Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Gurdeep Singh

CWG 2022: মুসে ওয়ালার গানে নাচ, পদক জয়ের উৎসবে মাতলেন ভারত-পাকিস্তানের দুই ভারোত্তোলক

ভারতের গুরদীপের সাফল্যে নাচলেন পাকিস্তানের বাট। পাক ভারোত্তোলক নিজে সোনা জিতেছেন। তবু তিনি খুশি ভারতীয় বন্ধুর ব্রোঞ্জ জয়ে।

পদক জয়ের পর বাট এবং গুরদীপ।

পদক জয়ের পর বাট এবং গুরদীপ। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২২ ২০:৫২
Share: Save:

বার্মিংহামে এক সঙ্গে উৎসবে মাতলেন ভারত-পাকিস্তানের দুই ভারোত্তোলক। পরস্পরের সঙ্গে উপভোগ করলেন সাফল্য। যেখানে দু’দেশের ‘শত্রুতা’ নেই। আছে শুধুই সম্প্রীতি।

কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনের ১০৯ কেজির বেশি বিভাগে সোনা জিতেছেন পাকিস্তানের মহম্মদ নুহ বাট। একই বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন ভারতের গুরদীপ সিংহ। গুরদীপ পঞ্জাবের খান্না জেলার বাসিন্দা। বাট থাকেন পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালায়। দু’জনের বাড়ির দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন বহু বার। কখনও জিতেছেন ভারতের গুরদীপ। কখনও পাকিস্তানের বাট। দুই ভারোত্তোলকের মধ্যে প্রতিযোগিতা যত তীব্র হয়েছে, তত দৃঢ় হয়েছে বন্ধুত্ব। দু’দেশের বৈরিতা প্রভাব ফেলতে পারেনি তাঁদের সম্পর্কে। সীমান্তের কাঁটাতার কখনই তাঁদের সম্পর্কের কাঁটা হয়নি।

প্রতিযোগিতার মঞ্চে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। কিন্তু একে অপরকে পরামর্শ দেন। এমনই তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বার্মিংহামে একই সঙ্গে পদক জিতেছেন দু’জনে। পরস্পরের সাফল্যে তাঁরা উচ্ছ্বসিত। পদক জয়ের পর দু’জনে এক সঙ্গে উৎসবে মাতেন। বাট বলেছেন, ‘‘গুরদীপ আর আমি দারুণ বন্ধু। সোনা জয়ের পর আমিই প্রথম গুরদীপকে ওর পদকের জন্য অভিনন্দন জানাই। পরে আমরা দু’জনে মিলে পার্টি করেছি। সিধু মুসে ওয়ালার গান চালিয়ে একটু নাচানাচিও করলাম।’’

ভারতীয় ভারোত্তোলকের মুখেও শোনা গিয়েছে পাক বন্ধুর কথা। গুরদীপ বলেছেন, ‘‘বাট আর আমি ছোট থেকেই বন্ধু। ছয় বছর আগে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। তখনই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। নিজেদের খাদ্যতালিকা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। পরস্পরকে নানা পরামর্শও দিয়েছিলাম। আমরা দু’জনেই পঞ্জাবিতেই কথা বলি। আমাদের বন্ধুত্ব হওয়ার অন্যতম কারণ এটা।’’

সীমান্তের দু’দিকে দুজনের বাড়ি। দেশ আলাদা হলেও খাওয়া-দাওয়া, সংস্কৃতির মিল রয়েছে প্রচুর। দু’জনেই প্রয়াত গায়ক মুসে ওয়ালার ভক্ত। বাট বলেছেন, ‘‘প্রথম যখন মুসে ওয়ালার মৃত্যুর খবর শুনি, প্রথমেই গুরদীপকে মেসেজ করি। ওর থেকেই নিশ্চিত হয়েছিলাম। আমার বাড়িতে জিম রয়েছে। সেখানে অনুশীলনের সময় মুসে ওয়ালার গান চালিয়ে রাখি। তাতে অনুশীলন ভাল হয় আমার।’’

রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও ভারতের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বাটের। পাক ভারোত্তোলক বলেছেন, পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা ভারতে সব সময়ই দারুণ ব্যবহার পায়। দু’দেশের নানা বিষয়ে বিরোধ থাকলেও খেলার ক্ষেত্রে তা কখনও সমস্যা তৈরি করে না। বাট বলেছেন, ‘‘অনেকেই বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মানুষ জন্ম থেকেই একে অন্যের শত্রু হয়। এই কথাগুলো শুনলে অবাক লাগে। ভারতীয়রা তো আমাকে সব সময় ভালবাসা দিয়েছেন। সমর্থন করেছেন। আমরাও ভারতের খেলোয়াড়দের পছন্দ করি। ভারতও আমাদের প্রিয় দেশ। ভারতীয় ভারোত্তোলকদের মধ্যে মনজিৎ সিংহের সঙ্গেও আমার দারুণ বন্ধুত্ব। ভারতীয় ভারোত্তোলন সংস্থার প্রাক্তন সচিব বলবীর সিংহের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক দারুণ। আমার প্রতিটা দিন ওদের শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েই শুরু হয়।’’

দু’বার ভারতে এসেছেন পাক ভারোত্তোলক। বাট বলেছেন, ‘‘দু’বার ভারতে গিয়েছি প্রতিযোগিতার জন্য। এক বার পুণেতে, এক বার গুয়াহাটিতে। ভারতে যে আতিথেয়তা পেয়েছি, তা অন্য কোনও দেশে ভাবাই যায় না। বলতে সমস্যা নেই পাকিস্তানের থেকে ভারতেই আমার সমর্থক বেশি। গুয়াহাটি থেকে ফেরার সময় হোটেলের কর্মীদের চোখেও জল দেখেছি। এই ভালবাসা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।’’

মীরাবাই চানুর মতো অলিম্পিক্সে পদক জিততে চান বাট। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদকজয়ী ভারতীয়ই তাঁর আদর্শ। সুযোগ পেলে তাঁর কাছেও পরামর্শ নিয়ে নেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy