Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
cricket

কে সাধারণ আর কে অসাধারণ, তা বুঝিয়ে দিল এই বাইশ গজ

যে পিচকে অনেকে চেন্নাইয়ের সমুদ্রসৈকতের সঙ্গে তুলনা করেছে, সেখানে সোমবার স্পিন খেলার পাঠ দিয়ে গেল এক জন।

জমাট: দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের স্পিন নির্বিষ বিরাটের ব্যাটে। বিসিসিআই

জমাট: দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের স্পিন নির্বিষ বিরাটের ব্যাটে। বিসিসিআই

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

চেন্নাইয়ের এই পিচটা নিয়ে সবাই এত কথা বলছে। আমি একটাই কথা বলতে চাই। চিদম্বরম স্টেডিয়ামের এই বাইশ গজ সাধারণের থেকে অসাধারণকে আলাদা করে দিল। ব্যাটে-বলে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েই ভারত দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের সামনে। জিততে গেলে ইংল্যান্ডের চাই ৪৮২। তৃতীয় দিনের শেষে স্কোর ৫৩-৩। চতুর্থ দিন কত তাড়াতাড়ি খেলাটা শেষ হয়, সেটাই দেখার।


যে পিচকে অনেকে চেন্নাইয়ের সমুদ্রসৈকতের সঙ্গে তুলনা করেছে, সেখানে সোমবার স্পিন খেলার পাঠ দিয়ে গেল এক জন। আর অন্য জন আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করল! বিরাট কোহালি এবং আর অশ্বিন।


এক বারও বলছি না যে পিচে বল ঘুরছে না বা ধুলো উড়ছে না। অবশ্যই বল ঘুরছে। কিন্তু তা বলে ক্রিকেট খেলার অযোগ্য, এ কথাটা বলার কোনও মানে হয় না। কোহালি আর অশ্বিনের ইনিংস দেখার পরে নিশ্চয়ই আর কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার এই পিচ নিয়ে বিষোদ্গার করবে না। এই পিচ বুঝিয়ে দিল, যাদের মধ্যে দক্ষতা আছে, লড়াইয়ের মানসিকতা আছে, প্রতিভা আছে— তারা ঠিক সাফল্য পাবেই। ব্যাটে প্রথম ইনিংসে দেখিয়েছে রোহিত শর্মা, অজিঙ্ক রাহানে। দ্বিতীয় ইনিংসে দেখাল কোহালি (৬২) ও অশ্বিন (১০৬)। পাশাপাশি ইংল্যান্ড স্পিনারদের চেয়ে তারা যে অনেক এগিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছে অশ্বিন, অক্ষর পটেলরা।


অশ্বিন যখন ব্যাট করতে নামে, দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্কোর ছয় উইকেটে ১০৬। আর একটা উইকেট তাড়াতাড়ি পড়ে গেলে কিন্তু ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়ানোর একটা রাস্তা দেখতে পেত। অশ্বিন সেটা হতে দেয়নি। বিরাট যখন নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ডের স্পিন আক্রমণকে ভোঁতা করে দিচ্ছে, তখন অশ্বিন ইতিবাচক খেলার দিকে মন দেয়। সুইপ, রিভার্স সুইপ, বল তুলে মারা, সব কিছুই করেছে। এবং, ধীরে, ধীরে ইংল্যান্ড স্পিনাররা খেই হারিয়ে ফেলে। এই জুটিতে উঠল ৯৬ রান। ভারত দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করল ২৮৬ রানে।


বিরাট ও অশ্বিনের ব্যাটিং দেখতে দেখতে একটা টেস্টের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ১৯৮৭ সালে বেঙ্গালুরুতে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। এর চেয়েও খারাপ উইকেটে সুনীল গাওস্করের করা ৯৬ রান। এ দিন টিভিতে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় গাওস্কর বলছিলেন, ‘‘পিচটা যে খারাপ বা বল যে ঘুরছে, এটা সে দিন মাথা থেকে মুছে ফেলে খেলতে নেমেছিলাম। আর বলের একেবারে উপরে গিয়ে ব্যাটটা রাখছিলাম, যাতে স্পিন করার সময় না পায়।’’


বিরাটের খেলার মধ্যে সেই ছায়াই দেখলাম। যখন ফরোয়ার্ড খেলছে, পুরো পা লম্বা করে বলের উপরে চলে যাচ্ছে। একটু শর্ট পড়লে ব্যাকফুটে এসে পুশ করছে। একটা ছোট্ট টেকনিক্যাল বদল দেখলাম বিরাটের ব্যাটিংয়ে। অফস্পিনার মইন আলি বল ছাড়ার মুহূর্তে বিরাট একটু শাফল করে ডান পা-টা অফস্টাম্প লাইনের সামান্য বাইরে নিয়ে আসছে। তার পরে ফ্রন্টফুট বা ব্যাকফুটে যাচ্ছে। এর ফলে ফ্রন্টফুটে অফস্পিন ডেলিভারিটাকে ও অফস্টাম্পের বাইরে খেলে দিচ্ছে। ব্যাট-প্যাডের মধ্যে কোনও ফাঁক থাকছে না। বল যদি স্পিন করে ওর পায়ে লাগেও, তা হলে ‘পয়েন্ট অব ইমপ্যাক্ট’ অফস্টাম্পের বাইরে হবে। সে ক্ষেত্রে এলবিডব্লিউ হওয়ার আশঙ্কা নেই। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, প্রথম ইনিংসের আউট থেকে শিক্ষা নিয়ে এই বদল। বাঁ-হাতি স্পিনার, জ্যাক লিচের ক্ষেত্রে অতটা ‘শাফল’ করছে না। স্টাম্পের মধ্যে থাকছে। যে কারণে স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বল অনায়সে ছেড়ে দিতে পারছে।


এই ছোট, ছোট টেকনিক্যাল বদলগুলো যে কত কাজে আসে, তা একটা ঘটনায় মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি তখন জাতীয় নির্বাচক। মহম্মদ আজ়হারউদ্দিন ঘটনাটা বলেছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটা সময় রান পাচ্ছিল না আজ়হার। তখন জ়াহির আব্বাস ওকে পরামর্শ দেয়, স্টান্স নেওয়ার সময় বাঁ-পা এক্সট্রা কভারের দিকে না রেখে একটু মিড অফের দিকে খুলে দিতে। সেটা করে আজ়হার দারুণ উপকৃত হয়।
বিরাটের ইনিংসটা যদি ‘স্পিন খেলার পাঠ’ হয়, অশ্বিনেরটা ছিল লড়াকু মানসিকতার প্রতিফলন। এর আগে ওর চারটে সেঞ্চুরিই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। পঞ্চমটা নিঃসন্দেহে সেরা। ঘরের মাঠে এই টেস্টটা অশ্বিন ভুলবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE