ব্রাজিল কোচ কার্লোস ব্যাখ্যা করলেন বিপর্যয়ের কারণ।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের অষ্টমীতেই বিসর্জনের আবহ!
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-৩ গোলে হারের ধাক্কায় শুধু ব্রাজিল শিবির নয় শোকস্তব্ধ বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীরাও। বুধবার সন্ধ্যায় যুবভারতীতে ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে যখন এলেন ব্রাজিল কোচ কার্লোস আমাদেউ, রীতিমতো বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে। তার মধ্যেই ব্যাখ্যা করলেন বিপর্যয়ের কারণ।
ব্রাজিলের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে হারের জন্য রেফারিকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন জার্মানির কোচ ক্রিস্টিয়ান উক। দুর্দান্ত খেলা সত্ত্বেও ব্রাজিলের ফুটবলারদের কোনও প্রশংসা শোনা যায়নি তাঁর মুখে। আমাদেউ কিন্তু এ দিন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন ইংল্যান্ডের। বললেন, ‘‘যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে ইংল্যান্ড। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে ওরা। তবে প্রথমার্ধে আমরাও অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলাম। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারিনি।’’
ব্রাজিল কোচ মানতে নারাজ বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের প্রত্যাশা ফুটবলারদের চাপে ফেলে দিয়েছিল। বললেন, ‘‘প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সমর্থন আমাদের সঙ্গে ছিল। আমি এটাকে কখনওই বাড়তি চাপ মনে করি না। বরং এটা ফুটবলারদের ভাল খেলতে উজ্জীবিত করেছে।’’
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে পাঁচ গোল খেলেও ডিফেন্ডারদের যে তিনি দায়ী করতে চান না, খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন। কার্লোস বললেন, ‘‘আমাদের ডিফেন্ডাররা ইংল্যান্ডের অসংখ্য আক্রমণ আটকেছে। দুর্দান্ত খেলেছে গোলকিপার গ্যাব্রিয়েল ব্রাজাও। পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারবেন হারের জন্য রক্ষণকে দায়ী করা যায় না।’’
জার্মানির বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে পিছিয়ে গিয়েও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। সেই ম্যাচে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পরে ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের কার্লোস বলেছিলেন, তোমরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলো। তার পরেই সাম্বার ধাক্কায় হারিয়ে গিয়েছিল জার্মানি। বুধবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ওয়েসলির গোলে ম্যাচে ফিরে এসেছিল ব্রাজিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। তা হলে কি পরিকল্পনায় কোনও ত্রুটি ছিল?
আরও পড়ুন: ব্রিউস্টারের উদয়, ম্লান পাওলিনহো
কার্লোসের দাবি, ‘‘পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি আমরা। দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ তৈরি করেছে ফুটবলাররা। মাঝমাঠেও দারুণ খেলেছে ছেলেরা। পাওলিনহো, লিঙ্কনরা একাধিক সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করল। আমরা শুধু গোল করতে পারিনি। ইংল্যান্ড গোল করতে পেরেছে বলেই জিতেছে।’’
ব্রাজিল উচ্ছ্বসিত ইংল্যান্ড ফুটবলের নতুন প্রজন্মকে নিয়েও। বললেন, ‘‘ব্রিউস্টার দুর্দান্ত। ইংল্যান্ডের বাকি ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’’
দু’বছর আগে চিলিতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগ থেকে ইংল্যান্ড ছিটকে গিয়েছিল ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হেরে। এ দিন যুবভারতীতে তার প্রতিশোধ নিল ব্রিউস্টাররা। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণার মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল ব্রাজিল শিবিরে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ড্রেসিংরুমেই বিধ্বস্ত পাওলিনহো, লিঙ্কনদের উজ্জীবিত করেছেন কার্লোস। পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, ‘‘ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হার অবশ্যই যন্ত্রণার। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমাদের এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে।’’
আগামী শনিবার যুবভারতীতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল। কিন্তু ব্রাজিলকে খেলতে হবে মালির বিরুদ্ধে তৃতীয় ও চতুর্থস্থান নির্ণয়ের ম্যাচে। পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পক্ষে এটা কতটা যন্ত্রণার? কার্লোসের কথায়, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলাম। কিন্তু তা অধরাই থেকে গেল। তা বলে বাস্তবকে উপেক্ষা করা যাবে না। আমাদের এখনও একটা ম্যাচ বাকি রয়েছে। সকলকে মনে রাখতে হবে, আমরা এখানে ব্রাজিলের প্রতিনিধিত্ব করছি। তাই মাঠে নেমে সেরাটাই দিতে হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করা কি কঠিন নয়? ব্রাজিল কোচ বললেন, ‘‘ফুটবলারদের বলেছি, জীবন কখনও থেমে থাকে না। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে হয়।’’
বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীরাও ব্রাজিলের ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায়। ইংল্যান্ড বনাম স্পেন নয়। তাঁদের কাছে শনিবার যুবভারতীতে ব্রাজিল বনাম মালি দ্বৈরথই যে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy