Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জয়ের সরণিতে প্রত্যাবর্তন ইস্টবেঙ্গলের, মাঠ নিয়ে অসন্তোষ ইস্টবেঙ্গল কোচের

বৃহস্পতিবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে লাল-হলুদের প্রথম একাদশ দেখে এক দিকে যেমন চমকে উঠেছিলেন দর্শকেরা, তেমন স্বস্তিও পেলেন।

উৎসব: হেডে গোল করে কোলাদোর উচ্ছ্বাস। পিছনে আশির। নিজস্ব চিত্র

উৎসব: হেডে গোল করে কোলাদোর উচ্ছ্বাস। পিছনে আশির। নিজস্ব চিত্র

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৩১
Share: Save:

প্রথম দলে আট ফুটবলার পরিবর্তন! আর তাতেই জয়ের সরণিতে প্রত্যাবর্তন ইস্টবেঙ্গলের।

বৃহস্পতিবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে লাল-হলুদের প্রথম একাদশ দেখে এক দিকে যেমন চমকে উঠেছিলেন দর্শকেরা, তেমন স্বস্তিও পেলেন। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বিতে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে মাত্র তিন জন রয়েছেন। লালরিনডিকা রালতে, লালথুমেওয়াইয়া রালতে ও পিন্টু মাহাতো। এ দিন শুরু থেকেই ছিলেন খাইমে সান্তোস কোলাদো, বিদ্যাসাগর সিংহ, বোরখা গোমেস পেরেসরা। সাদার্নের বিরুদ্ধে ম্যাচে যে প্রথম একাদশে একাধিক পরিবর্তন করতে চান আলেসান্দ্রো, তার ইঙ্গিত বুধবারের অনুশীলনেই দিয়েছিলেন। নতুন দল নামাতেই বদলে গেল ছবিটা। শিক্ষক দিবসে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়াকে কোলাদো-বিদ্যাসাগর জয় উপহার দেওয়ায় লিগ জয়ের স্বপ্নও উজ্জ্বল হয়ে উঠল লাল-হলুদ শিবিরে।

প্রবল বৃষ্টিতে প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ম্যাচ শুরু হলেও জল-কাদায় বারবার বল আটকে যাচ্ছিল। থমকে যাচ্ছিল কোলাদোদের দৌড়ও। স্তব্ধ পাসিং ফুটবল। তবে কাদা মাঠেও ফুল ফোটালেন ইস্টবেঙ্গলের ‘ব্রাত্য’ সাদার্ন মিডফিল্ডার মহম্মদ আল আমনা। ম্যাচের সেরাও হলেন। তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধেই লাল-হলুদ রক্ষণে ঝড় তুললেন বছর উনিশের ফয়সল আলি। কোনও মতে সামলালেন বোরখা, আশির আখতাররা। এক বার তো ফয়সলের শট গোললাইন সেভও করলেন আশির।

পার্ক সার্কাসের ফয়সলের বাবা আগে গাড়ি চালাতেন। বছর তিনেক তিনি কর্মহীন। স্থানীয় জুতোর কারখানায় কাজ করেন দাদা। ফয়সলের খেলা দেখে মুগ্ধ ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিকাশ পাঁজির মতো প্রাক্তনরা। প্রতিশ্রুতিমান মিডফিল্ডার অবশ্য উচ্ছ্বসিত নন। বললেন, ‘‘বেশ কয়েকটা ভুল করেছি। গোল করতেও পারিনি।’’

আমনা-ফয়সলের যুগলবন্দি রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল লাল-হলুদ কোচের। শিক্ষক দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আলেসান্দ্রো ও তাঁর সহকারীদের ছবি দেওয়া বিশেষ ‘টিফো’ নিয়ে মাঠে এসেছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু তখন যা পরিস্থিতি তাতে গ্যালারির দিকে তাকানোর অবস্থা ছিল না আলেসান্দ্রোর। লাল-হলুদ শিবিরে স্বস্তি ফিরল ৩৩ মিনিটে। ডিকার কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে প্রথমে মাথা ছোঁয়ালেন কোলাদো। তার পরে বল জালে জড়িয়ে দিলেন বিদ্যাসাগর। ৬৩ মিনিটে নিজে গোল করলেন কোলাদো। এ বারও নেপথ্যে ডিকা। লাল-হলুদ মিডফিল্ডারের কর্নার থেকে হেডে গোল করলেন তিনি।

ডার্বিতে কোলাদো প্রথম দলে ছিলেন না। আলেসান্দ্রো ভরসা রেখেছিলেন মার্কোসের উপরে। সাদার্নের বিরুদ্ধে গোল করে ও করিয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন লাল-হলুদের স্প্যানিশ তারকা। বিদ্যাসাগরও তাঁকে অনুসরণ করলেন। লাল-হলুদ রক্ষণের ভুলে ৮২ মিনিটে গোল করে ব্যবধান কমান সাদার্নের অর্জুন টুডু।

বেহাল মাঠে দুরন্ত জয়ের পরে সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, ‘‘এই মাঠে খেলা তো দূরের কথা, দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন। মারাত্মক চোট পেতে পারত ফুটবলারেরা।’’ ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই প্রথম দলে আট জন বদল? লাল-হলুদ কোচের জবাব, ‘‘বিশ্বের সর্বত্রই কোচেরা কখনও সব ম্যাচে এক দল খেলান না। সকলকে খেলিয়ে দেখে নেন।

আলেসান্দ্রো ক্ষুব্ধ আমনাকে ম্যাচের সেরার পুরস্কার দেওয়ায়। বললেন, ‘‘আমি এই পুরস্কারের পক্ষপাতী নই। একমাত্র ভারতেই সব ম্যাচের পরে পুরস্কার দেওয়া হয়।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘ডার্বিতে অসাধারণ খেলল মার্তি। অথচ পুরস্কার পেল বেইতিয়া। আমার মতে, এই ম্যাচে সেরা ফুটবলার বোরখা।’’ জন্মদিনে হেরে হতাশ সাদার্ন টিডি মেহতাব হোসেনও। বললেন, ‘‘ন্যায্য পেনাল্টি দিলেন না। রেফারি’’

পাঁচ ম্যাচে দশ পয়েন্ট নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ছুঁয়ে ফেলল লিগ টেবলের এক ও দু’নম্বরে থাকা পিয়ারলেস ও ভবানীপুরকে। পয়েন্ট সমান হওয়া সত্ত্বেও গোল পার্থক্যে পিছিয়ে থাকায় তৃতীয় স্থানে ইস্টবেঙ্গল। যদিও তা নিয়ে ভাবছেন না স্প্যানিশ কোচ। বললেন, ‘‘ আমাদের পরের ম্যাচ সোমবার। সেটা নিয়েই ভাবতে চাই শুধু।’’

সাদার্নকে হারিয়ে উঠেই পিয়ারলেস ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন আলেসান্দ্রো।

ইস্টবেঙ্গল: লালথুমেওয়াইয়া রালতে, সামাদ আলি মল্লিক, বোরখা গোমেস পেরেস, আশির আখতার, মনোজ মহম্মদ, পিন্টু মাহাতো, লালরিনডিকা রালতে, তনবোম্বা নওরেম (কাশিম আইদারা), খাইমে সান্তোস কোলাদো (হোয়ান মেরে গঞ্জালেস), বইথাং হাওকিপ (রোনাল্ডো অলিভিয়েরা) ও বিদ্যাসাগর সিংহ।

সাদার্ন সমিতি: ঈশান দেবনাথ, অনীশ জমাদার (অর্জুন টুডু), স্যামুয়েল কেনে, গোবিন সিংহ, শুভঙ্কর দাস, ফয়সল আলি, কালু ওগবা (ইমরান খান), মহম্মদ আল আমনা, স্যামুয়েল সাদাপ (পলাশ মান্না), অমরেন্দ্র চক্রবর্তী ও উত্তম রাই।

অন্য বিষয়গুলি:

CFL 2019 Football East Bengal Southern Samity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE