দৌড়: সমালোচকদের জবাব দিয়ে ছুটছেন ঋদ্ধি। ফাইল চিত্র।
ঘাড়ের যন্ত্রণা নিয়েও কানপুরে দাঁতে দাঁত চেপে ৬১ অপরাজিত। তাঁর সেই অদম্য ইনিংস দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া সমালোচকদের যোগ্য জবাবে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটান। সিরিজ় জিতে কলকাতায় ফেরা ঋদ্ধিমান সাহা মঙ্গলবার সকালে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন।
প্রশ্ন: কানপুরে ঘাড়ে টান ধরল কী ভাবে?
ঋদ্ধিমান সাহা: তৃতীয় দিন সকালে গা ঘামানোর পরে কিপিং প্র্যাক্টিস করছিলাম। হঠাৎই একটা ক্যাচ নেওয়ার সময় ঘাড়ে টান ধরে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। কোনও দিকেই ঘাড় নাড়াতে পারছিলাম না। উপরে-নীচে তাকাতে গেলেও ব্যথা হচ্ছিল। দুই পাশে তাকাতে গেলে যন্ত্রণা বাড়ছিল। কিপিংয়ের ক্ষেত্রে যে ধরনের নড়াচড়া প্রয়োজন, সেটাই করতে পারছিলাম না।
প্রশ্ন: কাকে প্রথম জানালেন?
ঋদ্ধি: ফিজ়িয়োই দৌড়ে এসেছিল আমার অবস্থা দেখে। ওকে জানালাম, কোনও দিকেই ঘাড় নাড়াতে পারছি না। রাহুল (দ্রাবিড়) ভাইও দেখে বুঝতে পারলেন, কিপিং করা সম্ভব নয়। তখনই (কে এস) ভরতকে তৈরি হতে বলা হল।
প্রশ্ন: চতুর্থ দিন সকালে ব্যাট করার মতো অবস্থায় ছিলেন না বলেই সকলে ভাবছিল।
ঋদ্ধি: সকালের দিকে সত্যি ভাবিনি ব্যাট করতে পারব। তবে একের পর এক উইকেট পড়ে যেতে দেখে মনে হয়েছিল, আমার মাঠে নামা উচিত। যন্ত্রণা তো থাকবেই। কিন্তু যন্ত্রণা উপেক্ষা করে কী ভাবে দলকে সাহায্য করা যেতে পারে, সেই উপায় খুঁজতে থাকি। ড্রেসিংরুমে ব্যাটিং স্টান্স নেওয়ার শ্যাডো করার সময় উপলব্ধি করি, বোলারের দিকে ঘাড় ঘোরাতে পারছি না। তখনই স্টান্স পরিবর্তন করার কথা ভাবলাম। দেখলাম, আমি যদি কাঁধ মিড-অনের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড়াই, তা হলে বোলারকে দেখতে সমস্যা হবে না। অফস্টাম্পে সে ভাবে রান পাব না। তবে লেগস্টাম্পের দিকে খেলতে পারব।
প্রশ্ন: মাঠে নামার পরে কি কোনও সংশয়ে ভুগেছিলেন, কী ভাবে এমন প্রতিকূলতা নিয়ে ব্যাট করব?
ঋদ্ধি: দলকে বাঁচানোর জন্য আমি সব করতে পারি। জীবন বাজি রাখতেও রাজি। মাঠে এক বার নেমে পড়ার পরে মনে হচ্ছিল, কিছুতেই উইকেট দেওয়া যাবে না। ঘাড় থেকে মাথা বাদ হয়ে গেলেও না। শুরুর দিকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট করতে গেলেই ঘাড়ে ঝটকা লাগছিল। কিন্তু নিজেকে বলি, হাল ছেড়ো না।
প্রশ্ন: উইল সমারভিলকে স্লগ-সুইপে ছয় মারার পরে আপনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, খুব যন্ত্রণা পাচ্ছেন। কী করে সহ্য করলেন?
ঋদ্ধি: রান হচ্ছিল না। ভাবলাম একটা সুযোগ নিয়ে দেখি। বড় শট নিয়ে রান বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই একটা ঝটকায় আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিল। তবু কিছু ক্ষণ পরেই মাথায় সেই চিন্তাটা ফিরে এল। কী করে বড় জুটি গড়ে দলের রানটা বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
প্রশ্ন: অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস খেলার পরে রাহুল দ্রাবিড় বিশেষ কিছু বলেছেন?
ঋদ্ধি: হ্যাঁ। রাহুল ভাই খুব খুশি হয়েছিলেন। ঘাড়ের ব্যথা নিয়ে দলের জন্য দু’টি জুটি গড়তে পেরেছি বলে পিঠ চাপড়ে দেন। তবে খুব লজ্জা লেগেছিল, উনি দলের জন্য অবদান রেখেছি বলে ধন্যবাদ দেওয়ায়। ওঁর মাপের ক্রিকেটারের থেকে এ রকম মন্তব্য শুনতে পাওয়াটা সত্যিই
বিরাট প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: কানপুরে প্রথম ইনিংসে ব্যর্থতার পরে আপনার ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। বলা হচ্ছিল, আপনি জীবনের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এ ধরনের মন্তব্য আপনার কানে আসেনি?
ঋদ্ধি: বাইরে অনেকেই অনেক কিছু বলে। সে সব কানে নিলে মাঠে সফল হওয়া কঠিন হয়ে যায়। তা ছাড়া আমি গণমাধ্যম থেকে দূরেই থাকি।
প্রশ্ন: ভারতীয় দলে জায়গা ধরে রাখার তাগিদও কি কানপুরে দেখা গেল?
ঋদ্ধি: একেবারেই সে ভাবে দেখতে চাই না। আগেই বললাম, দলের জন্য সব কিছু করতে রাজি। ব্যক্তিগত সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে কখনও ভাবিনি। মুম্বই টেস্টেও প্রথম ইনিংসে জুটি গড়ার প্রয়োজন ছিল। মায়াঙ্কের সঙ্গে দিনের শেষে একটা দিক ধরে রেখেছিলাম যাতে ওই সময়ে উইকেট না পড়ে।
প্রশ্ন: ব্যাটার ঋদ্ধিকে নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্ট নন। আপনার কি মনে হয়, কানপুরের ইনিংস তাঁদের জন্য যোগ্য জবাব?
ঋদ্ধি: একেবারেই নয়। কে কী বলল তা ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না। ২৫ রান করলেও যদি দল উপকৃত হয়, আমি তাতেই খুশি।
প্রশ্ন: কোচ রবি শাস্ত্রী ও কোচ রাহুল দ্রাবিড়। দু’জনের অধীনেই খেলার সুযোগ পেলেন। কোনও পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন?
ঋদ্ধি: দু’জনেই খুব উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। ছন্দ খারাপ থাকলেও ওঁদের কথা শুনে ভাল খেলার ইচ্ছে তৈরি হয়। তবে হ্যাঁ, রবি ভাই আর রাহুল ভাইয়ের মধ্যে একটি পার্থক্য দেখেছি। রাহুল ভাই প্রত্যেকটি বিষয় খুব খুঁটিয়ে দেখেন। কার কোথায় সমস্যা, কী করলে মিটবে, ওঁর চেয়ে ভাল হয়তো অনেকেই বোঝেন না।
প্রশ্ন: সিরিজ় চলাকালীন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন আপনার স্ত্রী। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। তার মধ্যেই ক্রিকেট চলছিল!
ঋদ্ধি: বিকেল থেকেই আমার মাঠের বাইরের ম্যাচ শুরু হয়ে যেত। কোন ডাক্তারকে দেখালে ভাল হবে, কতটা জ্বর হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, সে সব খেয়াল রাখতে হয়েছে। ফোনে ডাক্তারদের সঙ্গে যতটা সম্ভব যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। হাসপাতালে ও (স্ত্রী) ভর্তি হওয়ার পরে খুব চিন্তা হত। দুই সন্তান ছোট, তারা ঠিক মতো থাকবে কি না, সে সব ভাবতাম। কিন্তু আমাদের কাজটা এ রকমই। দেশের জন্য কিছু করতে গেলে অনেক রকম ত্যাগ করতে হয়।
প্রশ্ন: অজাজ় পটেলের দশ উইকেট শিকার নিয়ে কী বলবেন?
ঋদ্ধি: এ রকম একটি দিন অনেক কিংবদন্তির জীবনেও আসে না। অজাজ়কে অনেক অভিনন্দন। ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy