গৌতম গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল গৌতম গম্ভীরকে। দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে চুনকাম হওয়ার পর চাপ বেড়েছে গম্ভীরের উপর। যে সুবিধা তিনি পাচ্ছিলেন তা হয়তো আর পাবেন না গৌতি।
কোচ গম্ভীরের পারফরম্যান্স
কোচ হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সাফল্য গম্ভীর দিতে পারেননি। তাঁর প্রথম সফর ছিল শ্রীলঙ্কা। সেখানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ় জিতলেও ২৭ বছর পর শ্রীলঙ্কার কাছে এক দিনের সিরিজ় হেরেছিল ভারত। দেশের মাটিতে বাংলাদেশকে টেস্টে ও টি-টোয়েন্টিতে হারালেও নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে হেরেছে দল। এই প্রথম বার দেশের মাটিতে তিন বা তার বেশি টেস্টের সিরিজ়ে চুনকাম হয়েছে ভারত। অর্থাৎ, গম্ভীরের কোচিংয়ে ভারত দু’টি টি-টোয়েন্টি, দু’টি টেস্ট ও একটি এক দিনের সিরিজ় খেলেছে। পাঁচটির মধ্যে দু’টি সিরিজ় হেরেছে তারা। এই হারের দায় দলের পাশাপাশি কোচের উপরেও বর্তায়। সূত্রের খবর, গম্ভীরকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে বোর্ড।
গম্ভীরকে বাড়তি সুবিধা
কোচ হওয়ার পর গম্ভীরকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছিল বোর্ড। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বোর্ডের এক আধিকারিক বলেন, “রবি শাস্ত্রী বা রাহুল দ্রাবিড় যা সুবিধা পাননি, তা-ই পেয়েছিলেন গম্ভীর। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, দল নির্বাচনের সময় কোচ সেখানে থাকতে পারেন না। কিন্তু গম্ভীরকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সফরের দল নির্বাচনের বৈঠকে তিনি ছিলেন।” গম্ভীরের জোরাজুরিতেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের হর্ষিত রানা ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নীতীশ রেড্ডি অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে জায়গা পেয়েছেন। নির্বাচকের প্রথমে তাঁদের কথা ভাবেননি। কিন্তু গম্ভীর তাঁদের বাধ্য করেছেন এই দুই তরুণকে দলে রাখতে। তিনি যদি এর পরেও সাফল্য দিতে না পারেন তা হলে পরের সিরিজ় থেকে এই সুবিধা তিনি পাবেন না। অর্থাৎ, দল নির্বাচনের সময় তিনি থাকতে পারবেন না। নির্বাচকদের উপরেই ভরসা করতে হবে তাঁকে।
গম্ভীরের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন
যে সুবিধা গম্ভীর পেয়েছেন সেই অনুযায়ী সাফল্য দিতে পারেননি তিনি। উল্টে তাঁর বেশ কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা চলছে। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে পিচ বুঝতে ভুল করেছে ভারত। বেঙ্গালুরুর মেঘলা আবহাওয়ায় টস জিতে রোহিত শর্মার ব্যাট করার সিদ্ধান্ত তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। পরে রোহিত স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে পিচ বুঝতে পারেননি। সেই দায় কিন্তু কোচেরও। ব্যাটিং অর্ডারে কখনও বিরাট কোহলিকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো, কখনও ঋষভ পন্থকে চারে নামিয়ে দেওয়ার মতো কাজ গম্ভীর করেছেন। টেস্টে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সাধারণত এত পরীক্ষা কেউ করেন না। যদি এই পরীক্ষায় ভারত সাফল্য পেত, তা হলে হয়তো প্রশ্ন উঠত না। উল্টে তাঁর সিদ্ধান্তের প্রশংসা হত। কিন্তু সেটা হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে।
রোহিতকে পাশে পাচ্ছেন গম্ভীর
এত কিছুর পরেও অধিনায়ক রোহিতকে পাশে পাচ্ছেন গম্ভীর। নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হারের পর রোহিত জানিয়েছেন, মাত্র তিন-চার মাস দেখে কোনও কোচ বা সাপোর্ট স্টাফকে নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গম্ভীরের নেতৃত্বাধীন কোচিং দল তাঁদের সব রকম সাহায্য করেছে বলেই জানিয়েছেন রোহিত।
ওয়াংখেড়ে বলছে অন্য কথা
রোহিত পাশে দাঁড়ালেও ছবি অন্য কথা বলছে। ওয়াংখেড়েতে চুনকামের পর মাঠেই কোচ গম্ভীর ও সহকারী কোচ অভিষেক নায়ারের সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা বলেছেন নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগরকর। তাঁর চোখমুখ বলে দিচ্ছিল, এই ফলাফল মেনে নেওযা যাচ্ছে না। একটি সিরিজ় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি কোচের সঙ্গে নির্বাচক প্রধান মাঠেই আলোচনা শুরু করেন তা হলে বুঝতে হবে পরিস্থিতি খুব ভাল নেই। কারণ, আগরকরের সঙ্গে কথা বলার পর সাজঘরের সামনে নিজের বাকি সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে গম্ভীরকেও কথা বলতে দেখা গিয়েছে। ওয়াংখেড়ের এই ছবি পরিষ্কার করে দিচ্ছে, গম্ভীর কতটা চাপে রয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া সফরই শেষ সুযোগ?
তবে এখনই হয়তো চাকরি যাবে না গম্ভীরের। কারণ, ভারতীয় বোর্ডের নিয়ম আলাদা। সেখানে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সেই সময়টা দেওয়া হয়। কিন্তু দ্রাবিড় যে সাফল্য দিয়ে ছেড়েছিলেন সেখান থেকে দায়িত্ব নেওয়ায় বাড়তি চাপ রয়েছে গম্ভীরের উপর। তিনিও আইপিএলের কলকাতা নাইট রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করেই কোচের পদ পেয়েছেন। অর্থাৎ, গম্ভীর জানেন কী ভাবে জিততে হয়। তিনি নিজের সুনাম ধরে রাখার আরও একটি সুযোগ পাবেন। অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ় জিততে পারলে কিছুটা হলেও আগের ব্যর্থতা ঢাকতে পারবেন গম্ভীর। সে দেশে কিন্তু আগের দু’টি সফরে জিতেছে ভারত। এ বার হ্যাটট্রিকের সুযোগ। হলে ভাল। অস্ট্রেলিয়া থেকে হেরে ফিরলে কিন্তু চাকরি বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে কোচ গম্ভীরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy