হার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না কোহলী, বুমরাদের। ছবি: রয়টার্স
হার বাঁচাতে পারল না যশপ্রীত বুমরার ভারত। এজবাস্টন টেস্টে ইংল্যান্ড জিতল ৭ উইকেটে। চতুর্থ দিনে যেখানে শেষ করেছিলেন, পঞ্চম দিন সকালে সেখান থেকেই শুরু করেন দুই অপরাজিত ব্যাটার জো রুট এবং জনি বেয়ারস্টো। এক দিনের মেজাজে ব্যাট করে মধ্যহ্নভোজের বিরতির আগেই প্রয়োজনীয় ১১৯ রান তুলে নিলেন তাঁরা। ৩ উইকেট হারিয়েই ৩৭৮ রান তুলল ইংল্যান্ড।
অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হতে গিয়েই সিরিজ জেতা হল না ভারতের। ম্যাচের শেষ সকালেও ভারত তেমন আগ্রাসী বোলিংয়ের পথে হাঁটল না। বুমরা ফিল্ডিংও সাজান কিছুটা সাবধানী হয়ে। ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের আউট করার থেকেও রান তোলার গতি কমানোই যেন লক্ষ্য ছিল ভারতীয় দলের। ফলে শেষ দিনে একটা উইকেটও তুলতে পারল না ভারতীয় দল। বরং সাহসী ব্যাটিং করলেন রুটরা। অনেকটা নেটে ব্যাটিংয়ের মেজাজেই ম্যাচ শেষ করে দিলেন তাঁরা।
এই ম্যাচই এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি রান তাড়া করে জিতল ইংল্যান্ড। এর আগে তাদের সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩৫৯ রান। এর আগে ১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়াই ভারতকে হারিয়েছিল ৩৩৯ রান তাড়া করে। সেই রেকর্ডও ভেঙে দিল বেন স্টোকসের ইংল্যান্ড।
টেস্টে নিজের ২৮তম শতরান তুলেন নিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক। টেস্ট শতরানের সংখ্যায় টপকে গেলেন বিরাট কোহলীকে। রুট অপরাজিত থাকলেন ১৪২ রান করে। বেয়ারস্টোর ব্যাট থেকেও এল অনবদ্য শতরানের ইনিংস। টেস্টে ১১তম শতরান করে শেষ পর্যন্ত ১১৪ রানে অপরাজিত থাকলেন তিনি। ১০৯ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ইংল্যান্ডের ইনিংসের হাল ধরেন রুট এবং বেয়ারস্টো। তাঁদের জুটি ভাঙতেই হিমশিম খেলেন ভারতীয় বোলাররা। তাঁদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে উঠল ২৬৯ রান। বেয়ারস্টো সোমবার সুযোগ দিলেও কাজে লাগাতে পারেননি কোহলীরা। শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন দুই ইংরেজ ব্যাটার।
চতুর্থ দিনের খেলা দেখে ভারতীয় দলের রণনীতিকে ভীতুর মতো বলেছিলেন রবি শাস্ত্রী। ধারাভাষ্য দিতে ব্যস্ত প্রাক্তন কোচের টোটকাও সাহসী করতে পারল না রাহুল দ্রাবিড়ের ছেলেদের। ক্রিকেট জীবনে দ্রাবিড় যেমন রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতেন, সেই মানসিকতাই কি তিনি ঢুকিয়ে দিলেন বুমরা, কোহলীদের মজ্জায়? প্রশ্ন উঠতে পারে। বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তাতে বদলাবে না এজবাস্টন টেস্টে সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও পরাজয়ের গ্লানি।
ভারতের কোনও বোলারই ইংরেজদের তেমন বিব্রত করতে পারলেন না। রুট, বেয়ারস্টো স্বচ্ছন্দে ব্যাটিং করলেন। তাঁদের চোখে-মুখে উদ্বেগের কোনও ছাপ ছিল না। রোদ ঝলমলে সকালে বুমরাদের বল তেমন সুইং করল না। করলে ম্যাচের ফল সুইং করত কি না বলা কঠিন। কিন্তু রুটদের সামনে চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নপত্রও মেলে ধরতে পারল না ভারতীয় দল। পারল না ম্যাচ বাঁচাতে। পারল না সিরিজ জিততে।
অথচ এই ভারতই প্রথম ইনিংসে ৯৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। ঋষভ পন্থের ডাকাবুকো ব্যাটিং এবং রবীন্দ্র জাডেজার দায়িত্বশীল ইনিংস বুমরাদের উদ্ধার করে। আগ্রাসী বোলিং করে প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানে এগিয়েও যায় ভারত। কিন্তু বাকি ম্যাচে সেই সাহসী, পরিণত ক্রিকেট আর দেখা গেল না। সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও এ ভাবে পরাজয় নিয়ে পরে ভাবতে বসলে হয়তো বিশ্বাস করতে পারবেন না বুমরা, কোহলীরাও। সাহসের অভাব না অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস— কী কারণে অধরা থাকল সিরিজ জয়, তার কাটাছেঁড়া করতেই পারেন দ্রাবিড়রা।
আসল কথাটা কিন্তু চতুর্থ দিনের খেলা শেষেই বলে দিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— কিছুই প্রত্যাশা মতো করতে পারেনি বুমরার দল। যে সিরিজে অধিনায়ক কোহলী ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রেখেছিলেন, সেই সিরিজই তাঁর চোখের সামনে হাতছাড়া হল।
স্টোকসের নেতৃত্বে বদলে যাওয়া এই ইংল্যান্ড অনেক বেশি সাহসী। অনেক বেশি ইতিবাচক। শেষ বল পর্যন্ত হার না মানার মানসিকতাই ব্যাকফুট থেকে জয়ের মঞ্চে পৌঁছে দিল ইংল্যান্ডকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy