কলকাতার ‘সাবোতাজ’-এর বদলা চান মাতেরাজ্জিরা।
এ যেন সেই বৌভাতের পর ফের বিয়ের উৎসব ফেরানোর চেষ্টা!
বালেওয়ারি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ঢুকে বোঝার উপায় নেই আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই এখানে আন্তোনিও হাবাস বনাম মার্কো মাতেরাজ্জির হাই প্রোফাইল সুপার লিগের যুদ্ধটা হতে চলেছে।
বন্যাবিধ্বস্ত চেন্নাই থেকে হঠাৎ-ই ম্যাচ সরে আসা পুণে যে এখনও রয়ে গিয়েছে বিয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার দু’দিন পরের মেয়ের বাবার মতোই। আফশোস, দুঃখ আর যন্ত্রণা নিয়ে।
বিশ্ববন্দিত রবের্তো কার্লোসের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করে ডেভিড প্ল্যাটের দল ছিটকে গিয়েছে শেষ চারের লড়াই থেকে। কিন্তু তার রেশ যে এখনও যায়নি। গেটে ঢোকার মুখে এখনও বিশাল তোরণে লেখা, ‘লিভ টু উইন।’ বা ‘কার পুণে কার।’
কোথায় কলকাতার হিউম-দ্যুতি বা চেন্নাইয়ানের মেন্ডি-মেন্দোজাদের ছবি! এখনও যে পোস্টারে স্টেডিয়াম আর শহরের সর্বত্র জ্বলজ্বল করছেন পুণের মুতু, উচে, গৌরমাঙ্গীরা। বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল খোলার সময় যা হয় তাই হচ্ছে। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হোর্ডিং, পেরেক, বাঁশ, বাটাম। টিকিট বিক্রি তো শুরু হয়ইনি। এখানে যে সাতশো কোটির টুনার্মেন্টের সেমিফাইনাল হচ্ছে তা বোঝারও উপায় নেই।
সংগঠক চেন্নাইয়ানের লোকজন বুধবারই ছাড়পত্র পেয়েছেন স্টে়ডিয়ামে কাজ করার। আজ বৃহস্পতিবারই তাদের একটা অফিস খুলেছে। কর্মীদের কাছে সবই নতুন। কাদের দিয়ে কী করাতে হবে তা জানতেই তাদের গলদঘর্ম অবস্থা। ফ্লেক্স থেকে চেয়ার, প্রেসবক্স থেকে সাউন্ড সিস্টেম, কিছুই তো তাদের হাতে নেই। চেন্নাই টিমের অফিসে ঢুকে জানা গেল, পুণের লোকজন জানিয়েছেন জিনিসপত্র সরাতে রাত কাবার হয়ে যাবে। তারপর সেখানে হবে চেন্নাই আর কলকাতা ম্যাচের ‘ম্যারাপ বাঁধা’। ফলে, হাতে সময় মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা। কী হবে ভেবেই অস্থির চেন্নাইয়ের জনা পঁচিশ কর্মী।
আর এই পরিস্থিতির জন্য কলকাতাকেই দুষছেন চেন্নাইয়ের কর্তা থেকে ফুটবলার সবাই। তাদের অভিযোগ, শনিবারের ম্যাচটা অভিষেক বচ্চনরা ঠিক জয়ললিতা সরকারকে বুঝিয়ে, সুঝিয়ে রাজি করিয়ে নিতেন চেন্নাইতেই। বন্যার বাজারে সমস্যা হত না। কিন্তু কলকাতা না কি তাতে বাগড়া দিয়েছে এই বলে যে যেখানে খাবার জলেরই এত হাহাকার, হোটেল পাওয়া মুশকিল, সেখানে ম্যাচ হবে কী করে? তামিলনাড়ু সরকারের কাছ থেকে ‘সমস্যা হবে না’ এই সার্টিফিকেট নাকি চেয়েছিলেন এটিকে কর্তারা।
আর মাতেরাজ্জির টিম হোটেলে গিয়ে বোঝা গেল টিমকে তাতানোর জন্য অন্য অনেক অস্ত্রের সঙ্গে এটাকেও ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে মেন্দোজা-খাবরাদের উপর। বলা হচ্ছে, মাঠেই কলকাতার সাবোতাজের জবাব দাও। এমনিতে সাংবাদিকদের টিম হোটেলে ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মেজাজি ইতালিয়ান কোচ। কারণ দেখানো হচ্ছে ‘ছোট হোটেল’। কোচ-ফুটবলারদের সাক্ষাৎকার দেওয়ার জায়গা নেই। নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া নজর। কিন্তু তাতেও আটকানো যাচ্ছে না অনেক কিছুই। চুঁইয়ে বেরিয়ে আসছে হাবাসের টিমের ‘পিছন থেকে ছুরি’ মারার গল্প।
ফিকরু তেফেরা এখানে এসে অনেক শান্ত হয়েছেন। হয়ে উঠেছেন টিম ম্যান। চোট সারিয়ে ফিরেছেন সবে। মেন্দোজা-জেজের সাফল্য তাঁর মাঠে নামা পিছিয়ে দিলেও বললেন, ‘‘পেশাদার ফুটবলারদের কাছে সব মাঠ সমান। তবুও নিজেদের মাঠে খেললে ভাল হত। আর ওটা না কি কলকাতা চায়নি। লিগের পরপর দু’টো ম্যাচ হেরেছি ঠিক। আর ওটাই কিন্ত আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর এবং জেতার অন্যতম মোটিভেশন।’’ কলকাতার আর এক প্রাক্তন চেন্নাইয়ান কিপার এডেল বেটের হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে মন্তব্য, ‘‘হাবাস অত্যন্ত চতুর কোচ। ওকে আমরা চিনি। আমরাও পরপর চারটে ম্যাচ জিতেছি। যা কোনও টিম জেতেনি। পুণেতেও আমরা জিতব।’’
ইলানো আর মেহরাজ খেলতে পারছেন না এই ম্যাচে। কার্ডের জন্য দু’জনই বাইরে। ফ্রি-কিক মাস্টার ইলানোর না থাকাটা বড় ক্ষতি মানছেন হরমনজোৎ খাবরা। মেহেরাজের জায়গায় তাঁরই খেলার কথা কলকাতার বিরুদ্ধে। বলছিলেন, ‘‘নিজেদের মাঠের দর্শক সমর্থনটা পাব না। এটা বড় সমস্যা। সে জন্য দু’টো ম্যাচকেই আমরা অ্যাওয়ে ম্যাচ ধরে খেলব। আমাদের টিমটা কিন্তু মানসিকভাবে খুব ভাল জায়গায় আছে।’’
হাবাসের চেন্নাইয়ে লোক পাঠানোর চালে মাঠের বাইরের যুদ্ধে কলকাতা জিতল কি না, তার সরকারি প্রমাণ এখনও মেলেনি। হোক বা না হোক, ঘরের মাঠে খেলতে না পেরে অভিষেক-ধোনির টিম কিন্তু সত্যিই সমস্যায়। মানসিকভাবে অনেকটাই বিব্রত।
মাঠে এবং মাঠের বাইরেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy