Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Chuni Goswami

চন্দননগরকে কখনও ভোলেননি ‘মাঠের উত্তমকুমার’

চন্দননগরের মাঠের সবুজ ঘাস এখনও এই ছবি তুলে ধরে প্রবীণ-প্রবীণার চোখে। মনে হয়, এই সে দিনের কথা! চুনী গোস্বামী তাঁদের কাছে চিরনতুন!

মধ্যমনি: সিসি ক্লাবের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তিতে কুটির মাঠে প্রীতি ক্রিকেটে চুনী গোস্বামী (চিহ্নিত) ও অন্যান্যরা। বাংলার তৎকালীন তারকা গোপাল বসু, দিলীপ দত্তও রয়েছেন। ছবিটি অভীক চট্টোপাধ্যায়ের সংগ্রহ থেকে পাওয়া।

মধ্যমনি: সিসি ক্লাবের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তিতে কুটির মাঠে প্রীতি ক্রিকেটে চুনী গোস্বামী (চিহ্নিত) ও অন্যান্যরা। বাংলার তৎকালীন তারকা গোপাল বসু, দিলীপ দত্তও রয়েছেন। ছবিটি অভীক চট্টোপাধ্যায়ের সংগ্রহ থেকে পাওয়া।

প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৩:২৫
Share: Save:

তাঁর ড্রিবলে ছিটকে যাচ্ছেন প্রতিপক্ষের স্টপার। সেই তিনিই প্রবল বিক্রমে ব্যাট ঘোরাচ্ছেন। শিকার করছেন বিপক্ষের উইকেট। বাউন্ডারি লাইনে বল বাঁচাচ্ছেন। বদলে দিচ্ছেন ম্যাচের রং!

চন্দননগরের মাঠের সবুজ ঘাস এখনও এই ছবি তুলে ধরে প্রবীণ-প্রবীণার চোখে। মনে হয়, এই সে দিনের কথা! চুনী গোস্বামী তাঁদের কাছে চিরনতুন! মাঠ দাপানো দামাল ছেলে!

গত শতকের পাঁচ-ছয়ের দশকে চন্দননগরে খেলেছেন চুনী। সিসি ক্লাবের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সুধীর ঘোষের সঙ্গে চুনীর দাদা মানিকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রেই চুনী-মানিকের সাবেক ফরাসডাঙায় আগমন। সিসি ক্লাবের হয়ে ফুটবল-ক্রিকেটে দাপিয়ে খেলেছেন দুই ভাই। ছয়ের দশকে মোহনবাগানে থাকার সময় চুনী দুই খেলাতেই চন্দননগর ক্রীড়া জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মাঝে চন্দননগর স্পোর্টিং ক্লাবে গেলেও সিসি ক্লাবে ফিরে আসেন।

ওই ক্লাবের ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন মোহিত ঘোষ ওরফে মনুদা। তিনি ইস্টবেঙ্গলেও খেলেছেন। সিসি ক্লাবে তাঁর অধিনায়কত্বে খেলেছেন চুনী। অষ্টআশি বছরের সতীর্থের শংসাপত্র, ‘‘চুনী অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল খেলত। বল নয়, চোখ থাকত সামনের দিকে। পরের স্টেপ আগেই ভাবা থাকত।’’

মোহিতের শ্বশুর বিমলচন্দ্র সেন ফরাসি আমলে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন। মোহিতের স্ত্রী রত্না স্মৃতির সরণিতে হাঁটেন, ‘‘চুনী-মানিক সুধীরবাবুর বাড়িতেই থাকতেন। কয়েক দিন আমাদের বাড়িতে ছিলেন। স্কুলে পড়ার সময় কুটির মাঠে ফুটবল লিগে চুনীকে দেখেছি। অসম্ভব ক্রেজ় ছিল। ওঁকে দেখতে মাঠ ভরে যেত। পরেও অনেক বার দেখা হয়েছে। ওঁর মতো প্রতিভা চলে গেল, ভাবতে পারছি না।’’

এ শহরের বাসিন্দা অভীক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ইডেনে বাংলা বনাম বিহার রঞ্জি ম্যাচ দেখেছি। চুনীদা বাংলার ক্যাপ্টেন। পরে চন্দননগরে কুটির মাঠ, হাসপাতাল মাঠে ভেটারেন্স বা প্রীতি ম্যাচে ফুটবলার চুনীকে দেখেছি। চুনীদা আমাদের হিরো। ছবির মতো ড্রিবল। মগজের সুক্ষতা দিয়ে খেলতেন।’’ অভীকের বাবা, প্রয়াত অসীম চট্টোপাধ্যায় ওরফে মন্টুদা সিএবি-র আম্পায়ার ছিলেন। অভীকের সংযোজন, ‘‘আটের দশকের গোড়ায় সিসি ক্লাবের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তিতে কুটির মাঠে প্রীতি ক্রিকেটে চুনীদা খেলেছিলেন। ৪৪ রান করেছিলেন। ওই ম্যাচে বাবা আম্পায়ারিং করেছিলেন। স্কুলবেলায় চুনীদাকে ক্রিকেটে প্রথম দেখি। একদিন ম্যাগাজিনে ওঁর ফুটবল পায়ে ছবি দেখে অবাক হয়ে যাই। বাবাকে বলি, উনি ফুটবলও খেলেন? তখন বাবার মুখে জানলাম, উনি খেলার মাঠের উত্তমকুমার।’’

তিন প্রধানে ফুটবল খেলেছেন চন্দননগরের কৃষ্ণগোপাল চৌধুরী। মোহনবাগান ড্রেসিংরুমে চুনীর উপস্থিতি কী ভাবে খেলোয়াড়দের তাতিয়ে দিত, তাঁর স্মৃতিতে তা উজ্জ্বল। খেলা ছাড়ার পরে গানে মন দিয়েছেন কৃষ্ণগোপাল। তাঁর কথায়, ‘‘বছর খানেক আগে অভীকের সঙ্গে চুনীদার বাড়িতে গিয়েছিলাম। চন্দননগরের কথা, মনুদার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমার গান শুনলেন। আরও শোনাব, কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু, সেই সুযোগ আর রইল না।’’

কিংবদন্তির প্রয়াণে চন্দননগর ক্রীড়া মহলে মন খারাপের ঘনঘটা। চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বামাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চন্দননগরের খেলাকে যাঁরা গর্বিত করেছেন, চুনী গোস্বামী তাঁদের প্রথম সারিতে।’’ সিসি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুভদীপ ঘোষ জানান, লকডাউনে বেরোতে না পারলেও শুক্রবার সকালে একই সময়ে সদস্যেরা বাড়িতেই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। ক্লাব-পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। শুভদীপ বলেন, ‘‘আমাদের ক্লাব, চন্দননগরকে উনি আজীবন মনে রেখেছিলেন। আমরাও ওঁকে ভুলব না।’’

চন্দননগর স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অসীম খাঁয়ের মনে পড়ছে, সাউথ ক্লাবে চুনীর সঙ্গে টেনিস খেলার মুহূর্ত। ঘরোয়া আড্ডায় চন্দননগরের কথা ঘুরেফিরে আসত চুনীর মুখে।

অন্য বিষয়গুলি:

Chuni Goswami Football Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy