এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন করল হংকং ক্রিকেট দল। ছবি টুইটার
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে হারিয়ে এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে হংকং। এই দেশের স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে সে ভাবে আগ্রহ নেই। মূলত এশিয়ার অভিবাসীরাই সেখানে ক্রিকেট খেলেন। আমিরশাহির বিরুদ্ধে হংকংয়ের প্রথম একাদশ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, দলে আট জন মুসলিম ক্রিকেটার ছিলেন। অর্থাৎ সেই ম্যাচে ৭৩ শতাংশ মুসলিম ক্রিকেটার খেলেছিলেন। এর মধ্যে দু’জনের জন্ম হংকংয়ে। বাকিদের প্রত্যেকেরই জন্ম পাকিস্তানে। এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ১৭ জনের যে দল রয়েছে, সেখানে ১২ জনই, অর্থাৎ ৭১ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। কিছু ভারতীয়ও রয়েছেন। তবে তাঁরা কেউ মুসলিম নন।
বুধবার আমিরশাহির বিরুদ্ধে হংকংয়ের যে দল খেলেছে, তাতে আট জন পাকিস্তানের বা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। এর মধ্যে অধিনায়ক নিজাকত খান রয়েছেন। এ ছাড়া, ওপেনার ইয়াসিম মুর্তাজা, বাবর হায়াত, আইজাজ খান, এহসান খান, জিশান আলি, মহম্মদ গাঞ্জানফর এবং হারুণ আর্শাদ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। প্রথম একাদশে থাকা দুই ভারতীয় হলেন আয়ুষ শুক্ল এবং কিঞ্চিত শাহ। ১৭ জনের দলে আরও দুই ভারতীয় হলেন অহন ত্রিবেদী এবং ধনঞ্জয় রাও। দলে এক ইংরেজ ক্রিকেটারও রয়েছেন। তিনি স্কট ম্যাকেনি।
মুসলিমপ্রধান দেশ না হওয়া সত্ত্বেও কেন হংকংয়ের দলে এত মুসলিমদের আধিক্য?
জানতে গেলে একটু পরিসংখ্যান দেখা দরকার। ২০১৬-য় শেষ বার হংকংয়ে জনগণনা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, হংকংয়ের প্রায় ৭৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র তিন লক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ গোটা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৪.১ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোক ইন্দোনেশিয়ার, যারা মুসলিমপ্রধান দেশ। সে দেশের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ বসবাস করেন হংকংয়ে। এ ছাড়া, চিনের ৫০ হাজার এবং পাকিস্তানের ৩০ হাজার মানুষ রয়েছেন হংকংয়ে। বাকি মুসলিমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের। আশ্চর্যের হলেও এটাই সত্যি, ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা হংকংয়ে জনসংখ্যায় বেশি হলেও তাদের দেশের কেউ ক্রিকেট দলে নেই। সেখানে পাকিস্তানের আধিক্য, যারা কি না হংকংয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে তৃতীয় স্থানে।
আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। হংকংয়ে মুসলিম জনসংখ্যা যে দু’টি দেশের সবচেয়ে বেশি, সেই ইন্দোনেশিয়া বা চিনে ক্রিকেট খেলার কোনও চল নেই। কোনও দিনই ছিল না। অন্য দিকে, পাকিস্তানের ক্রিকেট-প্রেম কারওরই অজানা নয়। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেটবিশ্বের প্রথম সারির দেশেও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটাররা খেলেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটাররা ছড়িয়ে রয়েছেন। এশিয়াতেও তাই। ফলে হংকং ব্যতিক্রম নয়।
হংকং দলে পাকিস্তানের যে সব ক্রিকেটার রয়েছেন, তাঁদের কেউ হয়তো সে দেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছেন, আবার কারওর পরিবার দীর্ঘ দিন আগেই সে দেশে পাকাপাকি ভাবে থাকা শুরু করেছেন। হংকং জাতীয় দলে প্রতিযোগিতা কম থাকায় এবং স্থানীয় লোকের ক্রিকেট নিয়ে কোনও উৎসাহ না থাকায় পাকিস্তান বংশোদ্ভূতদের সুযোগ পাওয়া আরও সহজ হয়েছে।
তবে এটাও সত্যি, হংকং দলকে দীর্ঘ দিন যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি কোনও পাকিস্তানি নন, এক ভারতীয়। নাম অংশুমান রথ। ২০১৮-র এশিয়া কাপে তাঁর নেতৃত্বে ভারতকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল হংকং। ভারতের পাসপোর্ট পাওয়ার পর গত বছর এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে চলে আসেন। ওড়িশার হয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি এবং রঞ্জিতে খেলেছেন। তার আগে হংকংয়ের হয়ে ১৮টি এক দিনের ম্যাচ এবং ২০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। দেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত এক দিনের সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ স্কোর তাঁরই নামের পাশে।
ক্রিকেটবিশ্বে একদমই আনকোরা দেশ হলেও হংকংয়ে ক্রিকেট শুরু বহু আগে থেকেই। ভারত, পাকিস্তান-সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মতো হংকংয়েও ব্রিটিশরা এই খেলা চালু করে। ইতিহাস বলছে, হংকং প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ১৮৪১ সালে। তবে স্বীকৃত ম্যাচ খেলা শুরু ১৮৬৬ সালে। তখন মূলত চিনা প্রদেশগুলির বিরুদ্ধে খেলত তারা। ১৮৯২ সালে শাংহাইতে একটি ম্যাচ খেলে ফেরার পথে হংকং দলের ১১ ক্রিকেটার টাইফুনের কবলে পড়ে মারা যান। তাঁদের জাহাজ ডুবে যায়। ১৯৬৯ সালে আইসিসি-র সদস্য দেশ হয় হংকং। তার পর থেকেই সে দেশে ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়।
তবে হংকং ক্রিকেটের আসল উত্থান ২০০০-এর পর থেকে। সে বছর এসিসি ট্রফির ফাইনালে উঠেছিল তারা। হারলেও ২০০৪ সালের এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন করে। এর পর বিশ্ব ক্রিকেট লিগ, আইসিসি-র আন্তঃমহাদেশীয় কাপ-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলেছে তারা। এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে প্রথম ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে আট রানে হারিয়েছে তারা। বাকি দুই ম্যাচে কুয়েত এবং আমিরশাহিকে হারিয়েছে আট উইকেটে।
এশিয়া কাপে রোহিত শর্মা, বাবর আজমদের খেলতে হবে সম্পূর্ণ অচেনা এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে হারিয়ে এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে হংকং। ভারত, পাকিস্তানের মতো এশিয়ার মহাশক্তিধর দেশের গ্রুপেই পড়েছে তারা। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এই গ্রুপে সবচেয়ে দুর্বল দেশ তারাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy