চ্যাম্পিয়ন: বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে এক ফটোশুটে প্যাট কামিন্স। সোমবার। আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই।
হলুদ জার্সিতে পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে ষষ্ঠবারের জন্য দেশকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স। এক দিনের ক্রিকেটে ২০১১ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকে মাঠে অনেক স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন তিনি। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপের ফাইনালে বিরাট কোহলিকে আউট করার পরে আমদাবাদের নীল জনসমুদ্রকে চুপ করিয়ে দেওয়াই ছিল তাঁর কাছে ‘সবচেয়ে সুখের স্মৃতি’।
প্রসঙ্গত ব্যাক অফ দ্য লেংথের একটি বল কভারের দিকে খেলতে গিয়ে ব্যাটে লেগে উইকেট ভেঙে দেয় বিরাটের। তিনি তখন ব্যাট করছিলেন ৫৪ রানে। কোহলি আউট হতেই মনে হয়েছিল ৯০,০০০-এর বেশি দর্শকের চিৎকার এক মুহূর্তে যেন ব্লটিং পেপার দিয়ে কেউ শুষে নিয়েছে।
সোমবার এই কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কামিন্স। আরও বলেছেন, “আমাদেরও সেই গ্যালারির নীরবতা অনুভব করতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছিল। মনে হয়েছিল ফাইনালের মঞ্চ বিরাটের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, অন্যান্য দিনের মত ও রবিবারেও শতরান করবে। কিন্তু ও ব্যর্থ হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম।”
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইলান থেকে চলতি বছরের বিশ্বকাপ- বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের কাছে মাথাব্যাথার অপর নাম ২৯ বছরের অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ট্র্যাভিস হেড। অধিনায়কের মুখ থেকে শোনা গিয়েছে তাঁর সতীর্থের প্রশংসাও। কামিন্স বলেছেন, “হেড অতুলনীয়। ওকে বিশ্বকাপের দলে রাখা হলেও প্রথম একাদশে চোটের কারণে ছিল না। আমাদের কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড এবং প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলির অনেকাংশে ভূমিকা রয়েছে।”
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বুমোরং হয়েও আসতে পারত। কামিন্স বলেছেন, “প্রতিযোগিতার অর্ধেকটা সময় ওর হাত এবং আঙুল ভাঙা ছিল। তাই ওকে দলে রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিশেষ ধন্যবাদ মেডিক্যাল টিমকেও, ওকে পারফর্ম করার মঞ্চটা তৈরি করে দেওয়ার জন্য।” কিন্তু হেড ব্যর্থ হলে সমালোচনার তিরও ধেয়ে আসত কামিন্সের দিকে। “বিশ্বকাপের মত এই রকম প্রতিযোগিতা জিততে হলে ঝুঁকি নিতেই হত।”, জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আঙুল এবং হাত ভাঙা অবস্থাতেও সব যন্ত্রনা উপেক্ষা করে দেশের জন্য সবকিছু সঁপে দিয়েছেন হেড। কামিন্স বলেছেন, “ওর মত ক্রিকেটারকে আমি দলে চাই। ও হাসি মুখে খেলে প্রতিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছে। ওর জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।”
৫০ ওভারের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কি আদৌ সুরক্ষিত? কোনও সন্দেহ নেই চলতি বিশ্বকাপ এক দিনের ক্রিকেটের মরা গাঙে জোয়ার এনেছে। কিন্তু এই জোয়ার আবার ভাঁটায় পরিণত হবে না তো? কামিন্স বিশ্বকাপ নিয়ে আশাবাদী হলেও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ের ভাগ্যাকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। কামিন্সের কথায়, “বিশ্বকাপ জয়ের ফলে আমি আবার নতুন করে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের প্রেমে পড়ে গিয়েছি। বিশ্বকাপের মত প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক ম্যাচে নতুন কাহিনি লেখা হয়। জোর দিয়ে বলতে পারি ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আরও অনেক দিন থাকবে। এই প্রতিযোগিতা প্রত্যেকের হৃদয়েই আলাদা এক জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি অতটা আশাবাদী নই।”
মাঠে খেলেছেন এগারো জন ক্রিকেটার। কিন্তু মাঠের বাইরে থেকে ক্রমাগত ভরসা যুগিয়ে গিয়েছেন প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের অবদানের কথাও শোনা গিয়েছে কামিন্সের মুখে। বলেছেন, “জয়ের পরে পরিবারের তরফ থেকে বার্তা পেয়েছি। বাবা জানিয়েছেন তিনি অনেক দিন খেলা দেখবেন বলে ভোর ৪টের সময় উঠে পড়েছেন, আবার অনেক দিন ভোর ৪-টে পর্যন্ত খেলা দেখার পরে ঘুমোতে গিয়েছেন। ফলে পরিবারের লোকেদের আত্মত্যাগও ভোলার নয়।” আরও বলেছেন, “দলের প্রত্যেকে এই বছরের অনেকটা সময় ঘরের বাইরে কাটিয়েছে। কিন্তু আমাদের সব কষ্ট লাঘব হয়ে গিয়েছে বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত উপভোগ করতে পেরে।”
তবে ম্যাচের আগের দিন নিজের অভিজ্ঞতার কথাও উঠে এসেছে তাঁর মুখে। ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে হোটেলের ঘর থেকে দেখেছিলেন ভারতীয় সমর্থকেরা দলে দলে স্টেডিয়ামের দিকে চলেছেন। সেই মুহূর্তের স্মৃতিচারণে বলেছেন, “হোটেল থেকে দেখছিলাম নীল সমুদ্রের ঢেউয়ের মত শ’য়ে শ’য়ে মানুষ স্টেডিয়ামের দিকে চলেছেন। ওই জনসমুদ্রের ঢেউ দেখে আপনার মনে হতে বাধ্য আপনি বোধ হয় কোনও বিশেষ উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। সেই সময়টাতে সত্যিই আমি কিছুটা স্নায়ুর চাপে ভুগছিলাম।” তবে এটাই সুখের কথা, ম্যাচ চলাকালীন অধিকাংশ সময়ে দর্শকেরা কোলাহল তৈরি করেনি।”
কামিন্সের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন টেস্ট অধিনায়ক টিম পেনও। একটি চ্যানেলে তিনি বলেছেন, “টস জেতার পরে কামিন্স বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ওদের সকলেরই আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাছাড়া পরে শিশিরের কারণে বোলিং করাও অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।” আরও বলেছেন, “আমি মনে করি ফাইনালের রাতে কামিন্স একটা সিদ্ধান্তও ভুল নেয়নি। ওর অসাধারণ অধিনায়কত্বের জন্য বিশেষ কৃতিত্ব প্রাপ্য। কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড এবং তাঁর কোচিং স্টাফেরা প্রশংসা যোগ্য কাজ করেছে।”
প্রত্যেক ভারতীয় ব্যাটসম্যানের জন্য যে রকম আগাম পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া সেই কথাও গোপন করেননি পেন। “বোলিংয়ের সময় ও যেরকম ভাবে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল তা দেখার মত। রোহিত শর্মার জন্য প্রথম দিকে ডিপ পয়েন্ট, স্লিপ এবং ফ্লাইং স্লিপ রেখে ও আক্রমণ করে গিয়েছে। তার পরে পিচ ধীর গতির হয়ে যেতে এবং বল পুরনো হয়ে যেতে বিরাট এবং কে এল রাহুলের জন্য অফ সাইডে চার জন ফিল্ডারকে দাঁড় করিয়ে দিল অথচ কভারে কোনও ফিল্ডার ছিল না। এক দিনের ক্রিকেটে আমি এরকম ফিল্ডিং সেটআপ দেখিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy