেবে না। তাই বলে কি মারব না?’’ দু’জনের ক্রিকেট মস্তিষ্ক ভিন্ন। খেলার ধরনও আলাদা। ওয়ার্নারের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ঘরানার ক্রিকেট মানানসই হলেও উইলিয়ামসন কিন্তু নিজেকে সেই ঘরানার ক্রিকেটে সঙ্গে মানিয়ে নিতে জানে। যেমন রবিবার মানিয়ে নিল দুবাইয়ে। ২১ রানে ওর ক্যাচ ফস্কায় জশ হেজ্লউড। সেই জায়গা থেকেই রানের গতি বাড়ায় উইলিয়ামসন।
সাধারণত শরীরের কাছাকাছি বল খেলতে সমস্যা হয় নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়কের। মিচেল স্টার্ক, জশ হেজ্লউড, প্যাট কামিন্সরা ওর শরীর লক্ষ্য করেই বল করছিল। কিন্তু পরিস্থিতির স্বার্থে স্টান্স সামান্য আড়াআড়ি করে শট খেলতে শুরু করল উইলিয়ামসন। ডান-হাতি ব্যাটারের কাঁধ সামান্য বাঁ-দিকে ঘুরলে তার শরীরের মধ্যে আসা বল খেলতে সমস্যা হয় না। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করতে আসা স্টার্কের বিরুদ্ধে এই ছকেই ব্যাট করে গেল। ১৬তম ওভার বল করতে এসে ২২ রান দেয় স্টার্ক। ওভারে চারটি চার ও একটি ছয় মেরে একা কুম্ভ হয়ে লড়াই করে দলকে ২০ ওভারে ১৭২-৪ স্কোরে পৌঁছে দিল। ৪৮ বলে কেন করল ৮৫ রান। ১০টি চার ও তিনটি ছয়ের সৌজন্যে।
উইলিয়ামসনকে শুরুতে সঙ্গ দিল মার্টিন গাপ্টিল। পরের দিকে গ্লেন ফিলিপস। কিন্তু ওর রানের গতির সঙ্গে কেউই পাল্লা দিতে পারল না। জশ হেজ্লউডের ১৮তম ওভারে ফিলিপস ও উইলিয়ামসন আউট হতেই নিউজ়িল্যান্ডের ১৯০ রানের গণ্ডি পেরোনোর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
সেই জায়গা থেকেই বিশ্বকাপ ফাইনালের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিল ওয়ার্নার। আইপিএলে রান না পাওয়ায় দল থেকে বাদ পড়েছিল। রবিবার দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ের নেপথ্যে অন্যতম নায়ক অভিজ্ঞ এই বাঁ-হাতি ব্যাটারই।৩৮ বলে ৫৩ রান করে ম্যাচের সেরা হতে না পারলেও অস্ট্রেলীয় শিবিরে জেতার বিশ্বাস তৈরি করেই প্যাভিলিয়নে ফিরল ওয়ার্নার।
সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রান পাওয়ার পর থেকেই মনে হয়েছিল, ওয়ার্নার ফাইনালের জন্য ফুঁসছে। ব্যাট হাতে তাণ্ডবেই শুরু করার পরেই বুঝলাম, খালি হাতে ফিরে যেতে আসেনি। ইশ সোধি, অ্যাডাম মিলনেকে ঠিক জায়গায় বলই ফেলতে দিল না। সোধি যতই ওর বাইরের দিকে বল করে শট আটকানোর চেষ্টা করেছে, ততই সুবিধে হয়েছে ওয়ার্নারের। ও আর মিচেল মার্শের জুটিই প্রথম বার টি-টোয়েন্টি কাপ তুলে দিল অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy