বিরাট কোহালি। ডাবল সেঞ্চুরির পর। ছবি: এএফপি।
দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রেরণাই তাঁকে টেস্টে বড় রান করতে সাহায্য করে। শুক্রবার দ্বিতীয় টেস্টে দুরন্ত ডাবল সেঞ্চুরি ও একাধিক নজির গড়ার পরে বললেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি।
অপরাজিত ২৫৪ রান করে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়া কোহালি বিসিসিআই টিভিকে বলেন, ‘‘ভারতীয়দের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরে দারুণ লাগছে। শুরুর দিকে বড় রান করতে সমস্যায় পড়তাম। কিন্তু যখনই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিলাম, তখন থেকে মাথায় শুধুই দলের কথাই থাকে। শুধু নিজের খেলার কথা ভাবা যায় না। সেই প্রক্রিয়াতে দেখা যাচ্ছে নিজের ভাবনার চেয়েও বেশিক্ষণ ব্যাট করছি। এই মানসিকতা নিয়েই অনেক দিন ধরেই এগোচ্ছি।’’
পুণেতে অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি করা নিয়ে কোহালি বলেন, ‘‘কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়লে দলের জন্য নিজেকে আরও লড়াই করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এ রকম গরম, আর্দ্রতার মধ্যেও মাঠে নেমে দলের কথা ভাবলে দেখা যায় ৩-৪ ঘণ্টা আরও বেশি ব্যাট করছি।’’ ভারত অধিনায়ক সঙ্গে আরও যোগ করেন, ‘‘এটাই সব চেয়ে চ্যালেঞ্জের ছিল। এর পরে রবীন্দ্র জাডেজা নামল। ওর সঙ্গে ব্যাট করলে উইকেটের মধ্যে দ্রুত দৌড়তে হয়। শারীরিক আর মানসিক ভাবে এই পরিস্থিতি পরীক্ষায় ফেলে দেওয়ার মতো। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে এ সবের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি তো নিতেই হবে।’’
শুক্রবার সাত নম্বর ডাবল সেঞ্চুরি করে সচিন তেন্ডুলকর এবং বীরেন্দ্র সহবাগকে ছাপিয়ে গিয়েছেন কোহালি। এর মধ্যে কোন ডাবল সেঞ্চুরিকে এগিয়ে রাখবেন জানতে চাইলে ভারত অধিনায়ক অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০০ এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুম্বইয়ে ২৩৫ রানের ইনিংসের কথা বলেন। ‘‘প্রথম দুইয়ে থাকবে অ্যান্টিগা আর মুম্বই। সব ডাবল সেঞ্চুরিই বিশেষ। তবে ওই দুটো আরও বেশি কারণ একটা বিদেশের মাঠে এবং আর একটা ঘরের মাঠে কঠিন পরিস্থিতিতে করা। তীব্র গরম আর আর্দ্রতা ছিল তখন ওখানে,’’ মন্তব্য কোহালির।
পুণে টেস্টে ভারত প্রথম ইনিংসে ৬০১-৫ তোলার পরে ডিক্লেয়ার করে দেয়। এর পরে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ৩৬ রান তুলতে না তুলতেই তিন উইকেট চলে গিয়েছে। কোহালি উচ্ছ্বসিত দ্বিতীয় দিন সব পরিকল্পনা মতো হওয়ায়। ‘‘আমাদের খুব সহজ পরিকল্পনা ছিল। যত দ্রুত সম্ভব ৬০০ রান তুলে ওদের ব্যাট করতে নামানো। জাড্ডু (জাডেজা) দুরন্ত ব্যাটিং করেছে। দ্রুত গতিতে রান তুলেছে। যেটা আমায় ঝুঁকি নিয়ে ফাঁকা জায়গায় বল ঠেলে রান তুলতে সাহায্য করেছে। আমরা শুধু সেশন বা দিন ধরে খেলতে চাইনি। আক্রমণ করতে চেয়েছি। ইতিবাচক থাকতে চেয়েছি,’’ বলেন কোহালি।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন কোহালির। তিনি বলেছেন, ‘‘বিরাট কোহালির মতো ক্রিকেটারের এই পর্যায়ে লড়াইটা বোলারদের থেকেও অনেক বেশি নিজের সঙ্গে। ওর নিখুঁত ফুটওয়ার্ক আর অসাধারণ সব শট দেখে দারুণ লেগেছে।’’ লক্ষ্মণ আরও যোগ করেছেন, ‘‘যে ভাবে ও নিজের স্টান্সে ভারসাম্য রাখে দেখলে অবাক হতে হয়। কী ভাবে এগিয়ে গিয়ে অফসাইডে শটগুলো ঠেলে দেয়। এই গতিটা মিডউইকেটে শট মারার ক্ষেত্রে কাজে লাগায়। এই গ্যাপগুলো নজর করাটা ওর সহজাত দক্ষতা। এগুলো কাজে লাগিয়েই ও বিপক্ষ অধিনায়ক ও বোলারদের উপরে চাপ তৈরি করে। আজ নিশ্চিত ভাবে ও আলাদা পর্যায়ের মনসংযোগ নিয়ে নেমেছিল।’’
প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ বলেছেন পুরনো বলকে কাজে লাগিয়েছেন কোহালি। ‘‘রাবাডা পুরনো বলটা ঠিকঠাক সামলাতে পারছিল না। তাতেই হতাশ হয়ে পড়ছিল। অন্য দিকে বিরাট পুরনো বলকে ওর সুবিধেমতো কাজে লাগিয়ে বড় রানের ইনিংস গড়ল। দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও ওদের পরিকল্পনা মতো এগোতে পারেনি।’’
ত্রিশতরানের হাতছানি থাকলেও কোহালি তা না ভেবে যে ভাবে দলের স্বার্থে ইনিংস ছেড়ে দিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন প্রাক্তন ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠান। তিনি বলেন, ‘‘ট্রিপল সেঞ্চুরির কথা না ভেবে বিরাট যে ভাবে দলের স্বার্থের দিকটা দেখেছে তার প্রশংসা করতেই হবে। নিজের আগে দলের কথা ভেবেছে ও। আর দক্ষিণ আফ্রিকার এ ভাবে তিন উইকেট পড়াতেই পরিষ্কার, বিরাট ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy