Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পাসিং ফুটবলে জয়ের সুবাস মোহনবাগানে

লিগের তিন নম্বর ম্যাচে মোহনবাগান যা খেলেছে তাতে ফল ৪-১ হতেই পারত। আবার ৪-৩ হলেও বলার কিছু ছিল না।

স্বস্তি: নওরেমের গোলে প্রথম জয় মোহনবাগানের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

স্বস্তি: নওরেমের গোলে প্রথম জয় মোহনবাগানের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৫৫
Share: Save:

খেলার শেষে জোসেবা বেইতিয়াদের সঙ্গে ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’ দিচ্ছিলেন গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকশো সমর্থক।

স্টেডিয়ামের গেটে মোহনবাগানের টিম-বাস ঘিরে অসংখ্য মানুষের উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস, স্লোগান। পুলিশের নজর এড়িয়ে নিজস্বী তোলার মরিয়া চেষ্টা।

খরা কাটিয়ে কলকাতা লিগের প্রথম ম্যাচ জেতার পরে শিল্প-শহর কল্যাণী থেকেই যেন শুরু হয়ে গেল রবিবারের ডার্বিতে পালতোলা নৌকার প্রস্তুতি। এবং কী আশ্চর্য, সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কিবু ভিকুনাও বলে দিলেন, ‘‘তিন পয়েন্ট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ বার আমার মাথায় আগামী তিন দিন থাকবে শুধুই ডার্বি।’’ মুখে যাই বলুন, মনে হল রঘু নন্দীর দলকে হারানোর পরের মিনিট থেকেই মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচের চিন্তায় ঢুকে পড়ছে বড় ম্যাচ। নিজের দলের শক্তির সঙ্গে দাঁড়িপাল্লায় তুলনা করতে শুরুও করে দিয়েছেন স্বদেশীয় কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের ক্লাবকে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি শুনেছেন ইস্টবেঙ্গল তিন গোলে জিতেছে? ময়দান থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরের স্টেডিয়ামে বসে হাসতে হাসতে কিবু বলে দিলেন, ‘‘আমাদের ম্যাচটাও ৪-১ হতে পারত। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ পেয়েছি।’’ বলতে বলতেই, গড়গড় করে তিনি বলতে থাকেন কারা গোল নষ্ট করেছেন, ‘‘সালভা, বেইতিয়া, সুহের, গন্সালেস, নওরেম, ব্রিটো, মোরান্তে……। গোল হয়নি ঠিকই, তবে গোলের সুযোগ তো তৈরি হয়েছে। সব দিন এ রকম হবে না।’’

কিবু তাঁর দলের গোলের সুযোগ পাওয়া নিয়ে অতিশয়োক্তি করেছেন, এটা বলা যাবে না। লিগের তিন নম্বর ম্যাচে মোহনবাগান যা খেলেছে তাতে ফল ৪-১ হতেই পারত। আবার ৪-৩ হলেও বলার কিছু ছিল না। কারণ প্রথমার্ধে বিএসএস অন্তত দুটি সহজ সুযোগ পেয়েছিল। সবুজ-মেরুন রক্ষণকে তখন মনে হচ্ছিল চেতলার সদ্য ভেঙে পড়া লকগেট।

কল্যাণী স্টেডিয়ামের মাঠের তুলনা হতে পারে যুবভারতীর সঙ্গে। ছোটদের সাফ ফুটবলের টানা ম্যাচ চলা সত্ত্বেও মসৃণ মাঠ সবুজে-সবুজ। মাপও আন্তর্জাতিক মানের। এ রকম মাঠ বল প্লেয়ারদের কাছে স্বর্গ রাজ্য। মোহনবাগানের স্প্যানিশ ফুটবলারেরা সেই সুবিধাটা নেবেন জানাই ছিল। নিলেনও। ব্রিটো পি এম এবং নওরেম সিংহ দুটো উইং ধরে প্রতিপক্ষের শিবিরে হানা দিচ্ছিলেন বারবার। সঙ্গে চামোরো, সুহের, গন্সালেসদের পাসিং ফুটবল। এই দুয়ের দৌলতে ম্যাচের সত্তর মিনিট ঝলসে উঠল কিবু বাহিনী। ম্যাচে দু’বার শুধু চাপে পড়ে গিয়েছিলেন চামোরোরা। শুরুতেই পেনাল্টি নষ্টের পরে এবং ম্যাচ ১-১ হওয়ার পরের দশ-পনেরো মিনিট।

বিরতির সময় মাথায় হাত দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন ফ্রান গন্সালেস। রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে খেলেছেন। অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারও পূর্ণ। ফলে খেলা শুরুর তিন মিনিটের মধ্যেই পাওয়া পেনাল্টিটা মারতে তাঁকেই পাঠিয়েছিলেন কিবু। গন্সালেস যে শুরুতে পেনাল্টি নষ্ট করবেন, তা ভাবতে পারেননি সবুজ-মেরুন কোচ। পোস্টের নীচে লেগে বল ফিরতেই কিবুকে দেখা গেল সামনে থাকা জলের বোতলে লাথি মারলেন। মোহনবাগানের ইমরান খানের ক্রস নিজেদের বক্সে হাতে লাগিয়েছিলেন বিএসএসের বিকাশ সাইনি। শুরুতে পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া হওয়া সত্ত্বেও এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। নওরেমের তোলা বলে হেড করে গোল করে যান চামোরো। কিন্তু তা স্থায়ী হল তিন মিনিট। সবুজ-মেরুনের নড়বড়ে রক্ষণকে বোকা বানিয়ে অবলীলায় ১-১ করে দিলেন বিএসএসের ঘানা থেকে আসা স্ট্রাইকার ওপোকু। কিন্তু প্রথমার্ধে রঘুর দল যতটা গর্জেছিল, বিরতির পর ততটা বর্ষায়নি। বেহালার কোচ দাবি করলেন, দশ দিনে চারটি ম্যাচ খেলতে হচ্ছে বলেই দল ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বিরতির ১-১ অবশ্য পরের অর্ধের শুরুতেই ২-১ হল। ব্রিটোর তোলা বলে হেড করে গোল করে গেলেন নওরেম। দু’বছর আগে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের জার্সি পরে শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে আট জনকে কাটিয়ে গোল করে দেশ-জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মণিপুরের এই মিডিয়ো। এ দিনও দুটো গোলের পিছনে ছিল ছোটখাটো চেহারার ছেলের অবদান। তিনিই ম্যাচের সেরা।

বাগানে স্প্যানিশ ফুটবলাররা যতই সুগন্ধি ছড়ান, নওরেমই এখন বাগানের গোলাপ বা রজনীগন্ধা।

মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, অরিজিৎ বাগুই, লালরাম চুলোভা, ফ্রান মোরান্তে, গুরজিন্দর কুমার, ইমরান খান (শেখ সাহিল), ব্রিটো পিএম, ফ্রান গনজালেস, নংদাম্বা নওরেম (শেখ ফৈয়াজ), সুহের ভিপি, সালভা চামোরো (জোসেবা বেইতিয়া)।

অন্য বিষয়গুলি:

Football CFL 2019 Mohun Bagan BSS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE