আক্রান্ত: পুলিশি পাহারায় মাঠ ছাড়ছেন রেফারি ও তাঁর সহকারীরা। নিজস্ব চিত্র
মহমেডান ১ • সাদার্ন সমিতি ১
পুলিশের ঘেরাটোপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রক্তাক্ত হলেন রেফারি দেবাশিস মান্ডি। যা নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল মহমেডান মাঠে।
সোমবার বিকেলে ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাদার্ন সমিতির রিজার্ভ বেঞ্চ বসে দৌড়ে এসে তাদের ফুটবলার শ্যাম মণ্ডল রেফারির নাকে ঘুষি মারেন। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে লালকার্ড দেখান। কার্ড দেখে ফের মারতে উদ্যত হন ময়দানের পোড়খাওয়া ওই ফুটবলার। সহকারী রেফারি তাঁকে আটকান। এরপর হাঁটতে হাঁটতে বীরদর্পে তাঁবুতে ফিরে যান শ্যাম। কাঁদতে থাকা রেফারির পাশে দাঁড়িয়ে ম্যাচ কমিশনার সুব্রত দাশ চিৎকার করে ওই ফুটবলারকে গ্রেফতার করার জন্য চিৎকার করলেও তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা। মাঠে উপস্থিত অফিসারেরা জানিয়ে দেন, লিখিত কোনও অভিযোগ না পেলে কিছু করা যাবে না। সুব্রতবাবু চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘আপনাদের চোখের সামনে ঘটনা ঘটল। সেটা দেখেও লিখিত অভিযোগ চাইছেন?’’ সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন আইএফএ-র সহসচিব-সহ একাধিক কর্তা। পুলিশ এবং তাঁদের সামনেই দেখা যায় সাদার্ন সমিতির কয়েকজন কর্তা রেফারিকে এসে অভিযোগ না করার জন্য চাপ দিতে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ কমিশনার এবং নিগৃহীত রেফারি মাঠে বসেই এফআইআর করেন শ্যামের বিরুদ্ধে। রাত পর্যন্ত অবশ্য অভিযুক্ত ফুটবলারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। রক্তাক্ত রেফারি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘পুলিশের সামনেই নাকে ঘুষি মেরেছে। রক্ত পড়ছে। ওই ফুটবলারের গ্রেফতার চাইছি। এ রকম চললে কোনও রেফারি আর ম্যাচ খেলাতে আসবে না।’’ ম্যাচ কমিশনার সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘পুরো ঘটনা আমার রিপোর্টে থাকবে। পুলিশের সামনেই এ ভাবে মারল? ভাবতেই পারছি না। তা হলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? দেবেই বা কে?’’ আইএফএ অবশ্য রিপোর্ট পেলেই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সভা ডেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘শ্যামকে গত বছরও শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। রিপোর্ট পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জিনিস বরদাস্ত করা হবে না। সাদার্নকেও সতর্ক করব আমরা।’’ ময়দানে অবশ্য ইতিমধ্যেই দাবি উঠেছে, আজীবন সাসপেন্ড করা হোক শ্যাম মণ্ডলকে।
কলকাতা লিগে সাদার্ন সমিতি মানেই ঝামেলা। গত কয়েক বছর ধরেই এটা চলছে। বারবার গণ্ডগোল করেও পার পেয়ে যাচ্ছে দক্ষিণের এই ক্লাব। রেফারিরা এ দিনও অভিযোগ করেন, ‘‘সাদার্নের রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে অকথ্য ভাষায় এ দিনও গালাগালি দেওয়া হয়েছে।’’ মেহতাব হোসেনকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর করে এ বার শক্তিশালী দল গড়েছে সাদার্ন। আল আমনা, কালু ওগবার মতো বিদেশি আছে দলে। খেলার উনিশ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় সাদার্ন। কালু ওগবা গোল করার পরে এমনিতেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ম্যাচে মহমেডান জেতা উচিত ছিল অন্তত চার-পাঁচ গোলে। তাদের তিনটি শট পোস্ট অথবা বারে লাগে। একের বিরুদ্ধে এক অবস্থাতেও মহমেডান নষ্ট করে দুটি সুযোগ। এই অবস্থায় মহমেডান গ্যালারি থেকে পড়তে থাকে দলের বোতল, ইট কাঠের টুকরো। বারবার নানা অছিলায় শুয়ে পড়ে সময় নষ্ট করতে থাকেন সাদার্ন ফুটবলারেরা। তাতে গ্যালারিতে উত্তেজনা বাড়ে। খেলা বন্ধ থাকে প্রায় চার মিনিট। ৯০ মিনিট পর্যন্ত সাদার্ন এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। এর পরেই রেফারি ১১ মিনিট অতিরিক্ত সময় খেলা চলার নির্দেশ দেন। এই সময়েই ঘটে নানা নাটকীয় ঘটনায়। রেফারিকে গালাগালি দিয়ে ৯৩ মিনিটে লালকার্ড দেখেন মহমেডানের স্টপার করিম ওমোলোজা। দশ জন হয়ে যায় সুব্রতর দল। এই অবস্থায় একটি অসাধারণ গোল করেন আর্থার কোসি। ডান দিক থেকে বাঁ পায়ের সোয়ার্ভিং শটে গোল করেন কোসি।
খেলা যখন ১-১ অবস্থায় শেষ, রেফারিরা যখন চলে গিয়েছেন মাঠের মধ্যে, তখনই ন্যক্কারজন ঘটনাটি ঘটান শ্যাম মণ্ডল। ফের রক্তাক্ত হয় মাঠ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy