Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
রোড টু স্পেন: ইস্টবেঙ্গল কোচের সফর-ডায়েরি
Coronavirus Lockdown

‘ন’টার সময় ধাবা, এই প্রথম কিছু খোলা পেলাম...’

ইচ্ছে করছিল, বাস থেকে নেমে মাঠের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াতে। কিন্তু আমাদের এই বিশেষ বাসের তো থামার উপায় নেই।

উদ্বেগ: মাদ্রিদে ফেরা নিয়ে চিন্তায়  থাকছেন মারিয়ো। ফাইল চিত্র

উদ্বেগ: মাদ্রিদে ফেরা নিয়ে চিন্তায় থাকছেন মারিয়ো। ফাইল চিত্র

মারিয়ো রিভেরা (ইস্টবেঙ্গল কোচ)
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০৪:২২
Share: Save:

সোমবার ভোর ৫টা: ঘুম ভেঙে বাইরের দিকে তাকাতেই মন ভরে গেল। অন্ধকার কেটে গিয়েছে। দু’দিকে সবুজ খেত। মাঝখান দিয়ে আমাদের বাস ছুটে চলেছে। নানা দুশ্চিন্তায় শনিবার রাতে ভাল ঘুম হয়নি। খুবই ক্লান্ত ছিলাম। তাই নৈশভোজের পরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

ভোর ৫.৪৫: দূরের আকাশে লাল আভা। সূর্যোদয়ের তা হলে আর বেশি দেরি নেই। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সূর্য উঠল। অসাধারণ দৃশ্য। ইচ্ছে করছিল, বাস থেকে নেমে মাঠের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াতে। কিন্তু আমাদের এই বিশেষ বাসের তো থামার উপায় নেই।

সকাল ৭.৩০: ভুলেই গিয়েছি কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছি। মনে হচ্ছিল যেন স্পেনেই রয়েছি। সব দেশেই গ্রামের ছবিটা মনে হয় এক। আমার বাড়ি মাদ্রিদে। সুযোগ পেলেই শহর ছেড়ে দূরে চলে যাই আমি। দূষণমুক্ত গ্রাম্য পরিবেশ আমার দারুণ লাগে। মাঠে কৃষকের কাজ করার দৃশ্য, পাখির ডাক আমাকে ভীষণ ভাবে টানে। তাই যেতে-যেতে সে সব দেখে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।

আরও পড়ুন: গভীর রাতে চা বানিয়ে খাওয়াল বাসের কর্মীরা

সকাল ৯.০০: রাস্তার ধারে একটা ধাবায় থামল আমাদের বাস। কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করার পরে এই প্রথম কোনও হোটেল খোলা পেলাম। সবাই খুব ক্লান্ত। ব্যতিক্রম মোহনবাগানের ফ্রান গঞ্জালেসের দু’বছরের ছেলে। এতটা রাস্তা ও একাই আমাদের মাতিয়ে রেখেছে। কোনও কান্নাকাটি নেই। খেলছে, হাসছে। ওকে নিয়েই আমাদের অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। এই ধাবাতেই প্রাতরাশ সেরে নিলাম। আমাদের সঙ্গে ফল ছিল। কেউ চা পান করল। কেউ কফি নিল। প্রাতরাশ শুরু করার আগে আমি একটু শারীরচর্চাও করে নিলাম।

সকাল ১০.০০: রাস্তার ধারে একটা জলাশয় দেখে গ্রানাদা হ্রদের কথা মনে পড়ে গেল। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমার মা ও স্ত্রী এখন গ্রানাদায় রয়েছেন। হ্রদের পাশেই আমাদের একটা ছোট্ট বাড়ি আছে। চারপাশের দৃশ্য এত সুন্দর যে, সারা দিন বারান্দায় বসেই সময় কেটে যায়।

সকাল ১১.৩০: অনেকক্ষণ বসে থাকতে থাকতে কোমরে ব্যথা হয়ে গিয়েছে। বাসচালকদের সঙ্গে গল্প করতে গেলাম। আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই ওঁরা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দিল্লি থেকে কলকাতায় গিয়েছিলেন। পৌঁছতে যাতে দেরি না হয়, তার জন্য রাস্তায় কোথাও বেশিক্ষণ দাঁড়াননি। দু’জন চালক পালা করে বাস চালাচ্ছেন। ওঁদের কাছেই শুনলাম, আগ্রা হয়ে আমরা দিল্লি পৌঁছব। এক বছর আগে তাজমহল দেখতে এসেছিলাম। যদিও এ দিন বাসে বসে আর দেখা হল না। মনে হয়, আমি যে দিকে বসেছিলাম, তার উল্টো দিকে ছিল তাজমহল। হায়! এক বার যদি চোখের দেখাও দেখতে পেতাম!

দুপুর ২.০০: নিরাপদেই দিল্লি পৌঁছলাম। হোটেলে পৌঁছে স্নান সেরে রুমেই পিৎজ়া অর্ডার করলাম।

সন্ধে ৬.৩০: বেশ কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে অনেকটা তরতাজা লাগছে। রাত সাড়ে ন’টায় আমাদের বিমানবন্দর রওনা হওয়ার কথা। বিমানবন্দরেই নৈশভোজ সেরে নেবে।

রাত ১০টা: দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছলাম। পুরো বিমানবন্দরটাই খাঁ খাঁ করছে। আমরা কয়েক জনই মাত্র যাত্রী। এ বার অপেক্ষা আমস্টারডামের বিমানে ওঠার।

(সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক অনুলিখন)

আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে দর্শক সমাগম নিয়েই ভয় অস্ট্রেলিয়ার

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Football Mario Rivera
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy