Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cricket

সেলাম সিরাজ! বাবার লড়াইকে শ্রদ্ধা কোচেরও মুখেও

দেশের প্রতিনিধিত্ব করেই বাবার আত্মার শান্তি কামনা করবেন হায়দরাবাদের তরুণ পেসার।

অদম্য: প্রয়াত বাবার স্বপ্ন সফল করতে মরিয়া সিরাজ। ফাইল চিত্র

অদম্য: প্রয়াত বাবার স্বপ্ন সফল করতে মরিয়া সিরাজ। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৮:২৪
Share: Save:

বাবার মৃত্যুর খবর পান শুক্রবার ভারতীয় দলের অনুশীলন শেষে। ভারতীয় বোর্ড তাঁকে প্রস্তাব দেয় এই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি মহম্মদ সিরাজ। বাবা মহম্মদ ঘউস সারা জীবন লড়াই করে অর্থ উপার্জন করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ছেলেকে দেশের জার্সিতে দেখবেন বলে। বাবার সেই স্বপ্নের কথা মাথায় রেখে সিরাজ জানিয়ে দেন, দেশে ফিরবেন না। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় দলের সঙ্গেই থাকবেন।

দেশের প্রতিনিধিত্ব করেই বাবার আত্মার শান্তি কামনা করবেন হায়দরাবাদের তরুণ পেসার। তাঁর এই মনোভাবে বিস্মিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। টুইট করেছেন, "অসাধারণ চরিত্রের উদাহরণ দিল সিরাজ। ওর অস্ট্রেলিয়া সফর সফল হোক।"

সিরাজের ক্রিকেটার হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও লড়াই। হায়দরাবাদের ফার্স্ট ল্যান্সার বস্তিতে জন্ম সিরাজের। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। অটোচালক বাবার পক্ষে ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। তবুও ছেলের ইচ্ছেপূরণের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন ঘউস। দুই কিলোমিটার দূরে স্পোর্টস কোচিং ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান সিরাজকে। কিন্তু সেখানে বেতন দেওয়ার মতোও আয় ছিল না। তবুও সিরাজের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন ছোটবেলার কোচ সাইবাবা-কে। খুদে সিরাজের বোলিং দেখেই চমকে ওঠেন কোচ। কী বলেছিলেন ঘউসকে? শনিবার হায়দরাবাদ থেকে আনন্দবাজারকে সিরাজের কোচ বলেন, "আমি কয়েকটা বল দেখার পরেই ওর বাবাকে গিয়ে বলি, কোনও বেতন লাগবে না। তোমার ছেলের মধ্যে দারুণ প্রতিভা রয়েছে। ওকে আমার হাতে তুলে দাও।" সে দিন থেকেই শুরু হয় সিরাজের যাত্রা।

ক্লাবে ক্রিকেট সরঞ্জাম পেলেও জগার্স পরে তো পেস বোলিং সম্ভব নয়। ম্যাচে সমস্যা হবেই। অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগ দলে প্রথম পছন্দ ছিলেন সিরাজ। ম্যাচ খেলতেই হবে। কী করলেন তখন সিরাজের বাবা? কোচের উত্তর, "আমাকে বললেন, যে কোনও ভাবে ওর জুতো কিনে আনব। আপনি ওকে দলে রাখুন। এখনও মনে আছে, সারা রাত শহরে অটো চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন ঘউস ভাই। সেই অর্থে সিরাজকে প্রথম বোলিং স্পাইকস কিনে দেন। সিরাজ হয়তো এই মনের জোর ওর বাবার কাছ থেকেই পেয়েছে।"

সিরাজ নিজেও কতটা সাহসী, তার উদাহরণও দিলেন ছোটবেলার কোচ। বলছিলেন, "অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগের ম্যাচে ব্যাট করার সময় ইয়র্কার আছড়ে পড়ে সিরাজের পায়ে। মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার পরে দেখি চোটের জায়গাটা নীল হয়ে গিয়েছে রক্ত জমাট বেঁধে। ভেবেছিলাম, এই ম্যাচে ওর পক্ষে বল করা সম্ভবই না।" যোগ করেন, "আমাদের বোলিং শুরু হওয়ার পাঁচ ওভারের মধ্যেই হঠাৎ এসে বলে আমি বল করব। বলেছিলাম, ভেবে দেখ। পা তো এখনও ফুলে আছে। নাছোড় সিরাজ মাঠে নামলই। এমনকি ছোট স্টেপে বল করে তিন উইকেট নিয়ে জিতিয়ে দিল আমাদের।"

সিরাজের এই মনের জোরই আজ হয়তো তাঁর সব চেয়ে বড় শক্তি। সঙ্গে তো আছেই অদম্য এক বাবার আশীর্বাদ।

অন্য বিষয়গুলি:

cricket Mohammed siraj India Sourav Ganguly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy