হুঙ্কার: অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানিকে হারানোর পরে ব্রাজিলের ফুটবলারদের উল্লাস। প্রথমে পিছিয়ে পড়েও দুরন্ত ভাবে ম্যাচ জিতে নেয় ব্রাজিল। ছবি: গেটি ইমেজেস
তিন বছর পরে তার গোলেই জার্মানিকে হারিয়ে প্রতিশোধ ব্রাজিলের। চোদ্দো বছর পরে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার নেপথ্যেও ব্রাজিলের সাত নম্বর জার্সির মালিক। অথচ পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলপো (পাওলিনহো) যে কোনও দিন ফুটবলার হতে পারে, সেটা কেউ ভাবতেও পারেনি!
কেন? পাওলিনহোর বয়স তখন মাত্র দশ বছর। কিন্তু শরীরের ওজন ছিল ৭৫ কেজি! ভাস্কো দ্য গামা ক্লাবের অ্যাকাডেমির কোচেরা চমকে গিয়েছিলেন পাওলিনহো-কে দেখে। ব্রাজিলীয় তারকার বাবাকে বলে দেন, এই ছেলের পক্ষে ফুটবলার হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পাওলিনহো নারাজ। কাঁদতে কাঁদতে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে বলেছিল, আমাকে একটু সময় দিন। যদি রোগা হতে না পারি, ক্লাব ছেড়ে চলে যাব। ছোট্টো পাওলিনহোর কান্না দেখে নরম হয়েছিলেন ভাস্কো দ্য গামা ক্লাবের অ্যাকাডেমির কোচেরা।
নতুন লড়াই শুরু হল পাওলিনহো। সঙ্গী ভাই রোমারিও।
দশ বছর বয়সেই ছেলের জন্য ব্যক্তিগত ফিটনেস ট্রেনার রেখেছিলেন পাওলিনহোর বাবা। নিয়োগ করেছিলেন পুষ্টিবিদও। পাওলিনহোর সবচেয়ে প্রিয় ছিল আইসক্রিম ও চকোলেট। কিন্তু রোগা হওয়ার হওয়ার সব কিছু ছেড়ে দেয়। পাশাপাশি ফিটনেস ট্রেনারের কাছে চলত বিশেষ অনুশীলন। দু’বছরের মধ্যেই বদলে গেল ছবিটা। অ্যাকাডেমি থেকে সিনিয়র দলে তাকে সই করাল ভাস্কো দ্য গামা ক্লাবের কর্তারা। রবিবার যুবভারতীতে সেই পাওলিনহো-ই জার্মানি-বধের নায়ক!
পাওলিনহো-র জন্য যুবভারতী হয়ে উঠেছিল মারাকানা।
হেমন্তের সন্ধ্যায় যুবভারতীতে যেন নেমেছিল অকাল বসন্ত!
রবিবার বিকেল থেকেই স্টেডিয়ামের রংটা বদলে গিয়েছিল। রাস্তা থেকে গ্যালারি— সর্বত্র হলুদ। কারও শরীরের ব্রাজিলের জার্সি। কেউ কেউ আবার গলার সঙ্গে বেঁধে পিঠে ঝুলিয়ে রেখেছেন ব্রাজিলের পতাকা। অনেকে ব্রাজিলের জার্সি বা পতাকা না পেয়ে হলুদ টি-শার্ট পরে এসেছেন খেলা দেখতে।
জগদ্দলের দেবাশিস দাসকে দেখা গেল, পাঁচ বছরের ছেলেকে কাঁধে নিয়ে বাইপাস থেকে স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের দিকে হাঁটছিলেন। দু’জনের গায়েই ব্রাজিলের জার্সি। বলছিলেন, ‘‘ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পরেই ছেলের জার্সিটা কিনেছি।’’ আর এক জন পিনাকি মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘তিন বছর আগে জার্মানির বিরুদ্ধে ১-৭ গোলে হারের যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারিনি। এ বার মাঠে বসে জার্মানি-বধ দেখতে চাই।’’
বছর দশেক ধরেই স্টেডিয়ামের বিভিন্ন গেটের বাইরে পতাকা বিক্রি করেন ওঁরা। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রথম দিন থেকেই পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। বিক্রি ঠিক মতো না হওয়ায় প্রত্যেক দিনই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ দিন সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। ম্যাচ শুরু হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক আগেই ব্রাজিলের পতাকা, জার্সি, মাথায় বাঁধার ফেট্টি— সব শেষ। পড়ে আছে খান দশেক জার্মানির জার্সি। কিন্তু ক্রেতা নেই।
যুগলবন্দি: দুই গোলদাতা পাওলিনহো ও ওয়েভারসন। নিজস্ব চিত্র
স্টেডিয়ামের ভিতরেও একই ছবি। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ব্রাজিলের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই গ্যালারিতে আবেগের বিষ্ফোরণ। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ডার্বিতেই যা হয়ে এসেছে বরাবর। পার্থক্য একটাই, এ দিন যাবতীয় উল্লাস শুধুমাত্র পাওলিনহো, অ্যালান সৌজা, লিঙ্কন ডস স্যান্টোসদের নিয়েই ছিল।
কিন্তু ম্যাচের ১৯ মিনিটে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে জার্মানির জন ইবোয়া-কে ফাউল করল ব্রাজিলের লুকাস হল্টার। পেনাল্টি থেকে গোল করে সেই ইয়ান ফিটো আর্প-ই এগিয়ে দেয় জার্মানিকে। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসব বদলে গেল হতাশায়।
আরও পড়ুন: প্রতিশোধ নিয়ে কলকাতা ছাড়লেন গুস্তাভোরা
হলুদ যুবভারতীতে জার্মানিরও যে সমর্থক রয়েছেন, বোঝা গেল আর্পের গোলের পরেই।
ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের পর বাংলা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ব্রাজিল ও আর্জেন্তিনাকে নিয়েই। এ দিন জার্মানি গোল করার সঙ্গে সঙ্গেই স্টেডিয়ামের চার নম্বর গ্যালারির কয়েক জন উল্লাসে লাফিয়ে উঠলেন। পকেট থেকে লুকিয়ে রাখা আর্জেন্তিনার পতাকা বার করে মাথার উপর তুলে শূন্যে ঘোরাতে শুরু করলেন। আর্জেন্তিনার সমর্থক মানেই যে ব্রাজিলের শত্রু! কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকা জনা পঞ্চাশেক জার্মানির নাগরিকও এসেছিলেন ম্যাচ দেখতে। এ ছাড়াও জার্মান দূতাবাসেরও কয়েক জন এসেছিলেন। ব্রাজিল সমর্থকদের দাপটে শুরুর দিকে চুপ করে বসেছিলেন। আর্প গোল করতেই উল্লাস শুরু করে দিলেন।
৭১ মিনিটে ফের বদলে গেল যুবভারতীর আবহ। পরিবর্ত হিসেবে নেমে ওয়েভারসন গোল করে সমতা ফেরাতেই শুরু হয়ে গেল উৎসব। ছয় মিনিট পরেই ফের গোল। এ বার পাওলিনহো। গোল করেই গ্যালারির দর্শকদের দিকে দৌড়লেন ব্রাজিলের নতুন তারকা। তার পর ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মাঠের মধ্যে লিঙ্কনের সঙ্গে সাম্বার যুগলবন্দি। ম্যাচের পর জার্মানি বধের নায়ক অবশ্য স্বীকার করলেন, শুরুতে স্নায়ুচাপে ভুগছিল। পাওলিনহো বলল, ‘‘শুরুতে একটু স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম। কিন্তু প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পরে ড্রেসিংরুমে ঠিক করলাম, আমাদের নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে হবে। তার পরেই আমরা ম্যাচে ফিরে এলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy