জুটি: কোহালি ও শাস্ত্রী। তাঁদের রসায়ন প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশেষজ্ঞদের। অধিনায়কই নেতা, মত রবির। ফাইল চিত্র
২৮ মার্চ: ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে একটা প্রশ্ন কয়েক বছর ধরে নিয়মিত উঠছে। দলের সত্যিকারের বস্ কে? অধিনায়ক বিরাট কোহালি না কোচ রবি শাস্ত্রী?
এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য ভারতীয় কোচের কাছে আছে। শাস্ত্রী পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, ভারতীয় দলের ‘বস্’ হলেন কোহালিই। একটি টিভি চ্যানেলের পডকাস্টে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেনের প্রশ্নের জবাবে শাস্ত্রী বলেন, ‘‘আমি সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি, অধিনায়কই বস্। কোচিং স্টাফের কাজটা হল, ছেলেদের এমন ভাবে তৈরি করে দেওয়া যাতে ওরা মাঠে নেমে ইতিবাচক, সাহসী ক্রিকেট খেলতে পারে।’’
নিজের কাজ নিয়ে শাস্ত্রী বলেছেন, ‘‘অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। আমাদের কাজ হল, অধিনায়কের বোঝা হাল্কা করা। প্রত্যেক ক্রিকেটারের কাছে গিয়ে তো অধিনায়ক কথা বলে না। সেটা আমার কাজ। আবার মাঠে নেমে অধিনায়কই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের কোনও কোচই সেই কাজটা করতে পারে না।’’ ফিল্ডিং এবং ফিটনেসে ভারতীয় ক্রিকেট দল যে ভাবে উন্নতি করেছে, তার জন্য কোহালিকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন শাস্ত্রী। বলছেন, ‘‘দলের ফিটনেস নিয়ে যখন কথা হয়, তখন বুঝতে হবে সেই ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বয়ং বিরাট। ও নিজেকে বলে, ‘আমি যদি এই খেলাটা খেলতে চাই, তা হলে আমাকে বিশ্বের সব চেয়ে ফিট ক্রিকেটার হতে হবে।’ নিজের শরীরটাকে কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তৈরি করেছে।’’
শাস্ত্রী মনে করেন, অধিনায়ককে এ রকম একটা উচ্চতায় পৌঁছতে দেখে দলের বাকি ক্রিকেটাররাও সমান উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। শাস্ত্রীর কথায়, ‘‘শুধু তো ট্রেনিং নয়, বিরাট অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। ওর ডায়েট সেটা বলে দেয়, জীবন নিয়ে ওর দৃষ্টিভঙ্গি সেটা বুঝিয়ে দেয়। আমি দেখেছি, বাকি ক্রিকেটাররাও কী ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।’’
এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস আক্রমণে থমকে গিয়েছে ক্রীড়া দুনিয়া। অন্যান্য ক্রীড়াবিদের মতো ভারতীয় ক্রিকেটাররাও এখন ঘরবন্দি। শাস্ত্রী মনে করেন, এর ফলে ক্রিকেটাররা প্রয়োজনীয় বিশ্রামটা পেয়ে যাচ্ছেন। শাস্ত্রী বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটারদের জন্য এই বিশ্রামটা খুব খারাপ জিনিস নয়। নিউজ়িল্যান্ড সফরের শেষের দিকে দেখা গিয়েছে ক্রিকেটারররা মানসিক ভাবে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তা ছাড়া ফিজিক্যাল ফিটনেসেও ছাপ পড়ছিল। চোট আঘাতও পাচ্ছিল ক্রিকেটাররা।’’
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন দুই অধিনায়ক মাইকেল আথারটন এবং নাসের হুসেনের সঙ্গে আলোচনায় শাস্ত্রী বলেন, ‘‘গত দশ মাসে এত ক্রিকেট খেলা হয়েছিল যে, তার ছাপটা সবার উপরে পড়তে শুরু করেছিল। এই ধরুন যেমন আমি আর কয়েক জন সাপোর্ট স্টাফ। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে আমরা ২৩ মে দেশ ছাড়ি। তার পর থেকে হয়তো ১০-১১ দিনও ঘরে কাটাতে পারিনি।’’
শুধু সাপোর্ট স্টাফই নন, অনেক ক্রিকেটারকেও যে এ রকম টানা সূচির মধ্যে খেলে যেতে হয়েছে, তা বলছিলেন শাস্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দলে এমন অনেক ক্রিকেটার আছে, যারা তিন ধরনের ক্রিকেটই খেলে। ভাবুন একবার, এদের কী অবস্থা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি থেকে টেস্ট ক্রিকেট— সব কিছুর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হচ্ছে। দিনের পর দিন। তার সঙ্গে কত জায়গায় যেতে হচ্ছে। যাতায়াতের ধকলটাও কম নয়।’’
বিশ্বকাপের পরে ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছিল। ফিরে এসে ঘরের মাঠে লম্বা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ। তার পরে নিউজ়িল্যান্ড সফর। এর পরে আবার দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ওয়ান ডে সিরিজও ছিল, কিন্তু করোনার ধাক্কায় তা বাতিল হয়ে যায়। ভারতে এখন ২১ দিনের লকডাউন চলছে। শাস্ত্রী জানাচ্ছেন, তাঁর দলের ক্রিকেটাররা ধরেই নিয়েছিলেন এ রকম কিছু হতে চলেছে। বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা একটা ধাক্কা সে বিযয়ে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের সময় অবস্থাটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এ রকম কিছু হবে, সেটা ছেলেরা ধরেই নিয়েছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘করোনাভাইরাস তখন সবে ছড়াতে শুরু করেছিল। দ্বিতীয় ওয়ান ডেটা বাতিল হয়ে যাওয়ার সময় আমরা বুঝতে পেরে যাই, লকডাউনের মতো কিছু একটা হবে এ বার।’’
ক্রিকেটাররা যে তারও আগে একটা আঁচ পেয়েছিলেন, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে শাস্ত্রীর কথায়। বলেছেন, ‘‘নিউজ়িল্যান্ড সফরেই ক্রিকেটাররা বুঝতে পেরেছিল, বড় কিছু একটা আসন্ন। ওই সফরের শেষেই সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিমান নিয়ে ভয় ছড়াতে শুরু করেছিল।’’ এও বলেন, ‘‘আমরা একেবারে ঠিক সময়েই ভারতে নেমেছি। ওই সময় নিউজ়িল্যান্ডে মাত্র দুটো ঘটনা ঘটেছিল করোনাভাইরাস নিয়ে। আর এখন সংখ্যাটা কোথায় চলে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy