দর্শনীয়: রাশিয়ার সোচিতে এই হোটেলে বিশ্বকাপের সময় থাকার কথা ব্রাজিল ফুটবল দলের। ভক্ত এবং সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে রাখার ভাবনা তাঁদের।
তাঁর কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের জন্য স্তালিনের তৈরি বিলাসবহুল একটি হোটেল। জন কোলাহল থেকে দূরে সমুদ্র সৈকতের ধারে যা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সেরা আস্তানা।
সেখানেই রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য ঘাঁটি ফেলতে চলেছে ব্রাজিল ফুটবল দল। যে দলে নেমার থাকবেন কি না, তা নিয়ে জোরাল তর্ক শুরু হয়েছে। তাঁর ক্লাব প্যারিস সঁ জরমাঁ-র হয়ে ফরাসি লিগে খেলার সময় পায়ের পাতার হাড় ভেঙে যায় নেমারের। অস্ত্রোপচার করিয়ে তিনি রিহ্যাবে গিয়েছেন। ব্রাজিল এবং সারা বিশ্বের নেমার-ভক্তদের প্রার্থনা, তাঁদের প্রিয় নায়ক যেন সুস্থ হয়ে বিশ্বকাপে নামতে পারেন।
নেমার-কে নিয়ে সংশয়ের মধ্যেই অবশ্য ব্রাজিলের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তারকা সমৃদ্ধ দলকে যাতে কেউ বিরক্ত করতে না পারে, সেই কারণে রাশিয়ায় একান্ত নিভৃতে অবস্থিত পাঁচ তারা হোটেলে থাকার কথা ভাবা হয়েছে। সোচি ক্যামেলিয়া নামে এই হোটেলের সুইমিং পুলে বসেই সমুদ্র সৈকতের শোভা নেওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে। সমুদ্রের ধারে এমন জায়গায় অবস্থিত এই হোটেল যে, ফুটবলভক্ত বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের পক্ষে ব্রাজিল দলের কাছে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও বা কেউ তাড়া করার চেষ্টা করে, হোটেলের সামনে পৌঁছে থেমে যেতে হবে। গেটের সামনেই মোতায়েন থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা দল। যাঁরা চিরুনি তল্লাশি না চালিয়ে কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেবে না। সেই সময়ে হোটেলের ভিতরে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের জন্য বিশেষ পরিচিতিপত্রও তৈরি করা হচ্ছে। যাতে বাইরের কেউ ফাঁকফোকর গলেও ঢুকে পড়তে না পারে। নেমার-দের উপস্থিতিকে রঙিন করে তুলতে বিশেষ ভাবে সাজানো হচ্ছে হোটেলকে। ঘর থেকেই দেখা যাবে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। হোটেলের লবিতে সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে। হোটেলের ম্যানেজার গ্রেগরি গ্রেগরিয়েভ জানিয়েছেন, পাঁচ বারের বিশ্বকাপ জয়ী দেশের ফুটবলারদের আতিথেয়তায় কোনও ত্রুটি থাকতে দেবেন না। তিনি বলেছেন, ‘‘এখানে যত দিন থাকবে ব্রাজিল দল, আমাদের দায়িত্ব তাদের খুশি রাখার। এটুকু কথা দিতে পারি যে, ওদের কোনও অভাব আমরা রাখব না। আমরা চেষ্টা করব এতটাই সুখে রাখতে যাতে ওরা বিশ্বকাপ জিতে ফিরতে পারেন।’’
রাশিয়ার সব চেয়ে দুর্লভ রিসর্টগুলোর চারপাশে বরফে ঘেরা পাহাড় ছিল এতকাল সেরা আকর্ষণ। সেটা দেখেই সোচিতে শীতকালীন গেমসের আয়োজন করা হয়েছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সব চেয়ে পছন্দের ছুটি কাটানোর গন্তব্যস্থল এই রিসর্টগুলো। অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এলেও এখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
অপেক্ষা: বিশ্বকাপের জন্য নেমার ফিট হতে পারবেন? ফাইল চিত্র
নেমারদের যেখানে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে, সেই হোটেলটিও সোচিতে। যে হেতু এখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা বা সর্বোচ্চ পদাধিকারীরা আসেন, তার মানে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার দিক থেকে এই জায়গাটিকে নিশ্ছিদ্র করে তোলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সোচির শীর্ষ কর্তাদের। সেই কারণেই ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন আস্থা রেখেছে বলে শোনা যাচ্ছে। ব্রাজিলের ফুটবল কর্তারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, সোচির এই হোটেলে থাকলে নেমার, মার্সেলো, ফিলিপে কুটিনহো-দের বিরক্ত করতে পারবে না কেউ। ম্যানেজারের বক্তব্য এই মতকে সমর্থনই করছে। ‘‘আমাদের হোটেলের আশেপাশে কোনও রাস্তাই নেই। লোকে এখানে আসবে কী করে? বিশ্বকাপের সময় নিরাপত্তার বহর আরও অনেক বা়ড়িয়ে দেওয়া হবে। সরকারের স্তর থেকেও এই হোটেলের নিরাপত্তার দিকটি দেখা হয় বলে মাছি গলার সম্ভাবনাও কম,’’ বলে দিচ্ছেন ম্যানেজার গ্রেগরি।
বিশ্ব ফুটবলে অবশ্য মিডিয়া শুধু তাড়া করেই ক্ষান্ত হয় না। বিরাট কোহালি বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-দের কখনও যে সব আক্রমণের মুখে কখনও পড়তে হয়নি, তারই মোকাবিলা করতে হয় নেমার, মেসি-দের। ভিতরে ঢুকতে না পারলেও ড্রোন ঝুলিয়ে উপর থেকে যে কোনও তারকার অন্তরঙ্গ ছবি তুলে আনতে পারে আলোকচিত্রীরা। তার মোকাবিলা কী ভাবে করবেন? গ্রেগরির চটজলদি জবাব, ‘‘আমরা নিশ্চয়ই গুলি করে ড্রোন নামিয়ে আনব না। কিন্তু সরকারের নিরাপত্তা এজেন্সি রয়েছে। তারা সক্রিয় থাকবে। আমরা তাদের জানালেই হবে। ওরা জানে কী করে এ সবের মোকাবিলা করতে হয়।’’ রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৬ জুন রস্তভ-অন-ডনে। সোচি থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে যেতে হবে তাদের। পরের ম্যাচ কোস্তা রিকার বিরুদ্ধে সেন্ট পিটার্সবার্গে। যা ২০০০ কিলোমিটার দূরে। পাঁচ দিন পরে তৃতীয় ম্যাচ মস্কো থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার দূরে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে।
ব্রাজিল দলের কাছে হোটেলের সবিস্তার বর্ণনা এবং ছবি পৌঁছে গিয়েছে। সে সব দেখেই কোচ টিটে তাঁর পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তিনি বলে দিয়েছেন, ফুটবলারদের সেরা আমেজে তিনি রাখতে চান। তার জন্য ছুটির দিনগুলোতে ফুরফুরে থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতটা সম্ভব তাই মনোরম জায়গাকে বেছে নেওয়া হয়েছে থাকার জন্য। যাতায়াতের অসুবিধেও নেই। ফুটবলারদের খুব বেশি ধকল নিতে হবে না। হোটেল থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথে প্র্যাক্টিসের মাঠ। সোচির অত্যাধুনিক রাস্তা ধরে বিমানবন্দরে পৌঁছতে লাগে ৩০ মিনিট। তার পরে থাকছে সোচির সমুদ্র সৈকতও। গ্রেগরি বলে দিচ্ছেন, ‘‘সোচির আবহাওয়া ব্রাজিলের জন্য খুব মানানসই হবে।’’
হোটেলে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হবে ব্রাজিলীয় খাদ্য এবং নেমার-দের দলের শ্যেফ নিজে সমস্ত রান্নাবান্না তদারকি করবেন। ব্রাজিলীয় ফুটবলাররা কী ধরনের ফল খেতে ভালবাসেন, সে সবের তালিকাও চেয়ে পাঠিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy