বিরাট কোহলি (বাঁ দিকে) এবং রোহিত শর্মা। — ফাইল চিত্র।
আচমকা জেগে ওঠার জন্য কোনও অ্যালার্মের ঘন্টি নয়। হঠাৎ করে একটি সিরিজ়ে হার নয়। ভারতীয় ক্রিকেটে যে বড়সড় লজ্জা অপেক্ষা করে রয়েছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই। ক্রিকেটারেরা সেটা বুঝতে পারেননি। বা বুঝতে পারলেও তা আটকানোর কোনও চেষ্টা করেনি। ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে চুনকাম হওয়া তাই কোনও আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না। প্রশ্ন উঠছে, ঘরোয়া ক্রিকেট বা দলীপ ট্রফিতে খেললে কি রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে পারতেন?
গত দু’টি মরসুমে ঘরের মাঠে বার বার স্পিনারদের বিরুদ্ধে অস্বস্তিতে পড়েছেন রোহিত, কোহলিরা। কখনও স্টিভ ও’কিফ, কখনও ম্যাথু কুনেম্যান, কখনও জ্যাক লিচ, কখনও অজাজ পটেলরা তাঁদের সমস্যায় ফেলেছেন। ২০১৩-২০২০ মরসুমে ঘরের মাঠে মাত্র দু’টি ম্যাচ হেরেছিল ভারত। ২০২১-২০২৪ সালে তিনটি ম্যাচ হারে। বিপদবার্তা বোঝা উচিত ছিল তখনই। রোহিত, কোহলিরা এবং বাকিরা সেটা বোঝেননি।
দলীপে না খেলাই কাল?
প্রায় দেড় মাস কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই। এমন সময় ভারতীয় ক্রিকেটে বিরল। বাংলাদেশ এবং নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ের আগে সেই সময়টাই পেয়েছিল ভারত। নির্বাচকেরা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিয়েছিলেন দলীপ ট্রফিতে খেলার। কেউ শোনেননি। বিশ্রাম নিয়েছিলেন। ২০১৫-র পর থেকে রঞ্জিতে খেলেননি রোহিত। ২০১২-র থেকে খেলেননি কোহলি। দলীপ ট্রফি খেললে অন্তত দেশের পিচ সম্পর্কে কিছুটা হলেও বোঝা যেত।
কাকতালীয় নয়, প্রত্যাশিত
বাংলাদেশ এবং নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ় মিলিয়ে রোহিত এবং কোহলির গড় যথাক্রমে ১৩.৩ এবং ১৯.২। ভুলে যাওয়ার মতো একটা মরসুম কাটিয়েছেন দু’জনেই। তবে এটা কাকতালীয় নয়। বরং প্রত্যাশিতই। ঘূর্ণি পিচে দু’জনেরই অসহায়তা প্রকট হয়েছে। এর মূল কারণ প্রস্তুতির অভাব। অতীত অভিজ্ঞতায় ভরসা রেখে বাজিমাত করার চেষ্টা করেছিলেন দু’জনেই। সেই প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশের পিচও অচেনা লেগেছে। মনে হয়েছে সিলেবাসের বাইরে। সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড় বা ভিভিএস লক্ষ্মণদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সময় পেলেই তাঁরা ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে যেতেন। রঞ্জিতে খেলতেন।
নির্বাচকদের কথা উপেক্ষা
দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ় শুরুর আগে নির্বাচকেরা চেয়েছিলেন সকলেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলুক। অনেকে সে কথা মেনে দলীপে খেলেছেন। রোহিত, কোহলিরা পাত্তা দেননি। লম্বা মরসুমের জন্য অনায়াসে তৈরি হওয়া যেত। কিছু তারকা ক্রিকেটার অনন্তপুরে খেলতে যাওয়া নিয়ে অনীহা প্রকাশ করায় বোর্ড একটি ম্যাচ সরিয়ে দিয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। তাতেও রোহিত, কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজারা খেলেননি। ক্লান্তিকে কারণ হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। তবে আইপিএলের ক্ষেত্রে কোনও দিন ক্লান্তি তাঁদের বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তাই মিচেল স্টার্ক বা প্যাট কামিন্সেরা দেশের কথা ভেবে আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ালেও কোহলি, রোহিতেরা কোনও দিন তা করেননি।
প্রস্তুতি থেকেও শিক্ষা না নেওয়া
পাঁচ টেস্টের আগে রোহিত, কোহলিরা ভেবেছিলেন চেন্নাইয়ে ছোটখাটো জাতীয় শিবির করলেই হয়ে যাবে। চার দিনের মধ্যেও আবার এক দিনের ‘বিরতি’ ছিল। তামিলনাড়ুর সাধারণ স্পিনারদের বলেও নেটে নাকানি-চোবানি খেতে দেখা গিয়েছিল দুই তারকা ব্যাটারকে। ঘূর্ণি উইকেট বানানোর নির্দেশ দেওয়ার আগে তাঁদের অন্তত দু’বার ভাবা উচিত ছিল। বয়স হয়েছে বা দল রূপান্তরের মধ্যে রয়েছে বলে তাঁরা ব্যর্থ হননি। তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন কারণ সামনে কী আসতে চলেছে সেটা দেখতেই পাননি। তারই মূল্য চোকাতে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy