ওয়াংখেড়েতে শতরানের ইনিংসের পথে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: পিটিআই
৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল বড় ব্যবধানে হারবে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিজে ব্যাটার হিসাবে একমাত্র ছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সঙ্গে ছিলেন দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। সেখান থেকে দলকে টানলেন ম্যাক্সওয়েল। পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন তিনি। একের পর এক বড় শট খেললেন। সাহসী ক্রিকেট দেখা গেল তাঁর ব্যাটে। তার পুরস্কারও পেলেন। ম্যাক্সওয়েলের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন মুজিব উর রহমান। সেটাই কাল হল আফগানিস্তানের। ৯১ রান থেকে দলকে ২৯২ রানে নিয়ে গেলেন ম্যাক্সওয়েল। করলেন বিরাট দ্বিশতরান। পায়ে ক্র্যাম্প ধরায় হাঁটতে পারছিলেন না ম্যাক্সওয়েল। কার্যত এক পায়ে খেলেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন তিনি। ওয়াংখেড়ে দেখল ১২৮ বলে ২০১ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস। গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানাল তাঁকে।
ম্যাক্সওয়েল দেখালেন ক্রিকেটকে কেন মহান অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয়। সেখানে শেষ বল হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না। নইলে কে ভেবেছিলেন খেলার ছবি এ ভাবে বদলে যাবে। আফগানিস্তানের বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা করছিলেন তিনি। মাঠের এমন কোনও কোনা নেই যেখানে শট মারেননি তিনি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কভার থেকে মিড উইকেটের দিকে ছক্কা হাঁকালেন। আবার তাঁর সুইচ হিট থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে বাউন্ডারিতে গিয়ে পড়ল। স্রেফ মনের জোর আর নিজের শটের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে কী ভাবে শট খেলা যায় তা দেখালেন ম্যাক্সওয়েল। তার কোনও জবাব ছিল না আফগান বোলারদের কাছে। রশিদ খান থেকে শুরু করে নবীন উল হক, কেউ পারলেন না ম্যাক্সওয়েলকে ফেরাতে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব থেকে বড় রান তাড়া করে জিতল অস্ট্রেলিয়া। ওয়াংখেড়েতেও রানের ব্যবধানে এটি সব থেকে বড় জয়।
এই জয়ের ফলে তৃতীয় দল হিসাবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল অস্ট্রেলিয়া। অন্য দিকে জেতার মুখ থেকে ম্যাচ হেরে নিজেদের সেমিফাইনালে যাওয়ার অঙ্ক নিজেরাই কঠিন করে ফেলল আফগানিস্তান। যদিও এখনও সুযোগ রয়েছে তাদের।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের ব্যাটিংকে টানলেন ইব্রাহিম জাদরান। এ বারের বিশ্বকাপে দলের সব থেকে ধারাবাহিক ব্যাটার এই ম্যাচেও রান করলেন। রহমানুল্লা গুরবাজ ২১ রান করে আউট হন। দলের মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের সঙ্গে একের পর এক জুটি গড়লেন ইব্রাহিম। রহমত শাহ (৩০), শাহিদি (২৬), আজমাতুল্লা ওমরজাই (২২) প্রত্যেকে শুরু করলেও বড় রান করতে পারেননি। কিন্তু এক দিকে টিকেছিলেন ইব্রাহিম।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান পাননি ইব্রাহিম। ভাল খেলেও ৮৭ রান করে আউট হয়েছিলেন। এই ম্যাচে তা হতে দিলেন না। ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেন। আফগানিস্তানের প্রথম ব্যাটার হিসাবে বিশ্বকাপে শতরান করলেন। শেষ ১০ ওভারে ৯৬ রান তুলল আফগানিস্তান। ইব্রাহিমকে সঙ্গ দিলেন রশিদ। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কদের বল উড়ে গিয়ে পড়ল ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৯১ রান করে আফগানিস্তান। ইব্রাহিম ১২৯ ও রশিদ ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। দ্বিতীয় ওভারেই নবীন উল হকের বলে শূন্য রানে আউট হন ট্রাভিস হেড। সেই শুরু। পাওয়ার প্লে-তে মিচেল মার্শকেও আউট করেন নবীন। ডেভিড ওয়ার্নার শুরু থেকেই সমস্যায় ছিলেন। তাঁকে ফেরান আজমাতুল্লা। পরের বলেই শূন্য রানে আউট হন জশ ইংলিশ।
এই পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে টানতে পারতেন স্টিভ স্মিথ ও মার্নাশ লাবুশেন। স্মিথ এই ম্যাচে দলে ছিলেন না। লাবুশেন ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন। তাতে বড় ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। রশিদ বল করতে এসেই আউট করেন মার্কাস স্টোইনিসকে। ৮৭ রানে ৬ উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, রান তাড়া করতে নেমে চাপে পড়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। নইলে আফগান বোলারদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাটারেরা যে ভাবে শট খেললেন তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অপরাধ।
এই পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জেতা প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হল ম্যাক্সওয়েলের লড়াই। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেললেন তিনি। ম্যাক্সওয়েলকে ভাগ্যও সঙ্গ দিল। তাঁর সহজ ক্যাচ পড়ল। কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টানছিলেন ম্যাক্সওয়েল। যত ক্ষণ তিনি ছিলেন তত ক্ষণ সামান্য আশা টিকে ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি। ফলে বড় শট খেলা শুরু করেন। মুম্বইয়ের ছোট মাঠ তাঁর কাজ কিছুটা সহজ করছিল। ৭৬ বলে শতরান করেন তিনি। এ বারের বিশ্বকাপে এটি ম্যাক্সওয়েলের দ্বিতীয় শতরান। ১০০ রানের জুটি হয় দুই ব্যাটারের মধ্যে। পায়ে ক্র্যাম্প ধরায় দৌড়তে পারছিলেন না ম্যাক্সওয়েল। বার বার ফিজিয়ো মাঠে ঢুকে তাঁকে পরীক্ষা করছিলেন। তার পরেও হাল ছাড়েননি তিনি। জানতেন, দলকে জেতাতে হলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হবে তাঁকে। কামিন্সও ধৈর্য ধরে খেলছিলেন।
শেষ দিকে নড়তেও পারছিলেন না ম্যাক্সওয়েল। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলছিলেন। তার পরেও প্রতি ওভারে চার-ছক্কা মারছিলেন। ম্যাক্সওয়েলকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কতটা যন্ত্রণা হচ্ছে তাঁর। কিন্তু লড়াই ছাড়েননি। যোদ্ধার মতো বুক চিতিয়ে লড়ছিলেন। লক্ষ্য যত কাছে আসছিল তত চাপ বাড়ছিল আফগানিস্তানের উপর। ফিল্ডিংয়েও ভুল করছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ছক্কা মেরে দলকে জেতালেন ম্যাক্সওয়েল। ছক্কা মেরেই করলেন নিজের দ্বিশতরান। ১৯ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতল অস্ট্রেলিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy