Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Surya Shekhar Ganguly

সূর্যোদয়ের গল্পে মাত করতে চায় ‘দাবাড়ু’

পাঁচ বারের বিশ্বসেরা বিশ্বনাথন আনন্দকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে সাহায্য করেছিলেন যে সহকারীরা, সেই দলে তিন বার (২০০৮, ২০১০, ২০১২) ছিলেন। তিনি— সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়।

অপেক্ষা: সূর্যকে শুভেচ্ছা আনন্দের। পাশে ঋতুপর্ণা, যিনি সূর্যের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ও অনত্যম প্রযোজক নন্দিতা রায়।

অপেক্ষা: সূর্যকে শুভেচ্ছা আনন্দের। পাশে ঋতুপর্ণা, যিনি সূর্যের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ও অনত্যম প্রযোজক নন্দিতা রায়। —ফাইল চিত্র।

শমীক সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ০৮:১৬
Share: Save:

ছোটবেলায় এত দুরন্ত ছিলেন, সামলানো যেত না। তাই দুষ্টুমি থামাতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল দাবার বোর্ডের সামনে। তাঁর আগ্রহ দেখে পাঁচ বছর বয়েসে দাদুর কাছে দাবায় হাতেখড়ি। সেই ছেলেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সকলকে দাবার চালে মাত করে। সেই শুরু। একের পর এক স্টেশন পেরিয়েছেন এর পরে জীবনের সফরে।

১৯ বছর বয়সে দেশের সপ্তম গ্র্যান্ডমাস্টার হন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবায় চল্লিশটি সোনা জিতেছেন। অর্জুন পুরস্কার পান ২০০৫ সালে। ছ’বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন (২০০৩-’০৮), এশীয় চ্যাম্পিয়ন হন ২০০৯ সালে। পাঁচ বারের বিশ্বসেরা বিশ্বনাথন আনন্দকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে সাহায্য করেছিলেন যে সহকারীরা, সেই দলে তিন বার (২০০৮, ২০১০, ২০১২) ছিলেন। তিনি— সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়।

ছোটবেলা থেকেই শিরোনামে থাকাটা তাঁর কাছে নতুন নয়। যে প্রতিযোগিতাতেই নেমেছেন মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠতেন কনিষ্ঠতম প্রতিযোগী হিসেবে। বলা হত ‘বিস্ময় বালক’, ‘খুদে প্রতিভা’। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা যখন দিচ্ছেন, হলের বাইরে সংবাদমাধ্যমের ভিড় লেগেই থাকত তাঁর জন্য। কিন্তু এই লড়াইটা সোজা ছিল না। পেরোতে হয়েছে চরম অর্থকষ্টের বাধা। সেই সবকিছু পেরিয়ে বাংলার দাবাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়া সেই সূর্যকে নিয়ে আজ, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা ‘দাবাড়ু’।

ক্রিকেট, ফুটবলের বাইরে কোনও দাবাড়ুর জীবনকে নিয়ে এর আগে এমন কোনও সিনেমা এ দেশে হয়নি। কেমন অনুভূতি? বৃহস্পতিবার সকালে আনন্দবাজারকে সূর্য বললেন, ‘‘আগেই একটা কথা পরিষ্কার করে দিই। এটা কিন্তু আমার বায়োপিক নয়। সিনেমার গল্পটা আমার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। এমন অনেক চরিত্র আছে যা কাল্পনিক। তবে আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি এই সিনেমাটা। কারণ আমাকে নিয়ে মা, দাদুর লড়াইটা দেখানো হয়েছে।’’

সিনেমায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, দীপঙ্কর রায়, চিরঞ্জিৎ, কৌশিক সেন, শঙ্কর চক্রবর্তী, খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসুর মতো অভিনেতা আছেন। সূর্যর চরিত্রে সমদর্শী সরকার ও অর্ঘ্য বসু রায় অভিনয় করেছেন। দাবার মতো একটা বিষয়কে সিনেমায় পরিবেশন করার কথা মনে হল কেন?

পরিচালক পথিকৃৎ বসু বললেন, ‘‘আমাদের সেই সব মানুষদের জীবনই পর্দায় দেখতে ভাল লাগে, যাঁদের জীবনে চড়াই-উতরাই আছে। যাঁদের জীবন দেখলে আমরা আমাদের জীবনের সঙ্গে একটা সম্পর্ক দেখতে পারব। সূর্যর জীবনে এই ওঠা পড়া, এই শূন্য থেকে শুরু করে আকাশ ছোঁয়ার গল্পটা আমাকে খুব আকর্ষণ করেছিল।’’ তবে তিনিও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘‘বায়োপিক ঠিক নয়। এটা অনুপ্রাণিত। এখানে
অনেক ঘটনা যেমন বাস্তব, কিছু ঘটনা কাল্পনিকও বটে। এই বিষয় বেছে নেওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ দুটো। এক দাবা, এমন একটা বিষয় যা সবার কাছে আমি আকর্ষণীয় ভাবে পর্দায় দেখাতে পারব, আর দুই, সূর্যর জীবন— যেটা আমি ছবি তৈরির আগেই নিজে চোখ বন্ধ করলে পর্দায় দেখতে পেতাম।’’

ছবিতে সূর্যর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করছেন ঋতুপর্ণা। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার কাছে এই ছবি দাবাড়ু একটা নতুন বিষয়, নতুন চ্যালেঞ্জ। আমি খেলাধুলোর মানুষ নই, তবু কোথাও যেন খেলাধুলোর সঙ্গে আমার যোগাযোগ অবাধ। দাবাড়ু অনেক দামি সেই গল্পগুলো বলবে যা মৌলিক মূল্যবোধ নিয়ে। যেগুলো আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নপূরণের গল্প। মায়ের নিঃশব্দ আত্মত্যাগের এক অনবদ্য কাহিনি।’’

সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘যে রাজ্যে ১৩জন গ্র্যান্ডমাস্টার রয়েছে সেখানে দাবাই উপেক্ষিত, এটা মেনে নেওয়া যায় না। যদি এই সিনেমাটা দেখে একটাও পরিবার তাদের বাড়ির ছেলে বা মেয়েকে দাবা খেলতে আগ্রহী করে, একটা প্রতিষ্ঠানও যদি কোনও এক জন দাবাড়ুর পাশে এগিয়ে আসে, সেটাই হবে এই সিনেমার সার্থকতা।’’

সিনেমাটির পোস্টার প্রকাশ অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল অভূতপূর্ব একটা ব্যাপার। ছিলেন বিশ্বনাথন আনন্দ স্বয়ং। তার পাশাপাশি সদ্য ক্যান্ডিডেটস দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ডি গুকেশ, প্রজ্ঞানন্দ, অর্জুন এরিগাইসির মতো দেশের এই মুহূর্তে সেরা দাবাড়ুরাও ছিলেন সূর্যর সঙ্গে। সেই অভিজ্ঞতা কেমন? কী বললেন আনন্দ? সূর্য বলেন, ‘‘আনন্দ জানিয়েছেন,ওটিটিতে যখন সাবটাইটেল দিয়ে আসবে তখন দেখবেন সিনেমাটা।’’

এমন একটা বিষয় নিয়ে সিনেমা নিয়ে সাধারণ মানুষ কতটা আগ্রহ দেখাবেন বলে তাঁর আশা? সূর্য বললেন, ‘‘সিনেমাটা দাবার মাধ্যমে জীবনের কথা পৌঁছে দেবে। স্বপ্নপূরণের জন্য যা খুব জরুরি। যার মাধ্যমে কিছুটাও যদি প্রেরণা দেওয়া যায়, উদ্যোগ সার্থক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Surya Shekhar Ganguly grandmaster chess biopic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy