জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।—ছবি এএফপি।
অলিম্পিক্স নিয়ে বাড়তে থাকা বিদ্রোহের সুর টের পেয়ে সুর নরম করতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। অন্য কথা বলতে শুরু করেছে জাপানও।
এ দিন কানাডা জানিয়ে দেয়, তারা টোকিয়ো অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করতে আসছে না। করোনায় আক্রান্ত কানাডাই প্রথম দেশ, যারা সরাসরি টোকিয়োর টিকিট প্রত্যাখ্যান করল। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও বলে দেয়, তারাও এখন টোকিয়োতে যাচ্ছে না। ২০২১-এ অলিম্পিক্স হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর পরেই আরও চাপে পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থা (আইওসি)। মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে আইওসি-র সদস্য ডিক পাউন্ড বলেছেন, ২০২০ অলিম্পিক্স এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘‘আইওসি-র কাছে যে তথ্য রয়েছে তার উপরে ভিত্তি করে অলিম্পিক্স পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঠিক কবে এই অলিম্পিক্স শুরু করা হবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে এ বছরের ২৪ জুলাই যে শুরু হচ্ছে না, সেটা বলতে পারি,’’ বলেন ডিক।
নানা দেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় সুর পাল্টাতে বাধ্য হন অলিম্পিক্স সংগঠনের কর্তারা। সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিজের দেশের সংসদে বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ অলিম্পিক্স যদি করা সম্ভব না হয়, তা হলে গেমস পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। জানা গিয়েছে, তিনি নাকি বলেছেন, ‘‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্ব এখন অলিম্পিক্সের জন্য তৈরি নয়।’’ জনপ্রিয় ব্যাখ্যা হচ্ছে, এই শেষ মুহূর্তে অলিম্পিক্স বাতিল করতে হলে প্রচুর টাকার ক্ষতি হবে সংগঠকদের। সেই কারণেই সময় নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার টোকিয়ো অলিম্পিক্স সংগঠক কমিটির প্রেসিডেন্ট ইয়োশিরো মোরি এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আমরা এখনও অলিম্পিক পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত নিইনি। কিন্তু অলিম্পিক্স যে পিছিয়ে দেওয়া হবে না, সেটাও বলা যাচ্ছে না।’’ যোগ করেন, ‘‘করোনাভাইরাসের আক্রমণে পৃথিবীর যা অবস্থা, তার পরে অলিম্পিক্স নির্ধারিত সময় হবেই, এটা বলার মতো বোকা আমি নই।’’ তবে সংগঠক কমিটির চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার তোশিরো মুতো জানিয়েছেন, পিছিয়ে গেলেও অলিম্পিক্স কোনও ভাবেই বাতিল করা হবে না। এ-ও জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে যে অলিম্পিক্স মশাল র্যালি হওয়ার কথা আছে, তা পরিকল্পনা অনুযায়ীই হবে। তবে সূচিতে কিছু বদল হলেও হতে পারে।
কানাডার অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক সংস্থা যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘আমরা জানি, অলিম্পিক্সের মতো একটা বিশাল মাপের প্রতিযোগিতা পিছিয়ে দেওয়াটা কতটা কঠিন। কিন্তু সবার আগে গুরুত্ব পাবে আমাদের অ্যাথলিটদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য। পাশাপাশি শুধু অ্যাথলিটদের স্বাস্থ্যই নয়, গুরুত্ব দিতে হবে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরেও।’’ অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিক কমিটির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে টোকিয়োয় দল পাঠাবে না অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের মধ্যে এক টেলিকনফারেন্সের পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। অস্ট্রেলিয়ার শেফ দ্য মিশন ইয়ান চেস্টারম্যান বলেছেন, ‘‘এটা পরিষ্কার যে, জুলাইয়ে কোনও ভাবেই অলিম্পিক্স হতে পারে না। আমাদের অ্যাথলিটরা যথেষ্ট ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু এই অনিশ্চয়তা এবং চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।’’ অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিক কমিটির সিইও ম্যাট ক্যারল জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের দেশের ক্রীড়াবিদরা ২০২১ সালে অলিম্পিক্স হতে পারে, এই ধরে নিয়ে এখন অনুশীলন করবেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সবাই অলিম্পিক্সে যোগ দিতে চায়। কিন্তু পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়েও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আমাদের অ্যাথলিটদের সামনে থেকে অনিশ্চয়তা দূর করা দরকার ছিল। আমরা সেটাই করলাম।’’
একই সুর শোনা গিয়েছে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স সংস্থার প্রধান সেবাস্তিয়ান কো-র মুখেও। তিনি বলেছেন, “আমরা এর আগে ডায়মন্ড লিগ বাতিল করেছি। আর এখন পরিস্থিতি যে দিকে বাঁক নিয়েছে, তাতে অলিম্পিক্স স্থগিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।” চাপে পড়ে আইওসি এখন বলা শুরু করেছে, অলিম্পিক্স বাতিল না হলেও পিছিয়ে দেওয়া হতেই পারে। শোনা যাচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ীও ডিসেম্বরের মধ্যে করা যেতেই পারে অলিম্পিক্স। সে রকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এমনকি নিজেদের অবস্থান এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে অলিম্পিকগামী ক্রীড়াবিদদের একটি চিঠিও লিখেছেন বাখ। গ্রেট ব্রিটেনের তরফে এ দিন আইওসিকে জানানো হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy