বেন স্টোকস। —ফাইল চিত্র।
অ্যাশেজ সিরিজ়ে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড শিবির ক্ষুব্ধ। নিজেদের খারাপ পারফরম্যান্সের থেকেও ইংরেজদের ক্ষোভ বেশি জনি বেয়ারস্টোর আউট ঘিরে। এখনকার অধিনায়ক বেন স্টোকস অসন্তোষ প্রকাশ করলেও ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তিন অধিনায়ক কিন্তু তাঁদের পাশে নেই। তাঁরা বেয়ারস্টোর উদাসীনতা বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকেই দুষছেন।
ইংল্যান্ডের দাবি, বেয়ারস্টো রান আউট ছিলেন না। কারণ বল ‘ডেড’ (একটি বলের পর যখন আর রান নেওয়া যায় না বা আউট করা যায় না) হয়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার দাবি বল ‘ডেড’ হয়নি। আম্পায়ার আউট দিয়েছেন। ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো বল লক্ষ্য করেননি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি সঙ্গে সঙ্গে বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো। যদিও অনেকের মতে এটাকে স্টাম্প আউটও বলা যায়। এই ঘটনা নিয়ে লর্ডস টেস্ট শেষ হওয়ার পরেই বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই শিবিরের। স্টোকস তো বলেছেন তিনি এমন কাজ করতেন না। এটা ক্রিকেটের নীতির বিরোধী বলে মনে হয়েছে ইংরেজ অধিনায়কের। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মনে করছেন, তাঁরা কোনও অন্যায় করেননি।
এই বিতর্কে সফরকারীদের পক্ষেই কথা বলেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রস বলেছেন, ‘‘ক্যারি বল ধরার সঙ্গে সঙ্গে ছুড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা নেই। বেয়ারস্টো ক্রিজ়ের বাইরে বেরিয়ে ভুল করেছে। অস্ট্রেলিয়া যা করেছে, তাতে কোনও ভুল নেই।’’ স্টোকসের বক্তব্য মানতে চাননি আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক অইন মর্গ্যানও। তিনি বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটীয় নীতি ভঙ্গ হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। বেয়ারস্টো আগের দুটো বল খেলেও একই কাজ করেছিল। ব্যাট করার সময় ও নিজের খেয়ালে থাকে।’’ আর এক প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক মাইক আথারটনও স্টোকসদের পাশে দাঁড়াননি। তিনি বলেছেন, ‘‘অভিযোগ করার মতো ইংল্যান্ডের কিছুই নেই। বেয়ারস্টোকে দেখে মনে হচ্ছিল ও ঝিমোচ্ছিল।’’
🤐🤐🤐#EnglandCricket | #Ashes pic.twitter.com/dDGCnj4qNm
— England Cricket (@englandcricket) July 2, 2023
স্টোকসদের ক্ষোভকে আমল দিচ্ছেন না ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কেরাই। বোয়ারস্টোর আউট ঘিরে যে বিতর্ক নেই, তা পরিষ্কার ক্রিকেটের নিয়মেও। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, বল তখনই ‘ডেড’ বলে বিবেচনা করা হবে, বল হয়ে যাওয়ার পরে যখন পিচের এক প্রান্তে থাকা আম্পায়ার মনে করবেন দুই ব্যাটার এবং ফিল্ডিং করা দল আর কিছু করতে চাইছেন না। রবিবার বেয়ারস্টো আউট হয়েছেন গ্রিনের ওভারের শেষ বলে। ক্যারির উইকেটে বল ছোড়ার সময় আম্পায়ার ওভার শেষ হওয়ার কথা ঘোষণা করেননি।
যদিও অতীতে এমন ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কেরা আউট হওয়া ব্যাটারকে ফিরিয়ে এনেছেন। ইংল্যান্ড কোচ ম্যাকালামই এ ভাবে আউট করেছিলেন পল কলিংউডকে। সে সময় নিউ জ়িল্যান্ডের অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টরি ইংরেজ ব্যাটারকে ফিরিয়ে এনেছিলেন মাঠে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অনেকটা এ ভাবে আউট করেছিলেন ইয়ান বেলকে। দৌড়ে রান নেওয়ার পর ক্রিজের বাইরে ছিলেন বেল। ফিল্ডারের কাছ থেকে বল পেয়ে ধোনি উইকেট ভেঙে দিয়েছিলেন। তৃতীয় আম্পায়ার রিপ্লে দেখে আউট দিলেও বেলকে ফিরিয়ে এনেছিলেন ধোনি।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কদের মতোই স্টোকসদের বক্তব্য সমর্থন করেননি অন্য প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও। সমালোচনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার ব্র্যাড হগ। তিনি বলেছেন, ‘‘বেয়ারস্টোকে আউট না দেওয়া হলে ক্রিকেটের লড়াইটাকেই বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হত। বেয়ারস্টো রান নেওয়ার চেষ্টা করেনি। তাও ক্রিজের বাইরে ছিল। ওভার শেষ ঘোষণা হলে ও ক্রিজের বাইরে যেতে পারত। সতীর্থের সঙ্গে কথা বলতে পারত।’’ স্টোকসের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন অলরাউন্ডার স্কট স্টাইরিশও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক্রিকেটে কোনও নিয়মই ক্রিকেটের নীতির পরিপন্থী নয়। নিশ্চিত ভাবেই আউট এবং এর মধ্যে কোনও বিতর্ক নেই।’’
অ্যাশেজ সিরিজ়ে দু’দলের বাগ্যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। সামান্য ঘটনা নিয়েও দুই শিবির পরস্পরকে আক্রমণ করে। কারণ অ্যাশেজ নিছক ক্রিকেটের লড়াই নয়। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়া উপহার হিসাবে নিয়ে গিয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy