প্রতীকী ছবি।
বাংলা থেকে জাতীয় বক্সিং শিবিরে একমাত্র প্রতিনিধি তিনি। হাওড়া শিবপুরের সেই মনজিৎ কুমার সাউ (৫২ কেজি) শিবিরে ভারতের অন্যতম সেরা বক্সার অমিত পঙ্ঘালের মহড়ার সঙ্গীও। কিন্তু করোনার প্রকোপে তাঁর খেলোয়াড় জীবনেই যেন আছড়ে পড়েছে বিরাশি সিক্কার ঘুসি।
মনজিতের শিবপুরের বাড়িতে চার জনের সংসারে একমাত্র রোজগেরে সদস্য জুটমিলে কর্মরত দাদা। করোনা সংক্রমণের জন্য শিবির বন্ধ থাকায় গত সাড়ে তিন মাস ধরে বাড়িতেই রয়েছেন মনজিৎ। বক্সিংয়ে করোনার প্রভাব সম্পর্কে ২১ বছরের যুবকের আফশোস, ‘‘এ বার জাতীয় গেমস হবে না। পাটিয়ালায় জাতীয় শিবির বন্ধ। কোনও প্রস্তুতি লড়াই নেই। ২০২২ এশিয়ান গেমসের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। সব পরিশ্রম জলে গেল।’’ যোগ করেন, ‘‘পার্কে গিয়ে ফিজিক্যাল ট্রেনিং আর শ্যাডো প্র্যাকটিস করছি। জাতীয় সংস্থা বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস করাচ্ছিল। কিন্তু সবগুলোতে যোগ দিতে পারিনি। আমার মোবাইল ফোনটা অত আধুনিক নয়। সমস্যা হয়।’’
জাতীয় সাব-জুনিয়র পর্যায়ে রুপো ও ব্রোঞ্জজয়ী হাওড়ার বক্সার সূরজ রাউথের আবার প্রতিক্রিয়া, ‘‘খেলাটাই না ছেড়ে দিতে হয়। দু’বেলা ছুটে আর স্কিপিং করে ফিটনেস বজায় রাখছি। এ ভাবে আর কত দিন চলবে কে জানে!’’
কোচবিহারের মোনালিসা দাসের বক্সিংয়ের হাতেখড়ি মেরি কমের বায়োপিক দেখে। দু’বছর আগে জাতীয় সাব-জুনিয়র প্রতিযোগিতায় ৬৩ কেজি বিভাগে সোনাজয়ী এই বক্সার অবশ্য জাতীয় সংস্থার অনলাইন ক্লাস করেছে। কিন্তু স্পারিং (প্রস্তুতি লড়াই) হচ্ছে না বলে চিন্তা হচ্ছে তারও।
জাতীয় সাব-জুনিয়র পর্যায়ে বাংলার হয়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন আসানসোলের পূরবী কর্মকার। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘স্পারিং ছাড়া বক্সিং হয় নাকি? এক জন সঙ্গী না থাকলে প্রস্তুতিতে খামতি থেকেই যায়। দৌড়, ফিজিক্যাল ট্রেনিং ও পাঞ্চিং ব্যাগে দু’বেলা দু’শোটা করে ঘুসি মেরেই অনুশীলন চলছে। ফের বক্সিংশুরু হলে বিপক্ষের ঘুসি ধেয়ে এলে শুরুতে চোখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’’
বাংলার প্রাক্তন বক্সিং তারকা আলি কামার এই মুহূর্তে ভারতীয় মহিলা দলের কোচ। তিনি অবশ্য পূরবীদের আশ্বস্ত করে বলছেন, ‘‘ফের খেলা শুরু হলে মাস দু’য়েক অনুশীলন করলেই জড়তা কেটে যাবে।’’
মনজিৎ, মোনালিসাদের জন্য রাজ্য সংস্থার উদ্যোগ কী? খোঁজ করতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে অন্ধকার। সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শেষ বার বাংলা সোনা জিতেছিল ১৯৯৭ সালে দূর্গাপুরের রমেশ বাসনেটের হাত ধরে। সে বার ডিঙ্কো সিংহের কাছে ফাইনালে হেরে রুপো পান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরে গত ২৩ বছরে কেউ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে পদক পাননি। নতুন সহস্রাব্দে আলি কামার সোনা জিতলেও তা বাংলার ছিল না। কারণ আলি প্রতিযোগিতায় নামতেন রেলের হয়ে।
কলকাতা, হাওড়া, দুর্গাপুর, আসানসোলের কিছু ক্লাব সক্রিয়। রাজ্য স্তরে হয় না কোনও প্রতিযোগিতা। নেই চাকরি। সূরজদের নিয়ে ভাবার দরদী কর্তারও অভাব। রমেশের কোচ অঞ্জন মিত্র দুর্গাপুর থেকে ফোনে বললেন, ‘‘রাজ্যের কর্তারা গদি বাঁচাতে ব্যস্ত। জেলার বক্সারদের কেউ খোঁজেই না। কলকাতায় ছেলেদের পাঠালে থাকার ব্যবস্থাও করেন না রাজ্য বক্সিং কর্তারা। তাই প্রতিভা কলকাতায় না পাঠিয়ে সেনাবাহিনীর অ্যাকাডেমিতে পাঠাই। তার উপর করোনার হানা এ রাজ্যের বক্সিংকে পাঁচ বছর পিছিয়ে দিয়েছে।’’
সংস্থার প্রেসিডেন্ট এবাং বাংলায় দীর্ঘ দিন ধরে বক্সিংকে সক্রিয় করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও মানছেন, রাজ্যে ভাল বক্সারের আকাল চলছে। বক্সিংয়ে করোনার প্রভাব প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘করোনার ধাক্কায় রাজ্যের বক্সিং টালমাটাল হয়ে গিয়েছে বলা যায়। এখন তো স্ট্রেংথ ও ফিজিক্যাল ট্রেনিং ছাড়া আর কিছু করার নেই। পূর্বাঞ্চলের সব বক্সারদের নিয়ে অনলাইনে ক্লাস করিয়েছি। মানসিক জোর বাড়ানোরও ক্লাস হয়েছে। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।’’ এমনিতেই ধুঁকছিল বাংলার বক্সিং। তায় করোনার আঘাত। ক্ষত সারবে কবে, কেউ জানে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy