ইংল্যান্ড স্পিনার হেডলি ভেরিটি। যাঁর মুখ সরিয়ে স্বামী বিবেকানন্দর মুখ বসানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।
কয়েক দিন আগে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে খুব হইচই হচ্ছিল। স্বামী বিবেকানন্দের বোলিং অ্যাকশনের ছবি। যা কতিপয় বিকৃত মানসিকতার লোকের কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। কারণ ওই ছবিটা স্বামীজির নয়, আসলে বিখ্যাত প্রাক্তন ইংরেজ স্পিনার হেডলি ভেরিটির। সুপারইম্পোজ় করে স্বামী বিবেকানন্দের মুখ বসিয়ে যা বাজারে ছাড়া হয়েছিল (বিকৃত বলেই ছবিটি প্রকাশ করা হল না)।
১৯৩০-এর দশকে ইংল্যান্ডের খুব নামী বাঁ হাতি স্পিনার ছিলেন ভেরিটি। স্যর ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ওঁকে খুব বড় মাপের স্পিনার মনে করতেন। স্যর ডনই তাঁর বিখ্যাত বই ‘দ্য আর্ট অব ক্রিকেট’-এ ভেরিটির এই ছবিটি ব্যবহার করেছিলেন বল করার সময় তাঁর দুর্দান্ত ভারসাম্য দেখানোর জন্য। ছবির ক্রেডিট ছিল ‘স্পোর্ট অ্যান্ড জেনারেল প্রেস এজেন্সি লিমিটেড’-এর। এটা যে ইংল্যান্ডে তোলা হয়েছিল, তা আম্পায়ারের লং কোট দেখেই আন্দাজ করা যায়।
নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ হওয়ার আগে) কলকাতা ময়দানে টাউন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। এক বার ক্যালকাটা ক্লাবের বিরুদ্ধে ইডেনে সাত উইকেটও নিয়েছিলেন। আমার ‘ইডেন গার্ডেন্স, লেজেন্ড অ্যান্ড রোম্যান্স’ বইতে এ নিয়ে বিশদে বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু এই বিকৃত ছবি এবং তা নিয়ে হইচই করা কিছু লোকের অজ্ঞতারই পরিচয়। সামান্য বুদ্ধি-বিবেচনা প্রয়োগ করে দেখলেই কিন্তু খটকা লাগার কথা। নরেন্দ্রনাথ দত্ত ময়দানে খেলেছেন ১৮৮০ নাগাদ। তখন টেলিফটো লেন্স ছিল না। দূর থেকে ক্লোজ়-আপ ছবি নেওয়া সম্ভবই ছিল না। এটা চরম দুর্ভাগ্যের যে, ইন্টারনেট যুগে আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার করে মানুষকে এ ভাবে বিভ্রান্ত করা হল। খুবই লজ্জাজনক, খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
তরুণ বয়সে নানা রকম খেলাধুলোতেই অংশ নিয়েছেন স্বামীজি। কুস্তি, রোয়িং, সুইমিং, ঘোড়দৌড়ের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলেছেন। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখা অনুযায়ী, কুস্তিগীর অম্বু গোহোর অধীনে গোহো আখড়ায় কুস্তি শিখেছিলেন তরুণ নরেন। বিখ্যাত কুস্তিগির গোবর গোহোর কাকা ছিলেন অম্বু। নরেন্দ্রনাথ দত্তের ফুটবল খেলায় সক্রিয় অংশ নেওয়ার কোনও নথি-প্রমাণ নেই। তবে স্বামী বিবেকানন্দ হিসেবে বিখ্যাত হওয়ার পরে ফুটবল পথিকৃৎ নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর কাজ নিয়ে তিনি খুবই প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে যে ভাবে নগেন্দ্রপ্রসাদ ফুটবল খেলার প্রসার ঘটিয়েছিলেন, তা ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁকে।
স্বামীজি যে জীবনের রাস্তাতেও খেলার অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন, তা তো পরবর্তীকালে আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। দলগত সংহতি, শৃঙ্খলা, শক্তি, নেতৃত্ব গুণ গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলোর প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁর বক্তৃতাতেও সে কথা উঠে এসেছে। সেই কারণেই তো বিশ্বকে বলেছিলেন, ‘‘ফুটবল খেলো। গীতার চেয়েও দ্রুততার সঙ্গে স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছবে।’’
এমন খেলাধুলো-প্রিয় মানুষের বিকৃত ছবি বিকৃত মানসিকতারই পরিচয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy