পলিনহোর গোলের পর ব্রাজিল শিবিরে ফিরে এল উল্লাস। ছবি সৌজন্যে ফিফা।
ব্রাজিল ২ (ওয়েভার্স, পলিনহো)
জার্মানি ১ (আর্প)
ম্যাচ শেষে যুবভারতীতে সাম্বার ছন্দ। গ্যালারিতে নতুন করে দীপাবলির রোশনাই। কে বলবে এখানে নেই কোনও ভারত। এটা শুধুই ব্রাজিল-জার্মানি। ব্রাজিলের প্রথম গোলের পর যেভাবে গ্যালারির কাছে চলে গেল পুরো ব্রাজিল দল তাতে মনে হচ্ছিল না ওরা ব্রাজিলের মাঠে নয় কলকাতার মাঠে খেলছে। আর ম্যাচ শেষে মাঠ থেকে শুরু হয়ে সাম্বা শেষ হল গ্যালারির সামনে। যাতে পা মেলালেন সমর্থকরা। এই উচ্ছ্বাসের মধ্যে হারিয়ে গেল জার্মানির শুরুর স্বপ্ন। এগিয়ে গিয়েও হারতে হল ১-২ গোলে। বিসেক ভেঙে পড়ল কান্নায়। অধিনায়ক আর্প সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরও একা বসে থাকল মাঠে। ৬৬ হাজার ৬১৩র গ্যালারি দেখল বিশ্ব ফুটবলের অনন্য শিল্প। সে ডানদিক থেকে টানা জন ইবোয়ার দুরন্ত দৌঁড়ই হোক বা অ্যালেনের গোলের মুখ খোলা। যদিও আজকের ম্যাচে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকল পলিনহোর ২৫ গজ দুর থেকে করা সেই অনবদ্য গোল। যেন ফিরে এসেছে ব্রাজিলের রোনাল্ডো যুগ।
শুরু করেছিল ব্রাজিলই। কিন্তু যখন প্রথমার্ধ শেষ হল তখন সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে জার্মানি। একটা পেনাল্টি থেকে গোলই যেন জার্মানদের পৌঁছে দিয়েছিল আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। আর সেখানেই হেরে বসল ব্রাজিল। সেই ব্রাজিল যারা ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে সাত গোল হজম করেছিল। ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচ নিশ্চিত হওয়ার আগে থেকেই যেন সেই ম্যাচ চেপে বসেছিল দুই দলের মাথায়। প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার হতে হচ্ছিল দু’পক্ষকেই। ব্রাজিলের কাছে প্রশ্ন, এটা কি বদলার ম্যাচ? উল্টোদিকে তখন জার্মানিকে জবাব দিতে হচ্ছিল সাতগোলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে কি না। এই অবস্থায় রবিবারের সন্ধেয় যুবভারতী ভরিয়েছিল কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। যেখানে প্রথমার্ধের শেষে হতাশ হতে হল স্টেডিয়াম জুড়ে রাজত্ব করতে থাকা ব্রাজিল সমর্থকদের। সেখানেই তাদের আবার দুরন্ত গোলে ম্যাচে ফেরাল ওয়েভারসন।
আরও পড়ুন
গ্যালারি থেকে জলের পাউচ ছুড়ে ধৃত ৮
রেফারিই হারিয়ে দিল, বললেন জার্মান কোচ
৫-৪-১ ছকে প্রথম থেকেই শুরু করেছিলেন জার্মান কোচ ক্রিস্টিয়ান উইক। জার্মানের পাঁচ ডিফেন্সে প্রথম দিকে একাধিকবার ঝড় তুলল পলিনহো, লিনকনরা। প্রথম ২০ মিনিট জার্মান রক্ষণকে রীতিমতো বেগ দিল ব্রাজিল। ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটেই অ্যালানের শট পোস্টে লেগে না ফিরলে তখনই এগিয়ে যেতে পারত ব্রাজিল। ১৭ মিনিটে জার্মানির পাল্টা আক্রমণ। কিন্তু দারুণ ক্লিয়ার ওয়েসলির। এর পরই খেলা ঘুরে যায় জার্মানি দিকে। ইবোয়াকে ফেলে দিয়ে জার্মানিকে পেনাল্টি পাইয়ে দিয়েছিল লুকাস। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি অধিনায়ক জান-ফিয়েত আর্প। ২০ মিনিটে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসে জার্মানরা। ব্রাজিলকে সেই সময় বেশ ছন্নছাড়া দেখায়। বিশেষ করে বার বার ব্রাজিল রক্ষণের দুর্বলতা বেরিয়ে আসে। যেখান দিয়ে বার বার ঢুকে পড়ছিল জার্মানি। ২৪ মিনিটে ইলিয়াস আবুচাবাকার নিশ্চিত গোল কোনও রকমে বাঁচিয়ে দেন ব্রাজিল গোলকিপার। কর্নার পায় জার্মানি। কর্নার থেকেও গোলের রাস্তা খুলে যেতে পারত যদি না গ্যাব্রিয়েল গোলের নিচে থাকত।
জার্মানির এই উচ্ছ্বাস শেষ পর্যন্ত বজায় রইল না। ছবি সৌজন্যে ফিফা।
পর পর সুযোগ পেলেও গোলের ব্যবধান বাড়িয়ে প্রথমার্ধ শেষ করতে পারেনি জার্মানি। যার ফল দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ম্যাচের রাশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় ব্রাজিল। ড্রেসিংরুমের ভোকাল টনিকেই হয়তো বাজিমাত ব্রাজিল শিবিরের। দ্বিতীয়ার্ধের যুবভারতী দেখল অন্য এক ব্রাজিলকে। যেখানে হারিয়ে গেল জার্মানি। ৬০ মিনিটে লিনকনের নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্টের পর ব্রাজিলকে দুরন্ত গোলে সমতায় ফেরাল দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসেবে নামা লেফটব্যাক ওয়েভার্স। অ্যালানের পাস থেকে ওয়েভার্সের শট ক্রসবারে লেগে যখন জার্মান গোলে ঢুকে গেল তখন গোলকিপার লুকার কিছুই করার ছিল না। তার আগেই সহজ সুয়োগ নষ্ট করেছেন পলিনহো। যিনি কলকাতার দর্শকদের ভাল ফুটবল ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ৬৫ মিনিটে লিনকনের বক্সের মধ্যে গোল লাইন ধরে চলে যাওয়া পাসের কাছে পৌঁছতে পারল না পলিনহো। কিন্তু এই না পারাটা দারুণভাবে মিটিয়ে দিল ৭৬ মিনিটে। প্রায় ২৫ গজ দুর থেকে চলন্ত বলে যে শটটি নিল পলিনহোসেই বলের লক্ষ্যে জার্মান গোলকিপার ঝাপালেও তার নাগাল পাওয়া যে দুষ্কর ছিল সেটা লুকা নিজেও খুব ভাল করেই জানত। এখানেই শেষ হয়ে গেল ব্রাজিল-জার্মানি কোয়ার্টার পাইনাল ম্যাচ। ফ্রিকিকে সময় গোল ছেড়ে উঠে এসেও দলকে বাঁচাতে পারল না জার্মান গোলকিপার। শেষ বেলায় পর পর তিনটি কর্নার পেল জার্মানি কিন্তু কোনওটাই কাজে লাগল না। চার মিনিটের অতিরিক্ত সময় গড়াল আট মিনিটে। কেন বোঝা গেল না। ৯৮ মিনিটের ম্যাচ শেষে জয় ব্রাজিল। সেমিফাইনালে গুয়াহাটিতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে পলিনহোরা।
ব্রাজিল: গ্যাব্রিয়েল, ওয়েসলি, ভিতাও, লুকাস, ভিক্টর, পলিনহো, মার্কোস, লিনকন, অ্যালান, লুয়ান (ওয়েভারসন), ব্রেনার।
জার্মানি: লুকা, অ্যালেক্সান্ডার, ডমিনিক, শাভেরদি (বোলার), আর্প, এলিয়াস, নিকোলাস, জোশা, লার্স, জন, ইয়ান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy