বিপন্ন: অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে চিংলেনসানা। —ফাইল চিত্র।
আন্তঃমহাদেশীয় কাপ ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের জন্য ভুবনেশ্বরে এই মুহূর্তে ভারতীয় দলের প্রস্তুতি তুঙ্গে। অথচ রক্ষণের অন্যতম প্রধান ভরসা চিংলেনসানা সিংহকে এখন প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে অগ্নিগর্ভ মণিপুরে। অনেক কষ্ট করে যে বাড়ি বানিয়েছিলেন, তা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পতসাংবামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন হায়দরাবাদ এফসি-র এই তারকা ডিফেন্ডার। একই অবস্থা অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলের ফরোয়ার্ড থাংলালসুং গাংতের। প্রাণ বাঁচাতে তিনি চলে গিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্য মিজ়োরামে।
মেইতেইদের জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে রাজ্যকে সুপারিশ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল মণিপুর হাইকোর্ট। আপত্তি জানায় কুকিরা। প্রতিবাদে পথে নামে মণিপুরি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম)। সেই মিছিল থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। সেই সময় চিংলেনসানা ছিলেন হায়দরাবাদে। তাঁর পরিবার ছিল মণিপুরের চুয়াচাঁদপুরে। বছরখানেক আগে সেখানেই নতুন বাড়ি বানিয়েছিলেন সানা। এই চুয়াচাঁদপুরের অবস্থা ভয়াবহ। কার্ফু জারি, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেও হিংসা থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন। সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯০ জনেরও বেশি মানুষের। আহতের সংখ্যা তিনশোরও বেশি।
শুক্রবার বিকেলে ফোনে আতঙ্কিত সানা বলছিলেন, ‘‘মণিপুরে অশান্তি যখন শুরু হয়েছিল, তখন আমি হায়দরাবাদে। ভেবেছিলাম, কয়েক দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই মরসুম শেষ হওয়ার পরে বাড়ি ফিরেছিলাম। কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে ভুবনেশ্বরে জাতীয় শিবিরে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আমি চুয়াচাঁদপুরে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।’’ কম্পিত গলায় বলে চললেন, ‘‘আমার বাবা অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। তিল তিল করে টাকা জমিয়ে বাবাকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছিলাম। খুব খুশি হয়েছিলেন। ভাবতেও পারিনি এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে। নিজেদের বাড়ি ছেড়ে আমাদের আশ্রয় নিয়ে হবে পতসাংবামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। আসলে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের চুয়াচাঁদপুরে। হিংসাত্মক ঘটনায় অসংখ্য বাড়ি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে অধিকাংশই অন্যত্র চলে গিয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, প্রাণের পাশাপাশি জাতীয় দলে আমার ফুটবল ভবিষ্যৎও গভীর সঙ্কটে।’’
কেন? চিংলেনসানার কথায়, ‘‘আন্তঃমহাদেশীয় ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই এএফসি এশিয়ান কাপের জন্য ফুটবলার নির্বাচন করবেন কোচ ইগর স্তিমাচ। এখন যা পরিস্থিতি, এই দু’টি প্রতিযোগিতায় তো খেলতেই পারব না। ফলে এশিয়ান কাপে দলে থাকব কি না, জানি না।’’
মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া সানাকে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত কথা বলছেন জাতীয় দলের কোচ ও ফেডারেশনের কর্তারা। আশ্বাস দিয়েছেন, যে কোনও প্রয়োজনে তাঁর পাশে থাকার। তাতেও অবশ্য হতাশা কাটছে না সানার। বললেন, ‘‘কোচ ও ফেডারেশনের কর্তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এই দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য। কিন্তু আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কে কাটছে। অনুশীলনও করতে পারছি না। এখন একটাই প্রার্থনা, দ্রুত শান্তি ফিরুক মণিপুরে।’’
চিংলেনসানার মতোই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাংতে। অনূর্ধ্ব-১৭ এএফসি এশিয়ান কাপ খেলতে এই মুহূর্তে ভারতীয় দল রয়েছে তাইল্যান্ডে। তাঁর বাড়িও ভস্মীভূত। প্রাণ বাঁচাতে মণিপুর ছেড়ে মিজ়োরামে আশ্রয় নিয়েছেন গাংতে। সম্প্রতি তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন ফেডারেশনের মহাসচিব শাজি প্রভাকরণ। কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্ডেজও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন গাংতের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ‘‘গাংতের পরিবারের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সকলেই ওর পাশে রয়েছি।’’
প্রবল সমস্যায় মণিপুরের মহিলা ফুটবল দলও। ১৪ জুন থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় প্রতিযোগিতা। ৪০ জন ফুটবলারের নাম নথিভুক্ত করেছিল মণিপুর। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, পাঁচ ফুটবলার দলে যোগই দিতে পারেননি। শুক্রবার ফেডারেশনের কাছে তাঁদের পরিবর্তে নতুন পাঁচ ফুটবলারের নাম নথিভুক্ত করানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। তা অনুমোদন করেছে এআইএফএফ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy