অর্শদীপ পাশে পেয়েছেন পরিবার, কোচ ও পঞ্জাবের ক্রীড়ামন্ত্রীকে। —ফাইল চিত্র
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ফস্কে ‘খলনায়ক’ হয়ে গিয়েছেন অর্শদীপ সিংহ। নেটমাধ্যমে লাগাতার সমালোচনা করা হচ্ছে তাঁর। জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়ায় অর্শদীপের পেজের বিবরণ বদলে তাঁকে ‘খালিস্তানি’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। যত সমালোচনা বাড়ছে তত সমর্থন পাচ্ছেন ভারতীয় বোলার। হরভজন সিংহ, সুনীল গাওস্করের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটাররা আগে মুখ খুলেছিলেন। এ বার পরিবার ও কোচকে পাশে পেয়েছেন অর্শদীপ। সমর্থন করেছেন পঞ্জাবের ক্রীড়ামন্ত্রীও।
অর্শদীপের বাবা দর্শন সিংহ ও মা বলজিৎ কৌর ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও সমালোচনা কানে নিচ্ছেন না। অর্শদীপও খুব একটা বিচলিত নন বলে জানিয়েছেন দর্শন। তিনি বলেন, ‘‘অর্শদীপ আমাকে বলেছে, ও সব দেখেশুনে হাসছে। এই সমালোচনা থেকে ও মনে আরও জোর পাচ্ছে। ওর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ছে।’’
ভারতীয় বোলারের মা জানিয়েছেন, সমালোচনা না হলে জীবনে উন্নতি করা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘যদি সমালোচনা না হয় তা হলে জীবনে উন্নতি করা যাবে না। এই ঘটনার কোনও তদন্ত হচ্ছে কি না জানি না। মানুষ আবেগের বশে অনেক কিছু বলে ফেলে। তাতে অর্শদীপের কোনও সমস্যা হবে না। ও জানে ওকে কী ভাবে খেলতে হবে।’’
অর্শদীপের কোচ যশবন্ত রাই আবার জানিয়েছেন, একটা ক্যাচ ফস্কানোর জন্য তাঁর ছাত্রের এতটা সমালোচনা হবে সেটা তিনি ভাবতে পারেননি। যশবন্ত বলেন, ‘‘ক্যাচ ফস্কানো খেলার অঙ্গ। বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদেরও ক্যাচ পড়ে। একটা ক্যাচ ফস্কানোর জন্য যে অর্শদীপের এত সমালোচনা হবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি। ভারতকে হারানোর জন্য পাকিস্তানের ব্যাটারদের প্রশংসা করা উচিত। আমি অনুরোধ করব খেলাকে খেলার মতো নিন। দয়া করে এ ভাবে কাউকে ব্যঙ্গ করবেন না।’’
যশবন্তের অভিযোগ, অর্শদীপের ক্যাচ নিয়ে সবাই কথা বলছে, কিন্তু ওর বোলিং নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচেই ও ভাল বল করেছে। প্রথম ম্যাচে যখন ও দু’উইকেট নিয়েছিল তখন সবাই ওর প্রশংসা করেছিল। আগের ম্যাচেও শেষ ওভারে এসে ও নিজের সেরাটা দিয়েছে। খেলায় হার-জিত থাকতেই পারে।’’ তবে এই সমালোচনার ফলে তাঁর ছাত্র আরও মানসিক জোর পাবেন বলে মনে করেন তিনি। যশবন্ত বলেন, ‘‘অর্শদীপ তরুণ। এ সব সমালোচনা ওর আত্মবিশ্বাস কমাতে পারবে না। উল্টে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ও ফিরে আসবে।’’
অর্শদীপ পাশে পেয়েছেন পঞ্জাবের ক্রীড়ামন্ত্রী গুরমীত সিংহকেও। তিনি অর্শদীপের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। গুরমীতের কথায়, ‘‘গোটা দেশ অর্শদীপের পাশে রয়েছে। ও যে দিন দেশে ফিরবে আমি নিজে ওকে স্বাগত জানাতে যাব। আমি জানি ভারতকে এশিয়া কাপ জেতাতে বড় ভূমিকা নেবে অর্শদীপ।’’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৮তম ওভারে আসিফ আলির ক্যাচ ফেলে দেন অর্শদীপ। সেই আসিফই পরের ওভারে ১৬ রান করে ম্যাচ প্রায় জিতিয়ে দেন। এর পরেই এক শ্রেণির লোক সরাসরি খলনায়ক বানিয়ে দেন অর্শদীপকে। নেটমাধ্যমে তাঁর নামে বিভিন্ন সমালোচনামূলক টুইট ভেসে আসে। এর মধ্যেই কেউ অর্শদীপের উইকিপিডিয়া পেজেও সম্পাদনা করে ‘ভারত’ শব্দের বদলে অনেকগুলি জায়গায় ‘খালিস্তান’ শব্দ বসিয়ে দেয়। এতেই নড়েচড়ে বসেছে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের ধারণা, এতে সাম্প্রদায়িক ঐক্য নষ্ট হতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তবে পেজে বদল আনার ১৫ মিনিটের মধ্যে তা সরিয়ে দেন উইকিপিডিয়ার সম্পাদকরা।
সংবাদ সংস্থার দাবি, সরকারের তরফে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল তৈরি করা হবে। তাঁরা উইকিপিডিয়ার প্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। কী ভাবে অর্শদীপের পেজের বিবরণ বদলাল, তা জানতে চাইতে পারেন। উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে সংস্থাকে কারণ দর্শানোর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি, এতে পাকিস্তানি যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। প্রসঙ্গত, উইকিপিডিয়ার কিছু পেজ যে কেউ সম্পাদনা করতে পারেন। ফলে কোনও ব্যবহারকারীর পক্ষে এই পেজে ঢুকে সম্পাদনা করা অসম্ভব নয়।
অর্শদীপের পাশে দাঁড়িয়েছেন দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার। ক্ষুব্ধ হরভজন সিংহ লিখেছেন, ‘তরুণ অর্শদীপের সমালোচনা বন্ধ করুন। কেউ ইচ্ছে করে ক্যাচ ফেলে দেয় না। আমরা আমাদের ছেলেদের জন্য গর্বিত। পাকিস্তান তুলনায় ভাল খেলেছে। যাঁরা আমাদের দল এবং অর্শদীপের উদ্দেশে খারাপ মন্তব্য করছেন বা হেয় করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের দেখে লজ্জা হয়। অর্শদীপ সোনা।’
২৩ বছরের অর্শদীপ সমর্থন পেয়েছেন সীমান্তের ওপার থেকেও। পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার হাফিজ লিখেছেন, ‘ভারতীয় দলের সব সমর্থককে অনুরোধ করছি। খেলার মধ্যে আমাদের ভুল হয়েই থাকে। আমরাও মানুষ। দয়া করে কাউকে এই ভুলের জন্য অপমান করবেন না।’ অর্শদীপের পাশে দাঁড়িয়ে ইরফান পাঠান নেটমাধ্যমে লিখেছেন, ‘অর্শদীপ খুবই দৃঢ় চরিত্রের। তুমি এমনই থাকো।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy