ফাইল চিত্র।
কানপুরে শেষ দিনে নিউজ়িল্যান্ডকে হাতের মুঠোয় পেয়েও ভারতের টেস্ট জিততে না পারার নেপথ্যে ভাগ্যকে দোষ দিলে চলবে না। বেশ কিছু ক্রিকেটীয় কারণ আছে কেন উইলিয়ামসনদের হারাতে না পারার পিছনে।
কী কী কারণ? প্রথমেই আঙুল তুলতে হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষার দিকে। বা পরিষ্কার করে বললে, ভারত অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানের মানসিকতার প্রতি। দু’ধরনের অধিনায়ক দেখা যায়। এক দল, যারা শান্ত প্রকৃতির। আর এক দল, আগ্রাসী। প্রথম দলে যদি রাহানে পড়ে, দ্বিতীয় দলে অবশ্যই পড়বে বিরাট কোহালি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আগ্রাসী অধিনায়কই পছন্দ করি। কারণ এক জন আগ্রাসী অধিনায়ক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও দলকে তাতিয়ে তুলতে পারে। সতীর্থদের মধ্যে থেকে সেরা খেলাটা বার করে আনতে পারে।
পঞ্চম দিনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের দেখে একটু ন্যাতানো মনে হচ্ছিল। সেই আগ্রাসনটাই চোখে পড়ল না। বিশেষ করে যখন উইকেট পড়ছিল না। এই পরিস্থিতিতে ক্রমাগত আবেদন করে, একে অপরকে উৎসাহ দিয়ে বিপক্ষের উপরে চাপ তৈরি করা যায়। যেটা চোখে পড়েনি। নেতৃত্বে বিরাট থাকলে এই জায়গাটায় তফাত হয়ে যেত বলেই আমার মনে হয়।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে নিউজ়িল্যান্ডের ‘নৈশপ্রহরী’ উইলিয়াম সমারভিলের কথা বলতেই হবে। আমার দেখা সেরা ‘নৈশপ্রহরী’ হল অস্ট্রেলিয়ার জেসন গিলেসপি। যখনই ওকে আগে পাঠানো হত, তখনই ঠিক নিজের কাজটা করে দিয়ে আসত। হয় রান করত, নয়তো সময়টা নষ্ট করে দিত। সমারভিলও এখানে সেই কাজটা করে দিল। পঞ্চম দিনে এক জন ‘নৈশপ্রহরী’কে দু’ঘণ্টা ব্যাট করতে দিলে তার ফল ভুগতেই হবে। কয়েক জন প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতো আমারও মনে হয়, চতুর্থ দিন ভারত একটু দেরিতে ইনিংস ছেড়েছে। আরও মিনিট ২০-২৫ আগে চতুর্থ দিনে নিউজ়িল্যান্ডকে ব্যাট করার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। ওই সময় গোটা দুই উইকেট ফেলে দিলে চাপটা মারাত্মক হয়ে যেত। সেটা মাথায় রেখে ভারতীয় ইনিংসের শেষ দিকে আর একটু দ্রুত রান তোলারও চেষ্টা করা যেত। আমি নিশ্চিত, ড্রেসিংরুম থেকে নির্দেশ পাঠালে ঋদ্ধিমান সাহা আর অক্ষর পটেল দ্রুত রান তুলতে ঝাঁপাত।
আরও একটা ব্যাপারে ভারত ভুল করেছে। চা বিরতির পরে যখন নতুন বল পাওয়ার সুযোগ আসে, তখন সেটা রাহানে নেয়নি। চারটে ওভার পুরনো বলে বল করে। তার পরে নতুন বল নেওয়া হয়। যার পরেই রবীন্দ্র জাডেজা পরপর দুটো উইকেট তুলে নিউজ়িল্যান্ডকে হারের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। যেখান থেকে দলকে বাঁচিয়ে দেয় রাচিন রবীন্দ্র এবং অজাজ় পটেল। প্রথম ইনিংসেও কিন্তু নতুন বল নেওয়ার পরে অশ্বিনরা দ্রুত উইকেট তুলেছিল।
শেষ দিনের পিচে ভারতীয় স্পিনারদের বল করার কৌশল নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। পিচটা ব্যাটিংয়ের অযোগ্য ছিল না ঠিকই, কিন্তু নিষ্প্রাণও ছিল না। বল ঘুরেছে, নিচু হয়েছে। বোলারদের জুতোর তৈরি ক্ষতে পড়ে অনেকটা স্পিন করেছে। এই উইকেটে ভারতীয় স্পিনারদের আরও বেশি ফ্লাইট করানো উচিত ছিল।
আর অশ্বিন-রবীন্দ্র জাডেজা-অক্ষর পটেলদের দেখে মনে হয়েছে ওরা গতি কিছুটা বাড়িয়ে বল করতে গিয়েছে। উইকেটে বেশি ‘হিট’ করতে চেয়েছে। হয়তো ভেবেছিল, উইকেটে জোরের উপরে মারলে বলটা বাউন্স করবে, দ্রুত ঘুরবে। কিন্তু সেটা হয়নি। ব্যাটাররা অনেক সময় পেয়েছে স্পিন সামলানোর। এই পিচে প্রয়োজন ছিল ফ্লাইটের। হাওয়ায় বলটাকে আরও বেশি ভাসিয়ে রেখে নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটারদের স্ট্রোক খেলার জন্য প্রলুব্ধ করা। মাঝে মধ্যে এক-আধটা ফুলটস করেও দেখতে পারত। ব্যাটাররা যখন খুব রক্ষণাত্মক মোড়কে চলে যায়, তখন ফুলটস এলেও দ্বিধায় থাকে মারব কি মারব না। এই করতে গিয়ে অনেক সময় ক্যাচও উঠে যায়। এই ম্যাচে ইশান্ত শর্মাকে খেলানোটাও ঠিক হয়নি। একটা জায়গা নষ্ট হয়েছে।
মুম্বই টেস্টে অবশ্য বিরাট দলে ফিরে আসছে। দেখা যাক, ওয়াংখেড়েতে কী অপেক্ষা করে আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy