Advertisement
E-Paper

আইপিএলে পাঁচ নতুন অধিনায়কের পাঁচ নতুন চ‍্যালেঞ্জ! খুঁজল আনন্দবাজার ডট কম

এ বারের আইপিএলে পাঁচ দলে নতুন অধিনায়ক রয়েছেন। তাঁদের সামনে কঠিন পরীক্ষা। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে সেই সব চ্যালেঞ্জ খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার ডট কম।

cricket

(বাঁ দিক থেকে) অক্ষর পটেল, রজত পাটীদার, অজিঙ্ক রাহানে, শ্রেয়স আয়ার ও ঋষভ পন্থ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫৭
Share
Save

কিছু দল প্রায় একই রয়েছে। কিছু দলের খোলনলচে আবার পুরো বদলে গিয়েছে। এ বারের আইপিএলের নিলামের আগেই পাঁচ অধিনায়ককে রেখে দিয়েছিল তাদের দল। কিন্তু বাকি পাঁচ দলে পাঁচ জন নতুন অধিনায়ক হয়েছেন। তাঁদের সামনে কঠিন পরীক্ষা। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে সেই সব চ্যালেঞ্জ খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার ডট কম।

অজিঙ্ক রাহানে (কলকাতা নাইট রাইডার্স)— গত বারের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারকে এ বার ছেড়ে দিয়েছে কেকেআর। নিলামে মাত্র দেড় কোটি টাকায় কেনা রাহানেকে অধিনায়ক করা হয়েছে। প্রায় সকলেই ভেবেছিলেন ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় কেনা বেঙ্কটেশ আয়ারকে অধিনায়ক করা হবে। বেঙ্কটেশ প্রথম থেকে এই দলেই খেলছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতাকে বেছে নিয়েছে নাইট ম্যানেজমেন্ট। সেই কারণেই রাহানের সামনে চ্যালেঞ্জ কঠিন।

এর আগেও রাহানে কেকেআরে খেলেছেন। কিন্তু তখন প্রথম একাদশেই তেমন সুযোগ পাননি। সেই তিনি এ বার অধিনায়ক। আইপিএলের ইতিহাসে চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পর পর দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই কীর্তি ছোঁয়ার সুযোগ রয়েছে কেকেআরের। গত বারের দলের অনেক ক্রিকেটারকে রাহানে পেয়েছেন। ফলে কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে তাঁর। কলকাতার দলে ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটারের সংখ্যা প্রচুর। অলরাউন্ডারও অনেক। ফলে দল নির্বাচনে সমস্যা হবে না।

রাহানেকে লড়তে হবে শ্রেয়সের মানসিকতার সঙ্গে। গত বার একের পর এক ম্যাচ টস হেরেছেন শ্রেয়স। রাতের খেলায় টসের গুরুত্ব থাকে। তার পরেও জিততে সমস্যা হয়নি তাঁর। তিনি নিজে ভাল খেলেছেন। বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব করেছেন। প্রতিপক্ষ দলের তারকা ক্রিকেটারদেরও তোয়াক্কা করেননি। রাহানে সেই ঘরানার নন। তিনি শান্ত, বিনয়ী। খুব বেশি গ্যালারি শো করেন না। এই মানসিকতার মধ্যেই জেতার রসদ খুঁজতে হবে তাঁকে। চাপে দমে না গিয়ে পাল্টা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। নিজের আরামের জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে কেকেআরকে পর পর দু’বার চ্যাম্পিয়ন করার চ্যালেঞ্জ থাকবে রাহানের সামনে।

শ্রেয়স আয়ার (পঞ্জাব কিংস)— গত বার যে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, সেই কলকাতাই ধরে রাখেনি তাঁকে। অবশ্য নিলামে শ্রেয়সকে পেতে কাড়াকাড়ি হয়েছে। শেষে বাজিমাত করেছে পঞ্জাব। প্রীতি জ়িন্টার দলের পুরনো কোচ রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন শ্রেয়স। তিনি আইপিএলের একমাত্র অধিনায়ক যিনি দু’টি আলাদা দলকে ফাইনালে তুলেছেন। সেই কীর্তি কি এ বারও করতে পারবেন শ্রেয়স? বিশেষ করে যে দল আইপিএলে এক বারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি সেই দলকে সেরা করার চাপ কিন্তু অনেক বেশি।

ভারতীয় ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন ধরে খেলছেন শ্রেয়স। ঘরোয়া ক্রিকেটে মুম্বইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফলে অভিজ্ঞতার অভাব তাঁর নেই। পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ রয়েছে। তিনি জানেন, কী ভাবে ট্রফি জিততে হয়। সেই মন্ত্র পঞ্জাবের ক্রিকেটারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবেন শ্রেয়স। তবে চাপ থাকবে তাঁর উপর। গত বারের সাফল্যের চাপ। পর পর দু’বার একই রকম সফল হওয়া কঠিন।

শ্রেয়সকে আরও একটি চাপ সামলাতে হবে। তিনি এমন একটি দলে ছিলেন, যেখানে দলগঠন থেকে খেলার বিশ্লেষণ, পুরোটাই কোচেরা করেন। মালিক শাহরুখ খান, জয় মেহতারা সেখানে ঢোকেন না। পঞ্জাব কিন্তু আলাদা। প্রায় প্রতি ম্যাচেই মাঠে থাকেন প্রীতি জ়িন্টা, নেস ওয়াদিয়ারা। তাঁরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেন। পঞ্জাবের অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার অভিযোগ করেছেন, দলের খেলায় নাক গলান মালিকেরা। সেই পরিস্থিতি সামলানো বড় চ্যালেঞ্জ শ্রেয়সের। তিনি যে রকম ডাকাবুকো, তাতে এই নাক গলানো মানবেন তো!

ঋষভ পন্থ (লখনউ সুপার জায়ান্টস)— দিল্লি ক্যাপিটালসকে নেতৃত্ব দিলেও সাফল্য পাননি পন্থ। তার পরেও তাঁর উপর ভরসা দেখিয়েছে লখনউ। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে পন্থকে কিনেছে তাঁরা। ফলে তিনি যে অধিনায়ক হবেন তা নিশ্চিত ছিল। যে টাকা লখনউ তাঁকে দিয়েছে তার পাল্টা দলকে সফল করার চাপ যথেষ্ট রয়েছে পন্থের উপর। প্রথম বার দলকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করার চাপ।

পন্থকে নিয়েই মালিক সঞ্জীব গোয়েন্‌কা জানিয়েছেন, আইপিএলের সেরা ক্রিকেটার তিনি। পন্থ নিজেও জানিয়েছেন, ২০০ শতাংশ দেবেন। কিন্তু ক্রিকেটে একার দক্ষতায় কিছু হয় না। সফল হতে গেলে দলগত ক্রিকেট খেলতে হবে। দেশের হয়ে কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে অনিয়মিত পন্থ। তেমন রানও নেই। অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য নেই। ফলে শুরু থেকেই বাড়তি চাপ থাকবে তাঁর উপর।

গত বারের সেই দৃশ্য ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে রয়েছে। মাঠেই অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে ধমক দিচ্ছেন গোয়েন্‌কা। যে ঘটনার পরে রাহুল ঠিক করে নিয়েছিলেন, আর লখনউয়ে থাকবেন না। এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত, পঞ্জাবের মতো লখনউয়ের মালিকও দলে নাক গলান। সফল না হলে ধমক দেন। এই চাপ নিয়ে খেলা সহজ নয়। অর্থাৎ, মাঠের পাশাপাশি মাঠের বাইরেও একটা লড়াই লড়তে হবে পন্থকে।

অক্ষর পটেল (দিল্লি ক্যাপিটালস)— পন্থের ছেড়ে যাওয়া দিল্লি ক্যাপিটালস এ বার কিনেছে রাহুলকে। সকলে ভেবেছিলেন তিনিই অধিনায়ক হবেন। আবার গত তিন বার বেঙ্গালুরুকে নেতৃত্ব দেওয়া ফাফ ডুপ্লেসিও এ বার দিল্লিতে। কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়ে অক্ষর পটেলকে অধিনায়ক করেছে দিল্লি। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, দলের পুরনো সৈন্যের উপরই ভরসা রয়েছে।

রাহানে, শ্রেয়স, পন্থেরা আগে অন্য দলে অধিনায়কত্ব করলেও এর আগে আইপিএলে নেতৃত্ব দেননি অক্ষর। একটি ম্যাচ পন্থ না খেলায় অধিনায়কত্ব করেছিলেন বটে, তবে তা পাকাপাকি নয়। ফলে অক্ষরের চাপ অনেক বেশি। দিল্লিও কোনও বার আইপিএল জিততে পারেনি। এ বার পুরো কোচিং দলও বদলে ফেলেছে তারা। ফলে অক্ষরও নতুন পরিবেশে রয়েছেন। প্রতিপক্ষ সব দলে অধিনায়কের তালিকায় বড় বড় নাম রয়েছে। তাঁদের চোখে চোখ রেখে লড়তে হবে তাঁকে। অক্ষরকে প্রমাণ করতে হবে, অধিনায়ক হিসেবে তিনিও কম যান না।

রজত পাটীদার (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)— অধিনায়ক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চমক দিয়েছে বেঙ্গালুরু। বিরাট কোহলি থাকার পরেও রজত পাটীদারকে অধিনায়ক করেছে তারা। ঘরোয়া ক্রিকেট ছাড়া কোথাও অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা নেই তাঁর। ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএল আলাদা। ফলে পাটীদারও চাপে থাকবেন।

প্রতি বার খাতায়-কলমে শক্তিশালী দল বানিয়েও ব্যর্থ হতে হয় বেঙ্গালুরুকে। এক বারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা। এ বার অবশ্য তারকা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়েছে তারা। বড় নাম দলে বিশেষ নেই। ফলে কিছুটা হলেও সুবিধা হবে পাটীদারের। নেতৃত্বের চাপ কিছুটা কমবে। কিন্তু বেঙ্গালুরু এমন একটি দল, যারা বদল করতে বিশেষ ভাবে না। তারা জানিয়েছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে পাটীদারকে অধিনায়ক করা হয়েছে। কিন্তু দল খারাপ খেললে ভবিষ্যতের অপেক্ষা তারা করবে তো?

প্রতি বার গ্যালারি ভরিয়েও বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। ফলে সেই চাপও রয়েছে। কোহলি আর কত দিন আইপিএল খেলবেন কেউ জানে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত ট্রফি জেতা এক জনের আইপিএল ট্রফি নেই। তাঁর হাতে অন্তত এক বার ট্রফি দেখতে চান বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরা। সেই চাপও সহ্য করতে হবে পাটীদারকে। সব মিলিয়ে লড়াইটা সহজ নয় বেঙ্গালুরুর নতুন অধিনায়কের।

সংক্ষেপে
  • চলতি বছর আইপিএলের ১৮তম বর্ষ। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। এখন এই প্রতিযোগিতায় খেলে মোট ১০টি দল। তাদের মধ্যেই চলে ভারতসেরা হওয়ার লড়াই।
  • গত বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তিন বার এই ট্রফি জিতেছে তারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস পাঁচ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, দিল্লি ক্যাপিটালস, পঞ্জাব কিংস ও লখনউ সুপার জায়ান্টস এখনও পর্যন্ত এক বারও আইপিএল জিততে পারেনি।
IPL Ajinkya Rahane Shreyas Iyer Rishabh Pant Rajat Patidar Axar Patel

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}